Image of মো: আশরাফুল ইসলাম

নাম: মো: আশরাফুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান :মিরপুর-২, থানার সামনে।

শহীদের জীবনী

৫ আগস্ট ২০২৪, ছাত্রজনতার চূড়ান্ত বিজয়ের দিন মিরপুর ২-এ পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে যে কয়জন ছাত্রজনতা নিহত হন, তাদের মধ্যে শহীদ আশরাফুল ইসলাম অন্যতম। তার মৃত্যুর মুহূর্তটি ছিল হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার মতো একটি মুহূর্ত। শহীদ আশরাফুল ইসলামের জন্ম শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানাধীন নলকুরা ইউনিয়নের শালচুরা গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ আব্দুল আলী ও মাতা আনোয়ারা বেগমের গৃহ আলো করে আশরাফুল ইসলামের এই ধরণীতে আগমন ঘটেছিল ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি। শহীদ আশরাফুলের পিতা মোঃ আব্দুল আলীর বয়স ৬০ বছর। পেশায় তিনি গাছ কাটা শ্রমিক। জীবিকা নির্বাহ করেন গাছ কেটে। তার মাতা আনোয়ারা বেগমের বয়স ৫৫ বছর। তিনি গৃহিণী। পরিবারে ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে শহীদ আশরাফুল ছিলেন সবার ছোট। তার বড় ভাই মোঃ আনোয়ার (৩০) কৃষি কাজ করেন। মেজ ভাই আমিনুল ইসলাম (২২) ১৩ পারা কুরআন হিফজ করার পর বর্তমানে বেকার। আর একমাত্র বোন আকলিমা (২৫) বিবাহিতা। পেশায় তিনি গৃহিণী। থাকেন স্বামীর সংসারে। শহীদ আশরাফুল ইসলাম পেশায় ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী। থাকতেন ঢাকার মিরপুরে। সেখানকার একটি গার্মেন্টসের কাপড় প্রিন্টের কারখানায় কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। শহীদ আশরাফুল তার উপার্জনের বড় একটা অংশ তার পরিবারে দিতেন। পিতা, বড় ভাই আর তার প্রচেষ্টায় তাদের সংসার বেশ ভালোভাবেই চলত। কিন্তু একটা ঝড় তাদের সেই সুখের সংসারে আঘাত হেনে এলোমেলো করে দিয়েছে সবকিছু। যেভাবে শহীদ হন তিনি গত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে শহীদ আশরাফুলের জীবনের করুণ সমাপ্তি ঘটে, যা তার পরিবার ও দেশবাসীর জন্য এক গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেদিন ছিল দেশের জন্য একটি বিশেষ দিন। ১৬ বছরের স্বৈর শাসক শেখ হাসিনার পতনের দিন। ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের ফলে পুরো দেশজুড়ে আনন্দের জোয়ার বইছিল। সারা দেশের মতো ঢাকাতেও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সফল সমাপ্তি উদযাপনে সড়কে সড়কে আনন্দ মিছিল হচ্ছিল। সেই আনন্দ মিছিলে দেশের অন্যান্য সাধারণ মানুষ—শিশু-যুবা-বৃদ্ধদের মতো শহীদ আশরাফুল ইসলামও যোগ দেন। আশরাফুল ইসলাম সবসময়ই সমাজ ও দেশের প্রগতির পক্ষে ছিলেন। সেই বিশেষ দিনে তিনি নিজের মোবাইল ফোনে আনন্দ মিছিলের স্মৃতি ধরে রাখতে ভিডিও ধারণ করছিলেন। কিন্তু সেই আনন্দঘন মুহূর্ত হঠাৎই এক মর্মান্তিক ঘটনার দিকে মোড় নেয়। পুলিশ অতর্কিতভাবে সেই মিছিলে হামলা চালায়, মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণ করে মিছিল কারীদের ওপর। গুলির আঘাতে আশরাফুলের শরীর জর্জরিত হয়। তার পিঠের নিচের দিকে দুটি এবং মেরুদণ্ড বরাবর একটি বুলেট লাগে। এই আঘাত মারাত্মকভাবে তাকে আহত করে এবং তার শরীর থেকে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তবুও আশরাফুল দৃঢ়ভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজেই দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ছুটে যান চিকিৎসা নেবার জন্য। হাসপাতালে গিয়ে তিনি নিজ হাতে টিকেট কেটে ইমার্জেন্সিতে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রচন্ড যন্ত্রণায় কাতর অবস্থায় অপেক্ষা করছিলেন চিকিৎসার। শরীর থেকে তখনও প্রবাহিত হচ্ছিল রক্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হন। গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া শরীর নিয়ে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে তার গুলিবিদ্ধ শরীর। তবুও কোনো ডাক্তার তার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেননি। চিকিৎসার অভাবে কোনো সহায়তা না পেয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগেই করুণ মৃত্যু হয় তার। অসহায় শহীদ পরিবার শহীদ আশরাফুল ছিলেন খুবই ভালো, দায়িত্বশীল এবং পরিশ্রমী ছেলে। পরিবারের সবার জন্য তিনি ছিলেন সহায়তার এক বড় উৎস। তার বাবা আব্দুল আলী, যিনি গাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করেন, তার মতোই সৎভাবে জীবনযাপন করতেন তিনি। আশরাফুল তার গার্মেন্টসে চাকরি করার সুবাদে প্রতি মাসে একটি বড় অংশ নিজের পরিবারের হাতে তুলে দিতেন। মূলত তার আয়ের উপরই পরিবারটি অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল। বড় ভাই আনোয়ার, তিনি নিজে আর তার বাবা মিলে যা আয় করতেন, তা দিয়ে তাদের সংসার ভালোভাবে চলত। পরিবারের সবার মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সাধারণ কিন্তু শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করছিলেন তারা। কিন্তু আশরাফুলের মৃত্যু তাদের জীবনকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। তার শাহাদাতের ফলে পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। বাবার গাছ কাটার কাজ এবং ভাইয়ের কৃষিকাজের আয় দিয়ে পরিবারটি চালানো এখন অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশরাফুল যে আর্থিক সাহায্য করতেন, তা না থাকায় তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে গেছে এবং সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। এই পরিবারটির জন্য তিনি ছিলেন একটি বড় সমর্থন এবং পরিশ্রমী ব্যক্তি। তার এই মর্মান্তিক মৃত্যু শুধুমাত্র তার পরিবারকেই ধ্বংস করেনি, এটি দেশের জন্যও একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এখন তার পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবসহ সর্বস্তরের মানুষ তার হত্যার সঠিক বিচার চান। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. ভাইদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ২. পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দান এক নজরে শহীদের তথ্যাবলি পূর্ণ নাম : মো: আশরাফুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ০১.০১.২০০৪ পেশা : গার্মেন্টস কর্মী কর্মস্থল : মিরপুর, ঢাকা পিতা : মৃত মো: আব্দুল আলী মাতা : আনোয়ারা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: শালচুরা, ইউনিয়ন: নলকুরা, থানা: ঝিনাইগাতি, জেলা: শেরপুর জন্মস্থান : শালচুরা, শেরপুর শহীদ হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল: ৩:৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার স্থান : মিরপুর-২, থানার সামনে আঘাতের ধরন : একাধিক গুলিবিদ্ধ ঘাতক : পুলিশ দাফনস্থল : নিজগ্রাম, শালচুরা ভাইবোন : বড় ভাই: আনোয়ার (৩০), মেজ ভাই: আমিনুল ইসলাম (২২), ১৩ পারা হাফেজ, একমাত্র বোন: আকলিমা (২৫), গৃহিণী

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আশরাফুল ইসলাম
Image of মো: আশরাফুল ইসলাম
Image of মো: আশরাফুল ইসলাম
Image of মো: আশরাফুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মো: সাইফুল ইসলাম

মো: রবিউল ইসলাম রকিব

মো: মোস্তফা

মো: ইমরান হোসাইন

সফিক মিয়া

মো: আহাদুন

মো: ফারুক

মো: রিদওয়ান হোসেন (সাগর)

আসীর ইনতিশারুল হক

 মোহাম্মদ কবির হোসাইন

মো:  হুমায়ুন কবির

মো: মাজিদুল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo