জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান :যাত্রাবাড়ি থানা।
শহীদ আব্দুল রকিব একজন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। বয়স ২৫ বছর। বাসা রায়েরবাগ। বাবা নাই, মা আর বড়ভাই তার দেখাশোনা করতেন। দারিদ্র্যের সংসার তাদের, বড়ভাই রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। যেই ঘরে তারা থাকেন, একটু বৃষ্টিতেই নীচে পানি জমে যায়। শহীদ রাকিবের দুই পা বাঁকানো, ঠিকমতো হাঁটতে পারতেন না। ঘাড়েও শারীরিক অসুবিধা ছিলো। ফলে চলাফেরা স্বাভাবিক ছিলো না তার দারিদ্রের সংসারে যা হয়, এই সমস্ত কিছুকে সঙ্গী করেই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। শহীদ রাকিবের বেলায়ও তাই-ই হয়েছে। শারীরিক আর মানসিক প্রতিবন্ধকতাকে সাথেই নিয়েই শহীদ রাকিব স্থানীয় একটা মিলে কাজ করতেন। যেভাবে শহীদ হলেন ২০০৮ সালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় আসে সাবেক স্বৈরাচার ও অদক্ষ সরকার প্রধান শেখ মুজিবকন্যা খুনি হাসিনার সরকার। ২০২৪ সাল পর্যন্ত জনতার যেকোন অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তার দলীয় ভাবে নিয়োগ দেয়া পুলিশ বাহিনী মারনাস্ত্র নিয়ে রাজপথে নেমেছে। ন্যায় বিচার করার পরিবর্তে খুন করেছে নির্মমভাবে। সাধারণ কোটা বিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তার সমস্ত বাহিনী যেভাবে আক্রমণ করেছিল তা শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। দেশের দেশপ্রেমিক সন্তানেরা দিনে দিনে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। চাটুকার, সন্ত্রাসী, খুনি, লম্পট ও ভারত প্রেমিকেরা দায়িত্ব পেয়েছিল দেশ শাসনের। ভারতকে সুবিধা প্রদান করতে ধীরে ধীরে সকল সেক্টর ধ্বংস করে ফেলা হয়। দেশের প্রায় লক্ষ শিক্ষিত বেকার হয়ে ঘুরছে অথচ অসংখ্য ভারতীয় নাগরিককে চাকরি করছে বিভিন্ন সেক্টরে। একটি বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাদেশ পুলিশে ভারতীয় নাগরিকের অনুপ্রবেশ নিয়ে নিউজ করে যা বেকার তরুণদের আশাহত করার পাশাপাশি দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ২০১৮ সালে নিষিদ্ধ হওয়া কোটার মাধ্যমে দলীয় কর্মী নিয়োগ শুরু করতে চায় হাসিনা সরকার। উদ্দেশ্য ভারতীয় নাগরিক ও নিজ দলের কর্মীদের পূনর্বাসন করা। ছাত্ররা কোটাপদ্ধতি প্রতাহার করতে অনুরোধ করলে শেখ হাসিনা রাজাকারের নাতি বলে কটাক্ষ করেন। ফলে ছাত্ররা রাস্তায় আন্দোলন শুরু করে। হাসিনা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের উপর নৃশংস হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু করে তখন দেশের অনেক এলাকায় আন্দোলনের তীব্রতা সাময়িক কমে গেলেও বিপরীতে দ্বিগুণ গতিতে ক্ষোভের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায়। কোটাবিরোধী আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া এলাকা ছিল সবচেয়ে বেশি সহিংসতাপূর্ণ। আন্দোলনে বড় আকারের সংঘাতের আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা, সংঘাতপূর্ণ অন্যান্য এলাকা শান্ত হতে থাকলেও অনেক বেশি সময় লেগেছে ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণে আসতে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, পুলিশের সাথে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। প্রতিদিনই যাত্রাবাড়ী থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছে লাশ যার সংখ্যা ৫৮ জন। ছোট ছোট ক্ষোভ জমা হয়ে বিক্ষোভে রুপ ধারণ করে। রাজপথে নেমে আসে মানুষ। সেই বিক্ষোভ থেকেই জুলাই-আগস্ট জুড়ে ঘটা আন্দোলনে অসংখ্য ছাত্র-জনতা দেশকে বাঁচাতে ও স্বৈরাচার হটাতে অকাতরে প্রাণ দেয়। অবশেষে ৫ আগস্ট দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হলো। জনতা বিজয়োল্লাসে রাজপথে নেমে আসে। পুলিশ তাদের শেষ বুলেট থাকা পর্যন্ত নির্দয়ভাবে জনতার উপরে গুলি চালায়। বিকাল ৩ টায় খুনী হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশ নিরাপদ হয়েছে ভেবে কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বের হলে যাত্রাবাড়ি থানার সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আব্দুল রাকিব। বুকে আর পিঠে গুলি লাগে তার। লাশ হয়ে ফিরেন রাকিব। মাতুয়াইল কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার রাকিবকে শত দারিদ্রের মধ্যেও তার শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে পরম মমতায় আগলে রাখতেন তার মা ও বড়ভাই। শহীদ আব্দুল রাকিবের ভাই জানেন না সরকারি তালিকায় তাদের নাম উঠেছে কিনা। সেই খোঁজও নেই তার। সরকারি তালিকা আদৌ হচ্ছে কিনা এমন খবরও নেই তাদের কাছে। ভাই হারানোর শোক পিছনে ফেলে তাকে রোজ রিক্সা টানতে হয় সংসারের খরচ চালানোর জন্য। একটা ডেথ সার্টিফিকেট তারা আনার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পান নাই। এরজন্য দৌড়ঝাঁপ করার সময়ও তাদের কাছে নাই। জামায়াতের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিলো, এতোটুকুই এখন পর্যন্ত তাদের পাওয়া। আর কেউই আসে নাই তাদের কাছে। না সরকারের কেউ, না তালিকা হালনাগাদ করা কোন টিম। শহীদ আব্দুল রাকিবের মা তার প্রতিবন্ধী সন্তানের হত্যার বিচার চান। মামলার ঝামেলায় জড়িয়ে গরীব মানুষ আরো বেশি বিপদের মুখে পড়তে চান না তারা। জানি না, শহীদ আব্দুল রাকিবদের কখনোই ন্যায়বিচার দিতে পারবো কিনা আমরা! একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : আবদুল রাকিব পেশা : শ্রমিক জন্ম তারিখ : ১ জানুয়ারি ২০০৪ পিতা : মো: ইদ্রিস আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ি থানা আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : মাতুয়াইল কবরস্থান বর্তমান ঠিকানা : ১৭২৪, মদিনাবাগ, রায়েরবাগ, ঢাকা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : হতদরিদ্র প্রস্তাবনা : ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করাএকনজরে শহীদের পরিচয়