Image of ফারহানুল ইসলাম ভুইঁয়া

নাম: ফারহানুল ইসলাম ভুইঁয়া

জন্ম তারিখ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : ধানমন্ডি

শহীদের জীবনী

নাম তাঁর ফারহান ফাইয়াজ। পুরো নাম মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া। ফারহান ফেসবুকে তাঁর অ্যাকাউন্টের বায়োতে লিখেছিলেন, ‘একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।’ কথাটা সবার উদ্দেশ্যে বললেও ফারহান নিজেই তার কথা রেখেছেন। তিনি দেশকে ভালোবেসে এমন কাজ করেছেন যা বাংলাদেশের মানুষ মনে রাখবে। ফারহান ফাইয়াজ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ৩য় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ২০২৫ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচ এস সি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। ফারহান গবেষণামূলক কাজ করতে চেয়েছিলেন, দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে দেশের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন। যেভাবে শহীদ হলেন ২০০৮ থেকে আওয়ামী লীগ সরকার জনতার বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে দেয়। স্বৈরাচারী মুজিব সরকারকে নির্মূল করে দেয়া বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দেয়। বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা নিজ হাতে জবাই করে প্রতিশোধ নেয়। সেসময় বিপ্লবীদের বাঁচাতে বি এন পি স্বামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে আসেনি। তারপরেই পিলখানায় ৫৬ জন সেনা অফিসারসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু নাগরিককে ভারতের সহযোগিতায় হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছিলেন তার ক্ষমতার পথের কাটা হলো ইসলামপন্থী বা ইসলামী নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারা নিজস্ব বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে অন্যায়ভাবে ১৯৭১ সালে অপরাধীর অভিযোগ তুলে প্রমাণ ছাড়া জামায়াত নেতাদের একে একে হত্যা করতে থাকে। উল্লেখ্য যে, জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধী সাজিয়ে ক্রমাগতভাবে মিথ্যা বানোয়াট নিউজ করেছিল প্রথম আলো পত্রিকা। জামায়াত নেতাদের হত্যা করার পাশাপাশি চরমোনাই এর দল আর চট্টগ্রামের সুন্নিপন্থি ইসলামী দল (ইসলামিক ফ্রন্ট) ছাড়া বাকি দল গুলোর ইসলামী আলেমদের উপর শুরু হয় নির্যাতন-জেল-জুলুম-গুম-খুন। নাস্তিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করার কারনে হেফাজত ইসলামের আন্দোলনে নির্মম হত্যাকান্ড চালানো হয়। শুরু হয় লুটপাট, ব্যাংক ডাকাতি, বিদেশে অর্থ পাচার। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভেবেছিল পরবর্তী নির্বাচন গুলোতে তাদের ভোট দেবেনা। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার জনতার ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়। এভাবে সামগ্রিক অব্যবস্থাপনার ফলে ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হতে থাকে। এই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে জুলাই বিপ্লবের সময়। চাকুরীতে দলীয় কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন খুনি হাসিনা ও তার অবৈধ সরকার। একারণে কোটা পদ্ধতি অব্যাহত রাখে। যাতে মেধাবীদের চাকুরীতে নিয়োগ পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। ছাত্ররা কোটাপ্রথার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করে দেয়। তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বারবার নস্যাৎ করে দেয় বিতর্কিত, খুনি, সন্ত্রাসী ও ধর্ষকদের সংগঠন ছাত্রলীগ। ১৬ জুলাই আন্দোলনে আবু সাইদসহ ৬ জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়। ছাত্রলীগ অস্ত্র হাতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে ঝাপিয়ে পড়ে। ১৭ জুলাই সাধারণ ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো থেকে ছাত্রলীগকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। রাস্তায় কফিন মিছিল করে। যদিও পুলিশের টিয়ারশেল, লাঠিচার্জ ও হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের ফলে শান্তিপূর্ণ কফিন মিছিল পন্ড হয়ে যায়। ছাত্ররা সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউনের কর্মসূচী দেয়। আওয়ালী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরাসহ পুলিশ রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে গিয়ে গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। ১৮ জুলাই থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়না। এদিন ছাত্র-ছাত্রীরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ও রাজপথের গুরুত্বপূর্ণ মোড় গুলোতে অবস্থান গ্রহণ করে। হাসিনার নির্দেশ ছিল ভয়ংকর। আন্দোলন দমাতে লাশ ফেলার নির্দেশ দেয়। ছাত্ররা ভেবেছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ কিছু করবে না। রেসিডেন্সিয়াল কলেজের অনেক ছাত্রকে সাথে নিয়ে ফারহান ফাইয়াজ রাস্তায় উপস্থিত হয়। পুলিশ শেখ হাসিনার নির্দেশে সকাল ১০ টা থেকে আক্রমণ করে বসে। বেলা ৩ টার সময় জানা যায় ফারহান ফাইয়াজ বুকে ও মুখে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ছাত্ররা রিকশায় তুলে তাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। নেয়ার পথে তার প্রাণ পাখি উড়ে যায়। তিনি শহীদ হয়ে যান। এদিন অর্থাৎ ১৮ জুলাই প্রায় ৪০ জন ছাত্র-জনতা শহীদ হয়। কেমন আছে তার পরিবার একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ফারহানের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফারহানের জিনিসপত্র দেখলেই কেঁদে উঠেন। ফারহানের বাবা বলেন, দুই সন্তান নিয়ে আমার আনন্দের সংসার আজ থমকে গেছে। সন্তানের লাশ কবরস্থ করে আমি আজ নিঃস্ব। ফারহানের বাবা শহীদুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। নারায়নগঞ্জে তাদের নিজস্ব বাড়ি আছে। আত্মীয় ও বন্ধুদের বক্তব্য বাবা বলেন, ‘এবার ছেলে ১২ সেপ্টেম্বর জন্মদিনের দিন নিজেই গাড়ি চালিয়ে বন্ধুদের নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে চেয়েছিল। আমি রাজিও হয়েছিলাম। এখন তো ছেলেই নেই। ছেলে হত্যার মামলা করেছি। আশা করছি, ন্যায়বিচার পাব।’ মা বলেন, ১৮ জুলাই ছেলে নাশতা করে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বাইরে বের হয়ে যায়। দুপুরের দিকে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাই। আমি ফারহানের হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তি চাই। বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী সায়ীমা ইসলাম বলেন, আমি ফিশ ফ্রাই বানাই। এটা ভাইয়ের খুব পছন্দ। আমি এখন কার জন্য ফিশ ফ্রাই বানাবো? ফাইয়াজের খালা ফারজানা মুনমুন জানান, সংঘর্ষ শুরু হলে বেশ কয়েকজনকে রক্ষা করতে নিজে এগিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ হন ফাইয়াজ। এই বর্ণনা দিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন ‘নিরপরাধ, নিরস্ত্র আমার এতটুকু বাচ্চার বুক তাক করে পুলিশ গুলি চালাল; এতটুকু হাত কাঁপল না?’ সহপাঠী ওয়াকিফ ফাহমিদ বলেন, ক্লাস টুতে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করতাম ফারহান ফাইয়াজের সঙ্গে। একসঙ্গে ভর্তি হলাম ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে। আমি দিবা শাখায়, আর প্রভাতিতে ফারহান। আমাদের ভালো বন্ধুত্ব হয় ২০২১ সালে। তখন আবার একসঙ্গে কোচিং করতাম। কোচিংয়ের আগে-পরে আড্ডা জমে উঠত। গল্প করতে করতে কখন যে রাত আটটা-নয়টা বেজে যেত, টেরও পেতাম না। ফ্যাশনের দিক দিয়ে ফারহান একটু আলাদা ছিল। একেক সময়ের একেক স্টাইল আমাদের তাক লাগিয়ে দিত। পোশাক থেকে শুরু করে চুল-দাড়ির স্টাইলও ছিল আলাদা। মাঝেমধ্যে আমার কাছে এসে বলত, ‘মামা দ্যাখ, আমি কালো হয়ে গেছি না?’ এসব কারণে বন্ধুদের কাছে ওর ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ‘ধলা’। সবাই মজা করে ‘ধলা’ বলে ডাকত। সব সময় ওর মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করতাম। কলেজের বিভিন্ন ক্লাবেও ওর নামডাক ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও ছিল সরব। ২০২১-এর পর থেকে ওর সঙ্গে আমার হাজারো স্মৃতি আছে। কখনো কখনো কোচিং ফাঁকি দিয়ে চুপি চুপি ঘুরেও বেরিয়েছি। একদিন রাতে আমাকে জোর করে ধরল, চাঁদ দেখাবে। কলেজের একটা ফেস্টে টেলিস্কোপ আনা হয়েছিল চাঁদ দেখানোর জন্য। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক ছিল ফারহান। কোচিং বাদ দিয়ে ওর সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম চাঁদ দেখতে। আরও কত কী! একবার একসঙ্গে অনেকজন মিলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম। বসুন্ধরার টগি ফান ওয়ার্ল্ডেও গিয়েছিলাম। মাঝেমধ্যেই বলত, ‘চল মামা এখানে যাই, চল ওখানে যাই।’ কত জায়গাতেই না যাওয়া বাকি ছিল আমাদের! ফারহানের খুব ইচ্ছা ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চায়, এমনটাও বলত কখনো কখনো। মাঝেমধ্যেই পড়াশোনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করত আমার সঙ্গে। মানুষ হিসেবে ছিল খুব নম্র, ভদ্র। সিনিয়রদের শ্রদ্ধা, জুনিয়রদের স্নেহ করত। জুনিয়রদের কাছে ওর বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। শুধু আমাদের কলেজেই নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও নামডাক ছিল। কয়েক দিন আগে টেন মিনিট স্কুলের এক প্রতিযোগিতায় সে আমাদের কলেজের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। আমাদের শেষ দেখা হয় গত ১৫ জুলাই, দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার পর। একসঙ্গে গল্প করতে করতেই সেদিন বাসায় গিয়েছিলাম। ১৬ তারিখে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমি গিয়েছিলাম। আমার এক পোস্টে ফারহান মন্তব্যের ঘরে লিখেছিল ‘প্রাউড অব ইউ।’কে জানত, সে-ই আমাদের সবাইকে ‘প্রাউড’ করে চলে যাবে। অভিযোগ দায়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) ফারহানের বাবা শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বরাবর এ অভিযোগ দাখিল করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ ফজলে শামস পরশ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী আসিফ ইনান, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমারসহ ৫৪ জন। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : শহীদ ফারহানুল ইসলাম ভুইঁয়া (ফারহান ফাইয়াজ রাতুল) জন্ম : ১২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ জন্মস্থান : রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ প্রতিষ্ঠান : ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, দ্বাদশ শ্রেণি, বিজ্ঞান বিভাগ পিতা : মো: শহিদুল ইসলাম ভুঁইয়া মাতা : মোসা: ফারহানা দিবা বোন : সায়ীমা ইসলাম, লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, দশম শ্রেণি শাহাদাত : ১৮ জুলাই ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : ধানমন্ডি আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : বরপা, রূপগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : বরপা, রূপগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ স্থায়ী ঠিকানা : বরপা, রূপগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে বাড়ি আছে প্রস্তাবনা : ১. ছোট বোনের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদের স্মৃতি সংরক্ষনে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে ।একনজরে শহীদের পরিচয়

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

তাহমিদ আব্দুল্লাহ অয়ন

মো: আকাশ

মো: মিঠু বিশ্বাস মারুফ

সাবিদ হোসেন

মো: রাসেল গাজী

মো: আল আমিন

মো: জাকির হোসেন

মো: সাইদুল ইসলাম শোভন

মোশারফ

মো: কবির

মো: শাকিল হোসেন

মো: আরিফুল মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo