জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৮৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: ব্যবসা শাহাদাতের স্থান : মুগদা মেডিকেল কলেজ
শহীদ পরিচিতি শামছুল ইসলাম (৪০) একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি গার্মেন্টস আইটেম পাইকারী দরে কিনে ঢাকার বঙ্গবাজারে সরবরাহ করতেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে পিতা হাবিবুল্লাহ ও মাতা জাহানারা বেগমের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন। শামসুল ইসলাম ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করেন। তার আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। দেশ থেকে ফেরাউন সরকার পালিয়েছে। নতুন করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যেভাবে শহীদ হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার দলীয় কর্মীদের নিষ্ঠুরতা শিখিয়েছে। কিংবা নিষ্ঠুর-জালিমেরা এদলে যুক্ত হয়ে নানারকম অপরাধ ১৬ বছর ধরে করেছে। আইনের শাসন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সাধারণ মানুষ তাদের আচরণে সহ্যের সীমা পার করে যখন মুক্তির উপায় খুঁজছিল তখন সাধারণ ছাত্ররা শুরু করে দেয় কোটা প্রথার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে তার সন্ত্রাসী ও চাটুকার দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়। ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া কোটা পদ্ধতি আবার চালু হচ্ছে জেনে ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে দেয়। হাসিনা প্রশাসন পূর্বে অসংখ্য বিক্ষোভ দমন করেছিল বিধায় এই আন্দোলনকেও সাধারণভাবে নেয়। সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পেটানো হয়। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে মারধর করে। আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিতর্কিত সন্ত্রাসী ও ধর্ষকদের সংগঠন ছাত্রলীগ সর্বত্র ঘৃণিত পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছাত্র-জনতার উপরে হামলা চালাতে থাকে। ঘরে, মেসে, হলে গভীর রাতে হামলা চালিয়ে আটক ও মারধর করে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। সকল স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে। এতে করে বাংলাদেশের মানুষ ক্ষেপে যায়। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি প্রবাসীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। অনলাইন আলোচক ডাক্তার পিনাকী প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে নিষেধ করে। এসময় এমনিতেই লুটপাট, অর্থ পাচার ও রিজার্ভ থেকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে ফেলায় সরকার অর্থ সংকটে পড়েছিল। চীন সফরে গিয়ে কোন অর্থ সহযোগিতা না পেয়ে ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসে খুনি হাসিনা। দেশে ফিরে ন্যায়ের পক্ষে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি আখ্যা দেয়ায় সেরাতেই সারাদেশে সরকার বিরোধী মিছিল শুরু হয়। ছাত্ররা স্লোগান দেয়- তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার! কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার! দেশের মানুষ ছাত্রদের কাতারে এসে দাঁড়ায়। আওয়ামীলীগের রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী বলে গালি তখন আর কেউ গায়ে মাখে না। সবাই বুঝে গেছে, অধিকার আদায়ের কথা বললে তাকে রাজাকার গালি খেতে হবে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে পুলিশ ঘাতকের ভূমিকা নেয়। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত হাজারে হাজারে ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে ছাত্র-জনতাকে জামায়াত-শিবির আখ্যা দিয়ে ভয়ানক গণহত্যার পরিকল্পনা নেয়। ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ করে এবং ৫ আগস্ট ঢাকামুখী লং মার্চের আহ্বান জানায়। শামছুল ইসলাম ছিলেন একজন সচেতন দেশপ্রেমিক তিনি দেশদ্রোহী সংগঠন আওয়ামী লীগের অত্যাচার নিপীড়নের সাথে পরিচিত ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন মুক্তির। দেশকে আরেকবার মুক্ত করার সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। জুলাইয়ের উত্তপ্ত দিন গুলোতে তিনি ছাত্রদের পাশে ছিলেন। মিছিলে যুক্ত হতেন। ৫ আগস্ট সকালে ঢাকা মুখী লংমার্চে অংশ নিতে রাজপথে নেমে আসেন। ঐ সময় খুনি হাসিনার নির্দেশ ছিল জনতার উপরে গুলি বর্ষণের। সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ থেকে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ ও বিজিবি হাসিনার আদেশ পালন করতে পাখির মাতো করে মানুষ হত্যা করতে থাকে। শামছুল ইসলাম ১০ টা ৩০ মিনিটে শনির আখড়ার বাঁশপট্টি বাজারের কাছে তলপেটে গুলিবিদ্ধ হন। প্রথমে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরদিন সকাল ৭.৩০ মিনিটে ডাক্তার শামছুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। লক্ষ্মীপুরের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার শহীদের বাবা মৃত, মা জাহানারা বেগমের বয়স ৭০ বছর। শামছুল ইসলাম ১৭ লক্ষ টাকা ঋণ করে মালিবাগে দোকান দিয়েছিলেন। তার নিজের গ্রামে সামান্য জমি আছে। শামছুল ইসলামের স্ত্রীর নাম উম্মে সালমা। তিনি গৃহিণী। তার বড় কন্যা সাদিয়ার বয়স ১১ বছর। সে ফ্রেন্ডস স্কলারশীপ ইনস্টিটিউটে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে ইকরামের বয়স ৮ বছর। ইকরাম ‘জামেয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসায়’ ২য় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে আরাফের বয়স ১৮ মাস। বর্তমানে তার পরিবারে কোন আয় নেই। আত্মীয়ের বক্তব্য শহীদের শ্যালক সাইফুল বলেন, আমি আজ ব্যাথিত। তিনি আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। আমার খুব কাছের মানুষ ছিল। ভাইয়ের ঋণগুলো কিভাবে পরিশোধ হবে তা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত। প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা ২. সন্তানদের ভরণ-পোষণ ও লেখাপড়ার খরচ প্রদান করা ৩. মায়ের চিকিৎসায় সহযোগিতা করা একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : শামছুল ইসলাম পেশা : ব্যবসায়ী জন্ম তারিখ : ১ জানুয়ারি ১৯৮৩ পিতা : হাবিব উল্লা মাতা : জাহানারা বেগম আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ৬ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : মুগদা মেডিকেল কলেজ আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর স্থায়ী ঠিকানা : মতিন পাটোয়ারি বাড়ি, দক্ষিন রায়শ্রীরামপুর, ৪১ নং রায়শ্রীরামপুর, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : সামান্য জমি আছে