জন্ম তারিখ: ১০ আগস্ট, ১৯৭২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৩১ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: ব্যবসা (তরকারী বিক্রি করতেন) শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ
“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর” শহীদ পরিচিতি বাংলাদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের ভূমিকা ছিল অসামান্য। যাদের প্রাণের বিনিময়ে নিজ মাতৃভূমিকে আমরা হায়েনাদের থেকে দখলমুক্ত করতে পেরেছি তাদেরই একজন শাহিনুর বেগম। জন্ম পরিচয়: শাহিনুর বেগম কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানার নালিতা পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হাকিম ভুঁইয়া ও মাতা সালেহা বেগম। শাহিনুর বেগমের পিতা-মাতা কেউ বেঁচে নেই। দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জননী শাহিনুর বেগমের স্বামী অসুস্থতা ও বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। শাহিনুর বেগমের বর্তমান ঠিকানা ঢাকার শনির আখড়ায়। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ: ২০২৪ সাল। একটি বছর একটি ইতিহাস। স্বাধীন দেশে পরাধীন মানুষের বিজয়ের ইতিহাস। বিপ্লবী তরুণদের হাত ধরে প্রিয় মাতৃভূমি কে স্বৈরাচার মুক্ত করার ইতিহাস। বাংলাদেশ লাভ করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। কোটা আন্দোলন শুরু হয়েছিল ৫ জুন সরকারী নিয়োগে কোটা পদ্ধতি আবার চালু করার মাধ্যমে। শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে তার দলের অদক্ষ, দূর্নীতিবাজ, লম্পট, টোকাই লীগ নামে খ্যাত ছাত্রলীগকে পূনর্বাসন করে দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ১৬ বছর ধরে তিনি দেশটাকে তার নিজস্ব সম্পদের মত করে ব্যবহার করায় ছাত্র-জনতা ক্ষুব্ধ হয়। ফলে মেধাবী ছাত্রদের নেতৃত্বে জুলাই মাস জুড়ে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্রদের আন্দোলন দিনে দিনে জোরদার হওয়ায় জালিম সরকার ১৭ ই জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। সারা দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অচল হয়ে যায়। কিন্তু ছাত্ররা তখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলো। তাদেরকে পুরোপুরি দমন করতে সারাদেশে কারফিউ জারি করে। ঢাকা সহ সারাদেশে তখন পুরোদমে আন্দোলনের বিভিন্ন কার্যক্রম চলছিলো। আন্দোলনের মূল হটস্পট গুলোর মধ্যে যাত্রাবাড়ী এলাকা ছিল অন্যতম। যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় অনেক ছাত্র ও সাধারণ জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে শাহিনুর বেগম ছিলেন একজন। তিনি ২২শে জুলাই সকাল আটটায় হাঁটতে বের হয়েছিলেন। জালিম সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণ পর পুলিশ বাহিনী কিছুটা সরে গেলে এক পথচারী তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যান। কিন্তু সেখানেও চলছিল নির্মম নাটকের দৃশ্য। আহতদের কাউকে সঠিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল না। আহতদের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফাইল রেডি করে ভর্তি হতে হচ্ছিল। শাহিনুর বেগমের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চলছিল গড়িমসি। টাকার অভাবে ও সরকারের বাধার মুখে প্রাইভেট মেডিকেলেও চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। আই সি ইউ তে কোমায় ছিলেন দীর্ঘদিন। প্রায় এক মাস নয় দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন শাহিনুর বেগম। তাঁর মতো হাজারো নিরীহ মানুষের জীবনের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছিল। “দরজা লাগা, আমি হাঁটতে যাচ্ছি” এটাই ছিল শাহিনুর বেগমের শেষ কথা পারিবারিক আর্থিক অবস্থান: অভাবী পরিবারে জন্ম শাহিনুর বেগমের। অভাবের সাথে যুদ্ধ করেই বেড়ে ওঠা। খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় হাফেজ ভুঁইয়ার সাথে। সেখানেও নেই স্বচ্ছলতার ছোঁয়া। তার ওপর স্বামীর অসুস্থতা তো আছেই। সময়ের সাথে সাথে পাঁচ সন্তানের জননী হন তিনি। সন্তানদের অভাবের করাল গ্রাস থেকে বাঁচাতে স্বামীর দিকে চেয়ে না থেকে শুরু করেন তরকারির ব্যবসা। গ্রামে নিজেদের একটা টিনের ঘর আছে, তাও আবার প্রতিবেশীর জায়গায়। তাই সন্তানদের কল্যাণ চিন্তায় ১৪ বছর আগে তিনি পাড়ি জমান কর্মব্যস্ত ঢাকা শহরে। শাহিনুরদের জন্য ঢাকা শহরের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট যেন দিবাস্বপ্ন। তাই তারা ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল ঢাকার শনির আখড়া এলাকায়। তরকারি বিক্রি আর দুই সন্তানের শ্রমিক হিসেবে উপার্জিত সামান্য অর্থই তাদের পথ চলার ভরসা। জীবনের এতগুলো বছর সন্তানদের আগলে রেখে বেঁচে থাকার যুদ্ধটা চালিয়ে গেছেন শাহিনুর বেগম। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার তাবেদারি করা পুলিশ বাহিনীর ঘাতক বুলেট কেড়ে নিয়েছে শাহিনুরের প্রাণ। কেড়ে নিয়েছে মমতাময়ী এক মায়ের আঁচল। শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা ১.নিজস্ব জমিসহ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া ২.ছেলেদের স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করা একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : শাহিনুর বেগম স্বামী : মো: হাবিজ মিয়া বর্তমান ঠিকানা : মজিবর রোড, শনির আখড়া, থানা: যাত্রাবাড়ি, জেলা: ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নালিতাপাড়া, থানা: মেঘনা, জেলা: কুমিল্লা আহত হওয়ার স্থান : কাজলা, শনির আখড়া তারিখ : ২২/০৭/২০২৪ আক্রমনকারী : পুলিশ নিহত হওয়ার স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ তারিখ : ৩১ /০৮/২০২৪ সমাধি : নিজগ্রামে (কুমিল্লা)