জন্ম তারিখ: ২২ জুলাই, ১৯৮০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ময়মনসিংহ
পেশা :রিক্সা চালক, শাহাদাতের স্থান :রূপনগর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর্
শহীদ শাহিন মাহমুদ শেখ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮০ সালের ২২ জুলাই। তার জন্মস্থান শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের গবরিকুরা গ্রামে। এটি তার গ্রামের বাড়ি। তার পিতা মৃত শাহজাহান( ৮০) । পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ভূমি অফিসের পিয়ন। তার মায়ের নাম অবিরন নেছা। বর্তমানে তিনি ৭০ বছরের বৃদ্ধা। শহীদ শাহিন মাহমুদ শেখ স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার রূপনগরে। তিনি পেশায় ছিলেন রিকশাচালক। আর তার স্ত্রী সালমা বেগম গার্মেন্টস কর্মী। তার কন্যা দুজনের প্রথম জনের নাম শারমিন (১৭) আর ছোট মেয়ে মিম (১৫)। স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ইনকামে দুই কন্যা সন্তান নিয়ে ছিল তার সুখের সংসার। কিন্তু তার সেই সুখের সংসার নিমিষেই ধ্বংস হয়ে গেল স্বৈরাচারীর ঐরাবতের আঘাতে। শহীদ হওয়ার ঘটনা ৩৬ জুলাই কিংবা ৫ আগস্ট, ২০২৪; যে দিনটাতে স্বৈরাচারের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটেছিল, লাখো কোটি ছাত্র জনতার গণভবন অভিমুখে যাত্রা খবর শুনে স্বৈরাচারী হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হয়েছিল, সেই দিনটাকে তার দোসরারা, তার পেটুয়া বাহিনীরা, তার পোষা পুলিশলীগ তার পালানোর কথা জানার পরও শেষ কামড় দিয়ে এদেশের কয়েকশ নিরীহ ছাত্রজনতাকে হত্যা করেছিল। ভয়ংকর সেইসব বিভীষিকাময় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন শহীদ শাহীন মাহমুদ শেখও। জুলাই এর মাঝামাঝি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারাদেশে ঝড় তোলে। প্রতিদিনই পুলিশের গুলি আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের ধারালো অস্ত্রে জখম হয়ে সারাদেশে শহীদ হচ্ছিলেন অসংখ্য ছাত্র-জনতা। ঠিক তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল আন্দোলনের মাত্রাও। ক্রমান্বয়ে এই আন্দোলন পরিণত হয় স্বৈরাচার পতনের একদফা আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত বিজয়ের দিনটি আসে ৫ই আগস্ট ২০২৪। এদিন সকালে শহীদ শাহিন মাহমুদ শেখ তার ৪ জন বন্ধুকে নিয়ে সকাল ১০টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরের রূপনগরে আন্দোলনকারীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিতে যান। সেই যে তিনি গেলেন, তারপর আর বাসায় ফেরা হয়নি তার। দিন যায়, সন্ধ্যা নামে; তার খোঁজ পাওয়া যায় না। তার স্ত্রী-কন্যারা সমস্ত জায়গায় তাকে খুঁজতে থাকেন, কিন্তু কোথাও পাওয়া যায় না। ফোনেও তাকে পাওয়া যায় না। সারারাত তাদের নির্ঘুমে কাটে। পরদিন ৬ই আগস্ট রূপনগর ড্রেনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ একটি লাশ পাওয়া যায়, যার শরীরে ৪টি গুলিবিদ্ধ ছিল। ২ গুলি লাগে তার ঘাড়ে, ১টি হাতে আর ১টি লাগে বুকে। এই অজ্ঞাত লাশ পেয়ে স্থানীয় জনগণ মসজিদের মাইকে জরুরি ভিত্তিতে ঘোষণা করে। এই ঘোষণা শুনতে পান শহিদ শাহিন মাহমুদের ভাগিনা। তিনি শহীদের ছোট কন্যা মিমকে বিষয়টি অবগত করেন এবং তাকে নিয়ে লাশের কাছে পৌঁছান। তখন মিম লাশটা তার পিতা শাহিন মাহমুদের বলে শনাক্ত করেন। শহীদ সম্পর্কিত আরো কিছু তথ্য শহীদ শাহিন মাহমুদ শেখ ছিলেন একজন সাদাসিধে রিকশাচালক, যিনি জীবন যুদ্ধে রিক্সার প্যাডেলে ঘাম ঝরিয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু এক বিভীষিকাময় মৃত্যু গ্রাস করে তাকে। এক নীরব অচেনা মৃত্যু, যে মৃত্যুর ঘোষণা আসে মসজিদের মাইকে— অজ্ঞাতনামা এক লাশের খবর! সেই অজ্ঞাত লাশটা আর কেউ ছিলেন না, ছিলেন দুইকন্যা সন্তানের বাবা, পরিবারের একমাত্র ভরসা শহীদ শাহিন মাহমুদ। শাহিন মাহমুদের মৃত্যুর পর তাদের সংসার যেন অকস্মাৎ অন্ধকারে ঢেকে যায়। সালমা বেগমের একার আয় গার্মেন্টসের সামান্য বেতনে এখন দুই মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একসময়ের সচ্ছল সংসার এখন দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত। শাহিনের দুই মেয়ে বাবার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। পিতৃহারা এতিম মেয়ে দুটোর মুখের দিকে যেন তাকানো যায় না। আর স্বামীহারা সালমা বেগমও যেন হয়ে গেছেন মনমরা। তবুও দু কন্যা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে চেষ্টা করছেন শক্ত হয়ে দাঁড়ানোর। শহীদ শাহিনের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, এলাকাবাসী সবাই শোকাহত। তাদের কাছে শহীদ শাহিন শুধু একজন রিকশাচালকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সংগ্রামী মানুষ, যিনি জীবন দিয়েও সংগ্রামের পথ ছেড়ে যাননি। তার এই আত্মত্যাগ সমাজের জন্য এক চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে থাকবে। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন ২. স্ত্রীর জন্য ভালো একটা কর্মসংস্থান প্রয়োজন এক নজরে শহীদের তথ্যাবলি পূর্ণনাম : মো. শাহিন মাহমুদ শেখ জন্ম তারিখ : ২২.০৭.১৯৮০ শহীদ হওয়ার স্থান ও সময়কাল : রূপনগর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর, ৫ আগস্ট, ২০২৪, দিনের কোনোএক সময় আঘাতের ধরন : একাধিক গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ দাফনস্থল : নিজগ্রাম পেশা : রিক্সা চালক কর্মস্থল : গাজীপুর পিতা : মৃত শাহজাহান মাতা : অবিরন নেছা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গবরিকুরা, ইউনিয়ন: কাকিলাকুরা, থানা: শ্রীবরদী, জেলা: শেরপুর স্ত্রী-সন্তান : সালমা বেগম, পেশায় গার্মেন্টস কর্মী : কন্যা: শারমিন (১৭) : কন্যা: মিম (১৫)