Image of জুনাইদ ইসলাম রাতুল

নাম: জুনাইদ ইসলাম রাতুল

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০১১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : বগুড়া থানার সামনে

শহীদের জীবনী

রাতুল বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া, ঘোনপাড়ার মুদি দোকানি জিয়াউর রহমান জিয়ার ছেলে। নিশিন্দারা উপশহর পথ পাবলিক স্কুল ও কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। ৫ আগস্ট রাতুল বিকালে বড় বোন জেরিন ও ভগ্নিপতি আমির হামজার সঙ্গে বিজয় মিছিলে অংশ নিয়েছিল।শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শেখ হাসিনার শাসন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। তিনি দিনে দিনে খুনি ও স্বৈরাচারী হয়ে গড়ে উঠতে আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা কর্মী কমবেশী দায়ী। তার আমলে সৎ লোকেরা ছিল সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। অনুগত, চাটুকার, অদক্ষ ও মুজিববাদে বিশ্বাসী লোক তৈরী করতে শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রি মিক্সিং শিক্ষা পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করানো শুরু হয়। ভুলেসমৃদ্ধ বই গুলোতে সুকৌশলে ইসলাম বিরোধী অধ্যায় স্থাপন করেন নাস্তিকদের জন্মদাতা মুহম্মদ জাফর ইকবাল। প্রত্যেক বইতে শেখ মুজিবের কেচ্ছা-কাহিনী দিয়ে ছাত্রদের বোঝানো হতে থাকে এদেশে শেখ মুজিব ছিলেন একজন ফেরেশতা। হাসিনা আমলে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকা যথাক্রমে বামপন্থী নেতা নাহিদ, দিপু মনি এবং মহিউদ্দিন পুত্র নওফেল শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের অন্যতম কারিগর বিবেচিত। প্রত্যেক সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ পরীক্ষায়, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হতো নিয়মিত। শিক্ষাব্যবস্থার এমন দূরবস্থার ফলে সচেতন জনতা ক্ষুব্ধ হলেও প্রতিবাদ করতে পারতোনা। প্রতিবাদীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন চালানো হতো। জুনাইদ ইসলাম রাতুল দেশের শিক্ষার অবস্থা নিয়ে বিরক্ত ছিল। তার মাদরাসা ও স্কুলে পড়ার সুযোগ হওয়ায় বাস্তবতা বুঝতে পেরেছিল। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া কোটা পদ্ধতিকে আবার ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। তার ইচ্ছা ছিল তার দলের লম্পট ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ এবং ভারতীয় নাগরিকদের ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ প্রদান করা। অথচ প্রায় আড়াই কোটি বেকার দেশে। ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায়। সারাদেশ প্রতিবাদে মুখরিত হয়ে ওঠে। বগুড়া শহরেও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার ছাত্র-জনতা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাজপথে উপস্থিত হয়। সরকারী দুঃশাসনে আগে থেকে ক্ষিপ্ত ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবীতে এবং দেশব্যাপী নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ২ আগস্ট 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' স্লোগানে মুখরিত করে সাতমাথা মোড়। ৪ আগস্ট ঘৃণিত পুলিশ ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের হামলা দেশবাসী প্রতিহত করে। সেনা কর্মকর্তারা ছাত্রদের উপরে অস্ত্র ধারণ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার আওয়ামী লীগের নেতাদের এবং শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। গণহত্যার নির্দেশদাতা অন্যান্য আওয়ামী নেতাদের অধিকাংশকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে অন্যায়ভাবে আশ্রয় দেন। যেভাবে শহীদ হলেন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর জুনায়েদ বন্ধুদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিজয় মিছিলে যোগ দেয়। তার সাথে বোন ও ভগ্নীপতিও ছিলেন। বিকেল চারটার দিকে ছাত্র-জনতার মিছিল শহরের বড়গোলা থেকে সাতমাথা এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করলে সদর থানার সামনে পুলিশ ছাত্র-জনতার মিছিল লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশের ছোড়া শটগানের গুলি রাতুলের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্ধ হয়। তাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয় ছোট্ট রাতুল। একটি গুলি বাম চোখের মধ্য দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছররা গুলিবিদ্ধ হয়। রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় রাতুলকে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসকরা তার মগজ থেকে একটি গুলি বের করেন। এক্সরে রিপোর্টে রাতুলের মাথা, চোখসহ শরীরে শতাধিক গুলির সন্ধান পান চিকিৎসকরা। ৩৬টি গুলি অপসারণ করা হয়েছিল। এরপর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কয়েকদিন আগে রাতুলকে ওয়ার্ডের বেডে দেওয়া হয়। রাতুলের বাবা জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, ওয়ার্ডে দেওয়ার পর রাতুল কথা বলেছে, খাওয়াদাওয়াও করেছে। সোমবার ভোর ৪টার দিকে হঠাৎ তার অবস্থার অবনতি ঘটে। ৪৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টার দিকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়। ৯ টায় সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ১ম জানাজা হয় রাতুলের। ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় হাকির মোড় এলাকায়। মঙ্গলবার শহরের নামাজগঞ্জ আঞ্জুমান-ই-গোরস্তানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, রাতুল বেঁচে ফিরলেও চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বেঁচে ফেরা হলো না রাতুলের। সবার ধারণা ছিল অন্তত রাতুলের খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু সে দিনের হত্যার সঙ্গে জড়িত সকল পুলিশ সদস্য বগুড়া থানায় বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালণ করছেন। আত্মীয়দের মন্তব্য বন্ধু মোহাম্মদ বলেন, ‘৫ আগস্ট সকালে নাশতা না করে মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও বোন জেরিন সুলতানা ও ভগ্নিপতি আমির হামজার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যায় রাতুল। একটা সময় মিছিল নিয়ে তারা বগুড়া সদর থানার অদূরে ঝাউতলার কাছে পৌঁছায়। তখন বৈষম্যবিরোধী মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে আহত হয় রাতুল’। রাতুলের বড় বোন জেরিন জানান, ‘আমার পাশেই ছিল রাতুল। হঠাৎ রাতুলের মাথায় চারটি ছররা গুলি লাগে। একটি গুলি রাতুলের বাম চোখের মধ্য দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়। এরপর আরও অসংখ্য গুলি লাগে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায়’। মুদির দোকানি বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, আমার সর্বস্ব বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করেছি। তবুও সন্তানকে ফিরে পেলাম না। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : জুনাইদ ইসলাম রাতুল পেশা : ছাত্র জন্ম তারিখ : ২০১১ পিতা : জিয়াউর রহমান জিয়া মাতা : রোকেয়া বেগম বোন : জেরিন আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ বিকাল ৪.০০ টা এবং ২৩ সেপ্টেম্বর ভোর ৬.০০ টা শাহাদাত বরণের স্থান : বগুড়া থানার সামনে আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : আঞ্জুমান-ই-গোরস্তান, বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : ঘনপাড়া, হাকির মোড়, বগুড়া ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : বগুড়ায় বাড়ি আছে। সন্তানকে চিকিৎসা করাতে যেয়ে বাবা ঋণগ্রস্থ হয়েছেন প্রস্তাবনা ১. ঋণ পরিশোধে সহযোগিতা করা ২. এককালিন সহযোগিতা করাএকনজরে শহীদের পরিচয়

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

বায়েজিদ বোস্তামী

মো: সাকিব আনজুম

মো. মেহেদী হাসান রবিন

মো: রেজাউল হক সরকার

মো: শাওন খান

 মো: সেলিম হোসেন

মো: জাহিদুল ইসলাম

মো: তারিক হোসেন

হাফেজ মো: সিয়াম হোসেন

মো: শিমুল

মোঃ শিহাব আহমেদ

মো: মিনহাজ হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo