জন্ম তারিখ: ১৯ জানুয়ারি, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা :শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান :শেরপুর হাসপাতাল।
২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ মোঃ মাহবুবুল আলম শেরপুর জেলার চৈতনখিলা ইউনিয়নের তারাগড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: মিরাজ আলী মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মাহফুজা খাতুন গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শহীদ মাহবুব আলম ছিলেন চতুর্থ। মেধাবী এই শিক্ষার্থী ছিলেন সৈয়দপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। প্রযুক্তি ব্যাপারে অতি আগ্রহী শহীদ মাহবুব ছিলেন আইসিটি ডিভিশনের জেলার হাট পাওয়ার প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর। ঢাকার ইউ ওয়াই ল্যাব থেকে ওয়েব ডিজাইন কোর্স সম্পূর্ণ করে তিনি নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ওয়েব ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট এন্ড ট্রেনিং দিয়ে বেশ টাকা আয় করতেন যা দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতেন এবং পরিবারের পাশে দাঁড়াতেন। এছাড়াও উত্তরই হারপাওয়ার নামক প্রজেক্টে কো অর্ডিনেতার হিসাবে কাজ করতেন,যা নারীদের ক্ষমতা এনে বিশেষ ভূমিকা রাখছিল। জেবি আইচ ব্রেকার নামক একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানটির কো অর্ডিনেটর হিসাবে কাজ করতেন এবং ট্রেনিং দিতেন। কাজের স্বীকৃত স্বরূপ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন সম্মাননা। ইউএসএ আইডির উদ্যোগে আয়োজিত ইয়ুথ কোড চেঞ্জ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ট্রেনিংয়ে অংশ নিয়ে পেয়েছেন স্বীকৃতি। এছাড়া তিনি ২০১৮ সালের ২০ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন। দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তিনি এ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রদের সুসংগঠিত করা সহপাঠীদের একত্রিত করাসহ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে অবদান রাখছিলেন। ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ছাত্র জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষের সময় এক ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি বেপরোয়া চালনার চাপা পড়ে মাহবুবসহ আরো চারজন ছাত্র নিহত হন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট জুলাই মাসে কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলনের নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যার প্রতিবাদে মাসের শুরু থেকে সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলছিল। ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে শেরপুর শহরেও এ আন্দোলন চলছিল। মাহবুব আলম এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সকাল দশটায় বাসা থেকে বের হয়ে তার আইটি ল্যাবে যান এবং বিকাল তিনটার দিকে তার ছাত্র বন্ধুদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দেন। সেখানে তিনি ও তার সহপাঠীরা ছাত্রদের জন্য পানি এবং পুলিশদের জন্য চকলেট বিতরণ করেন। এরপর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে খরমপুর গুদাম ঘরের সামনে ছাত্রলীগ গুলি বর্ষণ করতে শুরু করে। গুলিবর্ষণে এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা প্রাণ ভয়ে পিছুহটার চেষ্টা করে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলের মধ্যে দ্রুতগতির সদর উপজেলার ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ঢুকে পড়ে এবং কয়েকজন ছাত্রকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মাহবুব আলম এবং আরেকজন ছিলেন শ্রীবরদী উপজেলার খরিয়াকাজিরচর ইউনিয়ন এর পূর্ব রুপার পাড়া গ্রামের মো: আজহার আলীর ছেলে সবুজ মিয়া (১৯)। মাহবুব আলমকে শেরপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকাল ৪:৩০ মিনিটে তিনি মারা যান। কিছুক্ষণ পর গাড়িচাপায় আহত দ্বিতীয় ব্যক্তিও মারা যান। শাহাদাতের পর আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি শহীদ মাহবুব ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার উপার্জনের মাধ্যমে তিনি পরিবারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিতেন। ছোট ভাইদের পড়াশোনার খরচ মেটানো এবং সংসার চালানোর দায়িত্ব তার ওপর ছিল। মায়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিল খুবই আন্তরিক। মাহবুবের মা তার মৃত্যুর পর বলেছিলেন, "আমার ছেলে তো কোন অপরাধ করেনি, কেন তাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে হলো?"এই ঘটনার পর পরিবার অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। শহীদের চাচা আকতার আলী বলেন,"মাহবুব খুব ভালো ছেলে ছিল পড়াশোনা করত। কলেজে গিয়ে ও শহীদ হয়েছে। ও সংসার দেখাশোনা করত। শহীদ মাহবুবের বাবা মানসিক রোগী। আমি শহীদ মাহবুবের খুনের বিচার চাই। ম্যাজিস্ট্রেট গাড়ি চাপা দিয়েছে এটা সবাই দেখেছে। আমরা ওর খুনির সঠিক বিচার চাই।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ মাহবুবের পরিবারে মা-বাবা, দুই বোন এবং একটি ছোট ভাই আছে। বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মা গৃহিণী। শহীদ মাহবুবের বড় ভাই জনাব মাজহারুল ইসলাম ফলের ব্যবসা করেন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে এবং ছোট বোন সাবিহা এসএসসি পরীক্ষার্থী। বড় ভাই ফলের ব্যবসা করেন এবং অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বাবা অসুস্থ হওয়ায় দুই ভাই পরিবারের হাল ধরেছিলেন। শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন সহায়তা করা যেতে পারে। ২. শহীদের মায়ের জন্য মাসিক আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা। ৩. শহীদের ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সাহায্য করা। ৪. ঘর নির্মাণে সাহায্য করা। শহীদের প্রোফাইল নাম : মো: মাহবুব আলম পিতা : মো: মিরাজ আলি মাতা : মাহফুজা খাতুন জন্ম তারিখ : ১৯ জানুয়ারি, ২০০৫ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: তারাগড়, ইউনিয়ন: চৈতনখিলা , থানা: শেরপুর সদর, জেলা: শেরপুর আহত হওয়ার স্থান : খড়মপুর গুদামঘর, আইডিয়াল স্কুলের সামনে আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৩:৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট, বিকাল: ৪:৩০টা যাদের আঘাতে শহীদ : উপজেলা ম্যাজিস্ট্র্যাটের গাড়ি ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদের উপর তুলে দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে শহীদের কবরস্থান : নিজগ্রাম, তারাগড়