জন্ম তারিখ: ২ অক্টোবর, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: অটো রিকশা চালক শাহাদাতের স্থান : মধ্য বাড্ডা পোষ্ট অফিস গলি, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি হাফিজুল শিকদার ২ অক্টোবর ১৯৯৫ সালে পিতা আবু বকর সিকদার ও মাতা হাবিবা শেফালীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে হাফিজুল শিকদার অটো রিকশা চালাতেন। তার মাসিক আয় ছিল ১৫ হাজার টাকা। হাফিজুল শিকদারের স্ত্রীর নাম আয়েশা বেগম। তার ৩ ও ২ বছর বয়সী ২ টি সন্তান আছে। এছাড়াও স্ত্রী আয়েশা বেগমের গর্ভে ৭ মাস বয়সী সন্তান পৃথিবীতে আগমনের অপেক্ষায় আছে। হাফিজুল শিকদার স্বৈরাচারী সরকারের চাটুকার ও খুনি বাহিনীর দৃষ্টিতে একটি কঠিন অন্যায় কাজ করেছিলেন। তার অন্যায় কাজ হলো যখন আওয়ামী লীগের হামলার মধ্যে প্রাণভয়ে পরিবহন কর্মীরা যার যার গাড়ি নিয়ে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছিলেন তখন হাফিজ তার সিএনজি দিয়ে আহত ও নিহত ছাত্র-জনতাকে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে হাসপাতালে পাঠাতে সাহায্য করছিলেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট আওয়ামীলীগ অবৈধভাবে ৭২ থেকে ৭৫, ৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতায় এসেই দলীয়করণ, লুটপাট, অর্থ পাচার, অবিচার প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানামূখী অন্যায় কাজের বিস্তার ঘটিয়েছে। দেশের মানুষকে জিম্মি করে দেশটাকে অকার্জকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ৭৪ সালে মুজিব এমপি-মন্ত্রীদের লুটপাটের ফলে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছিল। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পরবর্তী বছর গুলোয় অত্যাচারের মাত্রা এতো তীব্র হয় যে সরকারের সমালোচনা করলেই জেল-জুলুম, গুম-খুন শুরু হয়ে যায়। সরকারী দলের অনৈসলামী কাজ, অবিচার, গুম, খুন, নারী নির্যাতন প্রভৃতি কাজের ফলে আলেমদের সমালোচনা সইতে না পেরে শুরু হয় ইসলামী ব্যক্তিদের উপরে ভয়াবহ নির্যাতন। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে শত শত আলেম-মুফাসসিরদের গুম ও কারাবন্দী করতে থাকে। ইতিহাসের ফেরাউন বা নাৎসি বাহিনীর অত্যাচারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এমন অবস্থায় দেশের সচেতন সাধারণ মানুষ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কিছু বলার সুযোগ না পেলেও তাদের মনে ছিল তীব্র ঘৃণা। জনতা সময়ের অপেক্ষায় ছিল। যার দেখা পেল কোটা বিরোধী আন্দোলনে। কোটা পদ্ধতি ২০১৮ সালে আন্দোলনের মুখে বাতিল করেছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে দলীয় কোটাবহাল করে কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা । যা জনমনে ক্ষোভ বাড়াতে থাকে কোটা বাতিল আন্দোলন গনআন্দোলনে রুপ নেয় । ছাত্র জনতার আন্দোলন কোটা বিরোধীতা থেকে পরিণত হয় ৯ দফার আন্দোলনে। এরপরে তা এক দফায় পরিণত হয়। ১ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারা বুঝতে পেরেছিল এ আন্দোলনে সক্রীয়ভাবে আছে জামায়াত ও শিবিরের কর্মীবাহিনী। পুলিশকে নির্দেশ দেয় গণহত্যা চালানোর। ৪ আগস্ট সর্বত্র নিরিস্ত্র ছাত্র-জনতা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। স্বৈরাচারী সরকার এদিন বুঝতে পারে বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার শেখ হাসিনা ও তার ঘৃণিত বাহিনীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। তিনি তাদের দেশ ত্যাগের সুযোগ করে দেন। হাসিনা ও তার সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও আগের নির্দেশনানুযায়ী রাজপথে খুনি পুলিশ জনতার উপরে নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করে। যেভাবে শহীদ হলেন ২০ জুলাই ছাত্র-জনতার প্রতিবাদসভা গুলোতে খুনি হাসিনার পুলিশ মারমুখি হয়। অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ছাত্র হত্যা শুরু করে। ছাত্ররা প্রাণ দিলেও রুখে দাঁড়ায়। হাফিজুল শিকদার ছাত্রদের পক্ষে এগিয়ে আসেন। তিনি আহত ও নিহত ছাত্রদের সহযোগিতা করছিলেন। তার উপস্থিতি খুনি বিজিবির চোখে ধরা পড়ে যায়। ২০ জুলাই বিকাল ৩ টার সময় বিজিবি সরাসরি তাকে গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয়রা তাকে মুগদা মেডিকেলে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার লাশ সংগ্রহ করতে পরিবারকে অনেক হিমশিম খেতে হয়। একেকবার একেক থানায় ধরনা দিতে হয়। রাত গভীর হয়, কিন্তু পুলিশের নিষেধাজ্ঞায় পরিবারকে তার লাশ দেয়া হয়না। পরদিন স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে তার লাশ প্রদান করা হয়। হাফিজুল শিকদারের মৃত্যুর খবর পিরোজপুরে ছড়িয়ে পড়লে তার নিজ বাড়ি ও এলাকায় শোকের মাতম শুরু হয়। পরদিন বাড্ডা নামা পাড়া কবরস্থানে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার হাফিজুলের মৃত্যুর পর চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে তার পরিবার। তার দুই অবুঝ সন্তান ও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার শোকাহত পরিবার। প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা করা ২. সন্তানদের ভরণ-পোষণ ও লেখাপড়ার খরচ প্রদান করা একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : হাফিজুল শিকদার পেশা : অটো রিকশা চালক জন্ম তারিখ ও বয়স : ২ অক্টোবর ১৯৯৫ পিতা : আবু বকর শিকদার মাতা : হাবিবা আক্তার শেফালী স্ত্রী : আয়েশা বেগম আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবার, আনুমানিক সন্ধ্যা ০৩.৩০ টা শাহাদাত বরণের স্থান : মধ্য বাড্ডা পোষ্ট অফিস গলি দাফন করা হয় : বাড্ডা নামা পাড়া কবরস্থান স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম দক্ষিন চরবজুলাতপুর, ৭ নং শেখমাটিয়া, নাজিবপুর, পিরোজপুর বর্তমান ঠিকানা : মধ্য বাড্ডা, শাহাবুদ্দিন মোড়, বাড্ডা, ঢাকা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে বাড়ি নেই, ঢাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন সন্তান : ১) আবদুল আহাদ, বয়স ৩ বছর : ২) আবদুর রহমান, বয়স ২ বছর : ৩) গর্ভে ৭ মাস বয়সী সন্তান আছে