Image of মো: সুমন হাসান

নাম: মো: সুমন হাসান

জন্ম তারিখ: ১২ মার্চ, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :গার্মেন্টস শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান :সাভার, থানা রোড, ঢাকা।

শহীদের জীবনী

১২ মার্চ ২০০৩ সালে জামালপুর জেলার সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের চরপাড়া মন্ডল বাড়ি নিবাসী মো: বিল্লাল হোসেন ও মোসা: স্বপ্না বেগম স্বারা দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় ২৪ এর মুক্তিযোদ্ধা মো: সুমন হাসান। শহীদ পিতা পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন। মমতাময়ী মা খোদার রাহে পাড়ি জমিয়েছেন। পারিবারিক ভাবে আর্থিক দীনতায় বাবা-মায়ের পরম ভালোবাসায় নিজ গ্রামে গুরুজনদের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠেন তিনি। বাল্যকাল থেকে লেখাপড়ায় আগ্রহ থাকলেও আর্থিক সংকুলান না থাকায় বিদ্যাপীঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। পরবর্তীতে এই মুক্তিকামী জাতীয় বীর নিজেকে নানা কাজে যুক্ত করে পরিবারের হাল ধরেছিলেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর রাজধানী সাভারের একটি গার্মেন্টসে স্বল্প বেতনে যোগদান করেছিলেন তিনি। স্বপ্ন দেখতেন একদিন তাঁর বাবাকে নিজ অর্থায়নে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করবেন। শহীদ পিতা শারীরিক ভাবে ভীষণ অসুস্থ। চলাফেরা করতে অপারগ। শরীরে ব্লাস্ট ইনজুরি রয়েছে। শহীদের স্বপ্ন তাঁর পরিবারে দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরে দিয়েছে। বিয়োগান্ত অধ্যায়ের যেন শেষ নেই জনাব বিল্লাল হোসেনের। জুলাই-আগস্টের মর্মান্তিক প্রেক্ষাপট ১৪ জুলাই : শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে রাত নয়টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হলে শ্লোগান ওঠে, তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! ১৬ জুলাই : পুলিশের গুলিতে রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুক ও ঢাকায় সবুজ আলী ও শাহজাহান শাহদাতবরণ করেন। সাদ্দাম আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলে, আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল। ১৭ জুলাই : ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে 'রাজনীতিমুক্ত' ঘোষণা করে সাধারণ ছাত্ররা। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পণ্ড হয়ে যায়। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ২৬ জুলাই : এলাকা ভাগ করে চলছে 'ব্লক রেইড'। সারা দেশে অভিযান। সারা দেশে অন্তত ৫৫৫টি মামলা। গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬ হাজার ২৬৪। সাদা পোষাকে ডিবি হারুনের সন্ত্রাসীরা হাসপাতাল থেকে ছাত্রনেতাদের তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই : ১১ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজার ১২১ জন। আতঙ্কে মানুষ ঘরছাড়া। ছাত্রনেতাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করতে থাকে ডিবি হারুন ২৯ জুলাই : ছাত্র আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য খুনী হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের মিটিং-এ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ডিবি হারুন কর্তৃক জোর করে বিবৃতি আদায়ের ঘটনায় ছাত্ররা আবার বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ৩১ জুলাই : ছাত্ররা 'রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস' কর্মসূচি পালন করে। ৯ দফার পক্ষে জনমত গঠন করতে থাকে ছাত্ররা। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ১ আগস্ট : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেয় ডিবি। ২ আগস্ট : ৯ দফা আদায়ের দাবিতে সারাদেশে গণমিছিল করে ছাত্র জনতা। পুলিশের গুলিতে ৩ জন শাহদাতবরণ করেন। পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ৪ আগস্ট : রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদিন পুলিশের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের উপর গুলি বর্ষণ করে। কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনীও গুলি চালায়। সারাদেশে ১৩০ জন শাহাদত বরণ করে। পরদিন ঢাকামুখী লং-মার্চের কর্মসূচি দেয় ছাত্র জনতা। ৫ আগস্ট : দুপুর ১২ টায় শাহবাগের পুলিশ ও সেনাবাহিনী রাস্তা ছেড়ে দেয়। ১ টায় মানুষ জেনে যায়, হাসিনা ভারতে পালিয়েছে। সারাদেশের মানুষ সব রাস্তায় নেচে গেয়ে উদযাপন করতে থাকে। গলিতে গলিতে মিস্টি বিতরণ ও ঈদ মোবারক বলে কোলাকুলি করতে থাকে তারা। রাস্তায় মানুষ সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। বিভিন্ন মোড়ে থাকা স্বৈরাচার মুজিবের সকল মুর্তি ভেঙ্গে দেয় ছাত্র-জনতা। ৬ আগস্ট : বাংলাদেশে উদিত হয় নয়া দিগন্ত। সারাদেশে প্রশান্তির বাতাস বয়ে যায়। যেভাবে তিনি শহীদ হন ৫ আগস্ট ২০২৪ রাজধানীর সাভার এলাকায় ছাত্র জনতার সাথে লং মার্চে অংশ গ্রহণ করেন সুমন হাসান। মিছিল থানা রোডে পৌছাতে চারিদিক থেকে আন্দোলনকারীদেরকে লক্ষ করে ঘাতক পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র ও গুলি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। নরখেকো পুলিশের গুলিতে অসংখ্য জনতা সেদিন প্রাণ হারায়। গুলি বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার-হাজার জনতা মিছিলকে সামনের দিকে নিয়ে যায়। সুমনের কণ্ঠে স্বৈরাচারী পতনের নানা স্লোগান উচ্চারিত হয়। চারিদিকে কাঁদানে গ্যাস ও বুলেটের তীব্র আঘাতে শতশত মানুষ জখম হয়ে রাস্তায় পড়েছিল সেদিন। লাশের স্তুপে রক্তাক্ত রণাঙ্গন তৈরি হয়েছিল রাজধানীসহ সারাদেশের অলি গলি সেদিন। বিকাল ৪.০০ টা। একের পর এক গুলি ছুড়ছে ঘাতক নরপিশাচ পুলিশ বাহিনী ও হাসিনার সন্ত্রাসীরা। হঠাৎ বিকট আওয়াজ চারপাশকে প্রকম্পিত করে তোলে। ঘাতকের ছো্ড়াঁ গুলি তেজস্বী সুমন হাসানের বুকে এসে বিদ্ধ হয়। একটি গুলি তাঁর মেরুদণ্ডে আঘাত হানে। অচেতন হয়ে মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। নরখাদকদের তীব্র গোলাগুলিতে পথচারীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সাহস হয়নি। ফলে ঘটনাস্থলে মহান আল্লাহর দরবারে পাড়ি জমান শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: সুমন হাসান। পরিবারের কাছে খবর আসে দেরিতে। রাত ১২টার দিকে শহীদের লাশ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায় নিয়ে যাওয়া হয়। একমাত্র ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শহীদ পিতা জনাব বিল্লাল হোসেন। পিঠাপিঠি ভাই-বোন ছিলেম সুমন ও বীথি। সহোদরকে হারিয়ে নিঃস্ব বোন জারে জারে কাঁদতে থাকেন। পরদিন সকালে ৬ আগস্ট ২০২৪ হাজার-হাজার জনতার উপস্থিতিতে এই মহাবীরের জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর শহীদ সুমনের লাশ নিজ গ্রামের কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে পরিবারের কথা না ভেবে দেশকে স্বাধীন করে গিয়েছে এমন হাজারও তরুণ। আমরা তাঁদের এই ত্যাগকে মূল্যায়ন করতে কখনও যেন ভুলে না যাই। শহীদের প্রোফাইল নাম : মো: সুমন হাসান, বয়স : ২১, পেশা : গার্মেন্টস শ্রমিক পিতা : মো: বিল্লাল হোসেন, বয়স: ৬০, অসুস্থ মাতা : মৃত : স্বপ্না বেগম স্বারা স্থায়ী ঠিকানা : জেলা: জামালপুর, উপজেলা: সদর, গ্রাম: শাহবাজপুর, মহল্লা: চরপাড়া, মন্ডল বাড়ি বর্তমান ঠিকানা : একই শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ০৫ আগস্ট ২০২৪, সাভার, থানা রোড, ঢাকা যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি শহীদের কবরস্থান : নিজ গ্রামের স্থানীয় কবরস্থান বোন: মোসা : বীথি আক্তার, বয়স: ১৯, (বিবাহিতা) সম্পদের পরিমাণ : বসতি জমিতে টিনের তৈরি দুই রুমের একটি অসম্পূর্ণ বাড়ি রয়েছে প্রস্তাবনা ১. শহীদ পিতাকে চিকিৎসা খরচ বাবদ সাহায্য করা যেতে পারে। তিনি ব্লাস্ট ইনজুরিতে ভুগছেন ২. শহীদের পিতাকে একটি দোকান উপহার দিয়ে কর্মসংস্থান গড়ে দেয়া যেতে পারে ৩. পরিবারটি বোনের বিবাহ অনুষ্ঠান বাবদ সত্তর হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে। ঋণ পরিশোধে সহায়তা করা যেতে পারে ৪. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সুমন হাসান
Image of মো: সুমন হাসান
Image of মো: সুমন হাসান
Image of মো: সুমন হাসান
Image of মো: সুমন হাসান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো:  হুমায়ুন কবির

সাব্বির ইসলাম

মো: জিন্নাতুল ইসলাম খোকন

মো: বকুল মিয়া

মো: সোহাগ মিয়া

আব্দুল্লাহ আল মাহিন

মো: মাহবুব আলম

মো: নূরে আলম সিদ্দিকী

মো: সামিদ হোসেন

মো: আলি হুসেন

 মো: সাইফুল ইসলাম

মোঃ জামাল মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo