Image of মো: সোহাগ

নাম: মো: সোহাগ

জন্ম তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসা শাহাদাতের স্থান : বংশাল নতুন চৌরাস্তা

শহীদের জীবনী

জন্ম ও পরিচিতি মো: সোহাগ ঢাকা বংশালে একমাত্র স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি ব্যবসা করতেন। সেলাই মেশিনের টেবিলের ব্যাবসা ছিল তার। তিনি নিজে স্বল্পশিক্ষিত হলেও নিজের স্ত্রীকে মাস্টার্স পাস করিয়েছিলেন। যাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে মো: সোহাগ তাদের অন্যতম ছিলেন। যেভাবে শহীদ হলেন শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে নিজের দলের সন্ত্রাসী ও চাটুকারদের সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দেয়া শুরু করে। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে জায়েজ করতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে বেছে নেয়। ২০১৮ সালে ছাত্র আন্দোলনের মুখে বাতিল হওয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে আবার ২০২৪ সালের ৫ জুলাই ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর স্মারকলিপি দেয়। ৯ জুলাই কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তারা। কোটা বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শুনানি হয়নি। ১২ জুলাই শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। ১৩ জুলাই তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে সরকারের এখন কিছু করার নেই। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আন্দোলনকারীরা সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয়। শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে রাত নয়টার দিকে ঢাবির বিভিন্ন হলে শ্লোগান ওঠে, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার!’ লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল খুনি হাসিনার তাবেদারী করে ছাত্রদের দোষারোপ করেন। যার ফলে ছাত্র-জনতা জাফর ইকবালকে বয়কট করা শুরু করে। সমস্ত প্রকাশনী একে একে জাফর ইকবালের বই তাদের প্রকাশনী থেকে বাজেয়াপ্ত করার এবং ভবিষ্যতে প্রকাশ না করার ঘোষণা দেয়। জাফর ইকবালকে অতীত থেকে আওয়ামী লীগের দালালী করার কারণে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে ছাত্ররা। ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনকারীদের 'রাজাকার' স্লোগানের জবাব ছাত্রলীগই দেবে। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম মন্তব্য করে, যাঁরা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাঁদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বো। ১৬ জুলাই বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদের ডাকা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ছাত্রলীগের গুন্ডারা হামলা চালায় এবং পুলিশের গুলিতে রংপুরে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুক ও ঢাকায় সবুজ আলী ও শাহজাহান শাহাদাতবরণ করেন। ১৭ জুলাই ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিতাড়ন করে 'রাজনীতিমুক্ত' ঘোষণা করে সাধারণ ছাত্ররা। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পন্ড হয়ে যায়। ১৮ ও ১৯ জুলাই ছাত্রদের ঘোষণা অনুসারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হয়। সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলে অস্ত্রধারী ছাত্রলীগের গুন্ডা ও পুলিশের হামলায় ব্যপক আহত ও প্রাণহানী ঘটে। ১৮ জুলাই ৪০ জন এবং ১৯ জুলাই কয়েকশত ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। শুরু হয় দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন। সাধারণ ছুটি ঘোষণা। পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে মোট ৭১ জন শাহদাতবরণ করেন। প্রতিদিন কেউ না কেউ লীগের বাহিনীর হাতে আটক, আহত বা নিহত হতে থাকে। অবৈধ সরকার কয়েক হাজার মামলা দিয়ে গণগ্রেফতার শুরু করে। ২৭ জুলাই পত্রিকার ভাষ্যমতে ১১ দিনে গ্রেপ্তার ৯ হাজার ১২১ জন। আতঙ্কে মানুষ ঘরছাড়া হতে থাকে। সপ্তাহ ধরে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করার কারণে দেশবাসী আতংকের মধ্যে দিন কাটাতে থাকে। শেখ হাসিনা গনহত্যা চালানোর প্রস্তুতি নেয়। ১৪ দলের মিটিং-এ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। তার ইচ্ছা জামায়াত শিবির অভিযোগ তুলে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে আন্দোলন চিরতরে দমন করা যা শেখ হাসিনা ১৬ বছর ধরে করে গেছেন। ছাত্র-জনতার প্রতিবাদী রুপ প্রকাশ পায় তাদের ফেইসবুক প্রোফাইল লাল করার মাধ্যমে। ১ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ভারত নিয়ন্ত্রিত হাসিনা সরকার। জনতা বুঝতে পারে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য। ৪ আগস্ট রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলে আবারো হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদিন পুলিশের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের গুলি করে। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্র ইট পাটকেল দিয়ে সন্ত্রাসী ও হানাদার পুলিশ বিজিবিকে প্রতিরোধ করে। কয়েকটি স্থানে সেনাবাহিনীও গুলি করে। সারাদেশে ১৩০ জন খুন হন। পরদিন ঢাকামুখী লং-মার্চের কর্মসূচি দেয় ছাত্র-জনতা। ৫ আগস্ট সকাল থেকেই ব্যাপক মারমুখী অবস্থান নেয় পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। সারা ঢাকা শহরে খন্ড খন্ড যুদ্ধ শুরু হয় ছাত্র-জনতার সাথে। সকাল সাড়ে দশটার পর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হাসিনা পালিয়ে যায়। কর্মরত পুলিশরা এই খবর না জানায় তারা জনতার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অনেক মানুষকে তারা খুন করতে থাকে। দুপুর ১ টায় মানুষ জেনে যায়, হাসিনা পালিয়ে গেছে। চরম আনন্দে সারাদেশে গলিতে গলিতে মিস্টি বিতরণ ও ঈদ মোবারক বলে কোলাকুলি করতে থাকে মানুষ। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকে। দেশে বিভিন্ন মোড়ে থাকা স্বৈরাচার মুজিবের সকল মুর্তি ভেঙ্গে দেয় আন্দোলনকারী ছাত্রজনতা। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় ও আত্মগোপন করে। অল্প সংখ্যক ছাত্রজনতার রোষাণলে পড়ে আহত ও নিহত হয়। রাজধানীতে জনতা সংসদ ও গণভবনে হাজির হয়ে শোকরানা নামাজ আদায় করে। মো: সোহাগ ও তার পরিবার স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন। ৫ আগস্ট দুপুরবেলা শেখ হাসিনা দেশ থেকে ভারতে পালিয়ে গিয়েছে শুনে আনন্দ মিছিলে যোগ দেন। মো: সোহাগ জনতার সাথে যুক্ত হয়ে গণভবন দখল নিতে যান। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে পরিবারকে সময় দেন। এশারের নামাজ শেষে আবার বাইরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হন। বংশাল নতুন চৌরাস্তায় গন্ডগোলের আভাষ পেয়ে দেখতে যান। স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক বাহিনী তখনো জনতার উপরে গুলি চালানোর সাহস করবে এটা তিনি মোটেই ভাবতে পারেননি। গন্ডগোল দেখতে গিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুকের ডানপাশে গুলিবিদ্ধ হন। তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে এই তরুণের। পরদিন বংশাল পঞ্চায়েত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কেমন আছে তার পরিবার নাবিদ শেহরান মো: সোহাগের চার বছর বয়সী সন্তান। তার ও মেধাবী স্ত্রী সাবিনা আক্তার রিমা সম্প্রতি মাস্টার্স পাস করেছেন। শহীদের বাবা মৃত গোলাম মোহাম্মদ ও মা সামিনা খাতুন। স্বামীর মৃত্যুর পরে স্ত্রী সাবিনা আক্তার রিমা তার মায়ের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। স্বামীর ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ঋণ থাকায় তার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন স্ত্রী। প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান এবং স্ত্রীকে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেয়া ২. সন্তানের লেখা-পড়ায় সহযোগিতা প্রদান করা একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : মো: সোহাগ পেশা : ব্যবসা পিতা : মৃত গোলাম মোহাম্মদ মাতা : সামিনা খাতুন আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : বংশাল নতুন চৌরাস্তা আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : বংশাল পঞ্চায়েত কবরস্থানে বর্তমান ঠিকানা : ১৮ নং বংশাল, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : ঐ ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : কোন সম্পদ নেই

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সোহাগ
Image of মো: সোহাগ
Image of মো: সোহাগ
Image of মো: সোহাগ
Image of মো: সোহাগ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মাসুদুর রহমান জনি

রমিজ উদ্দিন আহমেদ

মো: জসিম

মো: ইউসুফ মিয়া

লিটন হাসান লালু

মারুফ হোসেন

মোঃ আব্দুল্লাহ কবির

এস. এম সারফুউদ্দিন

জসিম

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ

বাবুল হাওলাদার

মো: রায়হান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo