Image of শাহাদাত হোসেন

নাম: শাহাদাত হোসেন

জন্ম তারিখ: ১ মে, ১৯৯৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :গার্মেন্টস কর্মী শাহাদাতের স্থান :মিরপুর মডেল থানার সামনে।

শহীদের জীবনী

শহীদ শাহাদাত হোসেনের জন্মস্থান শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানাধীন নলকুড়া ইউনিয়নের শালচুরা গ্রামে। এই গ্রামের দম্পতি মো: ইদ্রিস আলী ও সুরুতা বেগমের ঘর আলোকিত করে আগমন ঘটে তার। তার জন্মের সেই দিনটি ছিল ১৯৯৮ সালের ১ মে। পিতামাতার ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।বছর ৪ আগে শাহাদাত হোসেন তার পিতাকে হারান। পিতার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব যেন তার ঘাড়ে এসে বর্তায়। তার বড় ভাই মোঃ নুরুজ আলী (৩৬) একজন দিনমজুর। ছোট ভাই এরশাদ আলী (১৮) সামান্য একজন কৃষক। তাদের দুজনের যে আয়, তা দিয়ে তাদের বড় পরিবারের ভরণপোষণ দুরূহ হয়ে যায়। তার ওপর শাহাদাত হোসেন ছিলেন বিবাহিত। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক । তাইতো তিনি সংসারের সব দায়িত্ব যেন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। চলে যান ঢাকা শহরে। মিরপুর ২ এ একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। এই চাকরির বেতনে আর দুই ভাইয়ের সামান্য সহযোগিতায় ভালোই চলছিল তার বড় পরিবার। গার্মেন্টসে চাকরির সুবিধার্থে শাহাদাত হোসেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন ঢাকার মিরপুরের বড়বাগ এলাকায়। তার স্ত্রী সোনিয়া একজন গৃহিণী। একমাত্র শিশুকন্যা সায়মা, যার বয়স ২ বছর। শহীদ শাহাদাত হোসেনের ২ বোনের একজন রিমা আক্তার (২৫)। তিনি বিবাহিতা। থাকেন শ্বশুরবাড়ি। আর ছোট বোন রিনা আক্তার (১৯) এখনো অবিবাহিতা। যেভাবে শহীদ হন শাহাদাত হোসেন ৫ আগস্ট ২০২৪, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের দিন। এদিন সকাল থেকেই লাখো জনতা সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে আসতে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্য গণভবন ঘেরাও। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরো ঢাকা শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। ছাত্র-জনতার এই সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যায়। এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। স্বৈরাচারের পতনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় নেমে আসে বিজয়মিছিল। তেমনই এক বিজয়মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন শহীদ শাহাদাত হোসেন। সময়টা তখন বিকেল ৩ টা ৩০ মিনিট। মিরপুর ২-এর বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন শহীদ শাহাদাত হোসেন। যখন তারা মিরপুর মডেল থানার সামনে, তখন হঠাৎ এই বিজয় মিছিলের উপর পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। দুটো গুলি এসে বেঁধে শহীদ শাহাদাতের শরীরে। একটি গুলি তার পেট ফুঁড়ে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। আরেকটি গুলি লাগে বুকে। ভেতরে আটকে যায় সেটি। এই অবস্থায় আন্দোলনকারীরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে নেওয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিভে যায় সুখময় সংসারের এক শুকতারা। অকালে বিধবা হয়ে যায় এক নারী। এতিম হয়ে যায় ২ বছরের শিশু। সন্তানহারা হয় বিধবা মা। ভাইহারা হয় চার ভাইবোন। এ যেন এক নিষ্ঠুর নিয়তি! শহীদ শাহাদাত সম্পর্কে আরো যা জানা যায় শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানার শালচুরা গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহাদাত হোসেন ছিলেন গ্রামের সবচেয়ে অমায়িক ও ভদ্র স্বভাবের ছেলে। সারা জীবনই তিনি তার সরলতার জন্য পরিচিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সবার সাথে ছিল তার আন্তরিক সম্পর্ক। কোনো ঝগড়া, কোনো তর্কে তিনি কখনো জড়াননি। স্নেহময় এই যুবককে গ্রামের সবাই ভালোবাসতেন। শাহাদাত হোসেনের জীবনটা সহজ ছিল না। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে নিজের পড়াশোনার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয় তাকে। শৈশব থেকেই পরিবারের ভার কাঁধে তুলে নিয়ে তিনি মিরপুর ২-এ একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতে শুরু করেন। জীবনের প্রতিটি দিন কাটাতেন কঠোর পরিশ্রমে, যেন পরিবারটা কোনোভাবে টিকে থাকে। ৪ বছর আগে বাবাকে হারান শাহাদাত। তার মা একজন গৃহিণী, আর দুই ভাইয়ের একজন কৃষক এবং অন্যজন দিনমজুর। বড় বোনের বিয়ে হওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন, কিন্তু ছোট বোন অবিবাহিতা হওয়ায় তিনিও থাকতেন তার সংসারে। এছাড়া তার সংসারে ছিল তার প্রিয়তমা স্ত্রী ও এক শিশুকন্যা। এই বড় পরিবারের অন্যতম আয়ের উৎস ছিলেন তিনি। যিনি কখনো পরিবারের কাছে কিছু চাননি, বরং নিজেই ছিলেন তাদের অবলম্বন। তার উপার্জনের ওপরই ভর করে চলছিল পরিবারের জীবনযুদ্ধ। কিন্তু ৫ই আগস্টের সেই কালো দিনে দুটি বুলেট পুরো পরিবারকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। পুলিশের ছোঁড়া সেই বুলেটে শাহাদাতবরণ করেন শাহাদাত হোসেন। পরদিন তাকে তার নিজগ্রাম শালচুরায় কবরস্থ করা হয়। শোকগ্রস্ত পরিবারটি সেইদিন থেকে বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রাম শুরু করেছে। শাহাদাতের মৃত্যুর পর দুই ভাইয়ের সামান্য উপার্জনে কোনোমতে চলছে তাদের সংসার। আর তার প্রিয়তমা স্ত্রী একমাত্র শিশুকন্যা সায়মাকে নিয়ে ফিরে গেছেন বাবার বাড়িতে। তিলে তিলে গড়ে তোলা যে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন শাহাদাত তার স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে দেখছিলেন, তা নিমিষেই ধ্বংস হয়ে গেল। শাহাদাতের মৃত্যু শুধু একটি প্রাণের নিঃশেষ নয়, একটি পরিবারের স্বপ্নরেও নিঃশেষ। তার বিভীষিকাময় এই মৃত্যু আজও প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে আমাদের সমাজের ন্যায় বিচার ও মানবিকতার ভিত্তিকে। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. ভাইদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। ২. এতিম শিশু কন্যাসন্তানের লালনপালনের খরচ বহন করা। ৩. স্ত্রীকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান। এক নজরে শহীদের সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল পূর্ণনাম : শাহাদাত হোসেন জন্ম তারিখ : ০১.০৫.১৯৯৮ জন্মস্থান : শালচুরা, শেরপুর শহীদ হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট, ২০২৪; বিকাল: ৩:৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার স্থান : মিরপুর মডেল থানার সামনে আঘাতের ধরন : একাধিক গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ দাফনস্থল : নিজগ্রাম, শালচুরা পেশা : গার্মেন্টস চাকরি কর্মস্থল : মিরপুর, ঢাকা পিতা : মৃত মো: ইদ্রিস আলী মাতা : সুরুতা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: শালচুরা, ইউনিয়ন: নলকুরা, থানা: ঝিনাইগাতি, জেলা: শেরপুর স্ত্রী-সন্তান : স্ত্রী সোনিয়া আক্তার, গৃহিণী। ১ কন্যা: সায়মা, বয়স ২ বছর

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of শাহাদাত হোসেন
Image of শাহাদাত হোসেন
Image of শাহাদাত হোসেন
Image of শাহাদাত হোসেন
Image of শাহাদাত হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন

 মোঃ রফিকুল ইসলাম

তনয় চন্দ্র দাস

আ: আজিজ

মো: আনারুল ইসলাম

মো: রাহুল

হৃদয় মিয়া

তোফাজ্জল হোসেন খান

মো:  হুমায়ুন কবির

কুদ্দুস মিয়া

মোঃ শহিদ হোসেন

মো: শাহজাহান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo