জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: পোশাক শ্রমিক শাহাদাতের স্থান : মুগদা মেডিকেল কলেজ
শহীদ পরিচিতি পারবেজ মিয়া (৩০) ছিলেন একজন গার্মেন্টস কর্মী। তার বাবা মৃত খোকন মিয়া ও মাতা কানিজ ফাতেমা। পারবেজের বাবা তার যখন ১০ বছর বয়স তখন ইন্তেকাল করেন। ঘটনার প্রেক্ষাপট কোটা বিরোধী আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত, রাজাকারের নাতি বলে কটাক্ষ করা, গ্রেফতার, নির্যাতন ও গণহত্যার ফলে দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এলে বিভিন্ন থানার পুলিশ যুদ্ধক্ষেত্রের সমস্ত ভয়ংকর অস্ত্র নিয়ে জনতার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে, নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। এক্ষেত্রে যাত্রাবাড়ি থানা ছিল সবচেয়ে এগিয়ে। তারা রাজপথে হত্যার পাশাপাশি ভবনের উপরে থেকে স্নাইপার দিয়ে টার্গেট করে করে হত্যা করতে থাকে। ফলশ্রুতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা একত্রিত হয়ে এ থানায় পাল্টা হামলা চালায়। থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। যাত্রবাড়ীর স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হালিম সাংবাদিকদের জানান, ‘যাত্রাবাড়ী থানার ওপর স্থানীয়দের অনেক ক্ষোভ ছিল। অনেক মানুষ নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রদের ওপর সবচেয়ে বেশি গুলি ছুড়ে হত্যা করেছে তারা। সেজন্যই তাদের ওপর আক্রোশ থেকে এভাবে থানা পুড়িয়েছে সাধারণ মানুষ।‘ এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাজার হাজার জনতা থানা ঘেরাও করে হামলা করে। ওই সময় থানা থেকে ব্যাপক গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হয় তিন শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকে নিহত হয়েছেন। সেখানে ৪-৫ জন পুলিশও মারা যায়। তাদের অনেকের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গত সোমবার বিকেল ৫টার দিকে থানা ঘেরাও করে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে ফেলে আন্দোলনকারীরা। পুলিশের বড় একটি দল ফিল্মি স্টাইলে থানা থেকে বেরিয়ে নির্বিচারে গুলি করতে করতে সামনে এগিয়ে যায়। তখন বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহত হয়েছে। তবে থানায় কয়েকজন পুলিশ আটকা পড়ে। তাদের গণপিটুনি দিয়ে সেখানেই মেরে ফেলা হয়েছে। ঢামেক সূত্রমতে, যাত্রাবাড়ী থেকে ৪০টির বেশি লাশ গিয়েছে ঢামেক হাসপাতালে। যেভাবে শহীদ হলেন পারবেজ মিয়া স্বৈরাচারী সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। নিয়মিত মিছিলে যুক্ত হতেন। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পলায়নের ফলে ছাত্র-জনতা খুশিতে রাজপথে নেমে আসে। তারা ভাবেননি যে তখনও খুনি সরকারের পুলিশ বাহিনী গণহত্যা চালাতে ওতপেতে বসে আছে। আন্দোলনের মধ্যে দুপুরে যাত্রাবাড়ির কাজলা এলাকায় যাওয়ার পরে বুকে গুলিবিদ্ধ হন। মুখ থুবড়ে পড়েন রাস্তায়। সাহায্যকারীদের চেষ্টায় প্রথমে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার পারবেজকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন জানাজা শেষে যাত্রাবাড়ি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার শহীদের বাবা, পারবেজকে এতিম করে দিয়ে ২০ বছর আগে দুনিয়া ত্যাগ করেন। তার মা প্রথমে আত্মীয়দের সাহায্য নিয়ে এবং পরবর্তীতে নিজে কাজ করে সন্তানকে বড় করে তোলেন। পারবেজ মায়ের সাথে কাজে যুক্ত হওয়ার পরে তার মা চাকুরী থেকে অবসর নেয়ার কথা ভাবছিলেন। আত্মীয়ের বক্তব্য শহীদের ভাগ্নে ইয়াসিন ইসলাম নিরব বলেন, মানুষ হিসেবে সৎ ছিলেন। মায়ের প্রতি যত্নশীল ছিলেন। বোনদের ভালোবাসতেন। প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা ২. মায়ের চিকিৎসায় সহযোগিতা করা একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : পারবেজ মিয়া পেশা : পোষাক শ্রমীক জন্ম তারিখ : ১ জানুয়ারি ১৯৯১ পিতা : খোকন মিয়া মাতা : কানিজ ফাতেমা আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : মুগদা মেডিকেল কলেজ আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : যাত্রাবাড়ি কবরস্থানে স্থায়ী ঠিকানা : মাতুয়াইল পশ্চিমপাড়া, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : সামান্য জমি আছে
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা-প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৬৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের জন্য জান্নাতে ৭০ জন আত্মীয়কে সুপারিশ করার অধিকার থাকবে।” (সুনান আবু দাউদ ২৫২০)



