Image of মো: রুবেল ইসলাম

নাম: মো: রুবেল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ৭ জুলাই, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, কারখানা শ্রমিক শাহাদাতের স্থান : কলেজগেট সংলগ্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা

শহীদের জীবনী

“এক হয়ে সব শ্রমিক কিষাণ ওড়ায় যাদের বিজয় নিশান ইতিহাসের সোনার পাতায় ওরা ই আগে গন্য” শহীদ পরিচিতি মো: রুবেল ইসলাম,প্রাণবন্ত এক কিশোর, যেন এক টুকরো বাংলাদেশ, যিনি জীবন দিয়ে গেছেন দেশের জন্য। নীলফামারি জেলার সদর থানার ২ নং গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোপাচান্ডা গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। রিক্সাচালক পিতা মো: রফিকুল ইসলাম ও মাতা মিনি বেগমের চতুর্থ সন্তান রুবেল ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন তিনি। অসৎ সংগ ত্যাগ করে নিজেকে সৎ রাখার চেষ্টায় তিনি ছিলেন দৃঢ়। বড়দের প্রতি ছিলেন খুবই শ্রদ্ধাশীল, আর পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ: দেশে তখন চলছে তুমুল আন্দোলন, চারদিকে শুধু গোলাগুলির শব্দ, আর্তনাদ ও হাহাকার। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার অবস্থা ছিলো সবচেয়ে বেশি বেগতিক। এই সংকট কালেও পেটের দায়ে কাজে যেতে হয়েছিলো সাধারণ দিনমজুর ও শ্রমিকদের। কাজে না গেলে যে তাদের দিকে চেয়ে থাকা করুন মুখগুলোকে সান্ত্বনা দেয়ার অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তাই রোজকার মতো ৫ ই আগস্ট ২০২৪ তারিখে কাজে গিয়েছিলেন রুবেল ইসলাম। কাজ থেকে বাসায় ফিরেন বিকেল চারটার কিছু আগে। খাবার শেষ করে কিছুটা বিশ্রাম নেন তিনি। এদিকে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কেও ছিলেন সদা সজাগ। স্বৈরাচার পতনের খবর তখন পৌঁছে গিয়েছিলো দেশের প্রতিটি তপ্ত হৃদয়ে। রুবেলও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাই ৪ টার একটু পরেই তিনি বের হয়ে শামিল হয়েছিলেন আনন্দ মিছিলে। আদাবর থানার সামনে তখন লোকে লোকারণ্য হয়েছিলো আনন্দমিছিল। বিজয়োল্লাসের সেই মুহুর্তে পুলিশ ও ছাত্রলীগ একসাথে গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হন রুবেল। গুলি তাঁর ডান পাঁজর দিয়ে ঢুকে বাম পাঁজর দিয়ে বের হয়ে যায়। উপস্থিত লোকজন তাকে নিকটস্থ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করান এবং তার অপারেশন হয়। হাসপাতালগুলোতেও তখন চলছিলো নৃশংসতা। আন্দোলনকারী কাউকে সেবা দিতে নারাজ ছিলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিংবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছিলো। লাশগুলোকে স্বজনদের কাছে দেয়ার বদলে মর্গগুলোকে ভর্তি করছিলো উর্ধ¦তন কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বেওয়ারিশ লাশ দাফন, লাশ নিশ্চিহ্ন কিংবা পুড়িয়ে ফেলার পাঁয়তারাও চলছিলো। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে আইসিউ ফাঁকা না থাকায় রুবেলকে নেয়া হয়েছিলো পার্শ্ববর্তী একটি ক্লিনিকে। ৩ দিন লড়েছিলেন মৃত্যুর সাথে। অবশেষে ৭ আগস্ট আনুমানিক রাত ৮ টায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন। পরের দিন জানাজা শেষে তার নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। সেই সাথে দাফন করা হয় একমুঠো সোনালি স্বপ্ন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা রুবেলের বাবার নেই কোন নিজস্ব চাষের জমি, ঘর করার মতো এক টুকরো জমিও ছিলো না তাদের। অন্যের জায়গায় ঘর করে থাকতেন সেখানে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে তাদের জীবন যখন জর্জরিত, তখন তা আরও তীব্র হয়ে উঠেছিলো ঋনের দায়ে। বড় তিন বোনকে বিয়ে দিতে হয়েছিলো ধার-দেনা করে। সেই ধার দেনা পরিশোধ এবং দুই ছেলের জন্য কিছু করার আশায় রুবেলের পিতা পাড়ি জমান ঢাকা শহরে। মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পের পাশে একটি বাসা ভাড়া করেন। নিজে রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতেন। আর তার সহধর্মিণী প্রিয় স্বামীকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে করতেন ঝি এর কাজ। বাবা মার এই দুরবস্থা ভাবিয়ে তোলে রুবেলকে। একদিকে পড়ালেখা করার ইচ্ছা,অপরদিকে দারিদ্র্যের করাল থাবা রুবেলকে বাধ্য করে কারখানার কাজ নিতে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি শ্রমিক হিসেবে কাজ নিয়েছিলেন কারখানায়। ছোট ভাইকে ভর্তি করিয়েছেন হাফেজি মাদ্রাসায়। সবাই মিলে টাকা জোগাড় করে ঋণ শোধ করবেন এবং এক টুকরো জমি কিনে নিজের মাথা গোঁজার আশ্রয় হিসেবে একটি ঘর বানাবেন। সেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন পুরো পরিবার। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি হলো রুবেলের মৃত্যুর খবরে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে থাকাকালীন খরচ হয় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা, যার মধ্যে প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার টাকার যোগান দিতে হয়েছে রুবেলের পিতাকে। পুরাতন ঋনের বোঝার সাথে যুক্ত হলো আরও ঋণ। হতদরিদ্র পিতামাতা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভরসার জায়গা রুবেলকে হারিয়ে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুদের অনুভূতি যে ছেলে এত অল্প বয়সেই হাল ধরেছিলো, সেই ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে রুবেলের পিতামাতা। প্রিয় ভাইকে হারিয়ে ফেলার শোকে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে রুবেলের ভাই বোনেরা। এ শোক যেন কিছুতেই কাটিয়ে ওঠা যায় না। শহিদের চাচা বলেন, সে এমন ভদ্র ছিল যে তার বড় কাউকে সামনে দেখলে রাস্তা থেকে নেমে পাশ দিয়ে যেত। আমাদেরকে অনেক শ্রদ্ধা করতো। চাচী বলেন, আমাদেরকে মায়ের মত সম্মান করতো। কোন ধরনের নেশা ছিল না। বাজে কোনো ছেলের সাথে মিশতনা। খুবই ভালো ছেলে ছিলো। সে এত ভাল ছিলো যে, এই জন্য মনে হয় আল্লাহ তাঁকে তাড়াতাড়ি নিয়ে গেলো। শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা ১.বাসস্থান প্রয়োজন ২.ছোট ভাইয়ের পড়াশোনায় সহযোগিতা করা প্রয়োজন ৩.বাবার জন্য কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে একনজরে শহীদের পরিচয় পুরো নাম : মো: রুবেল ইসলাম পিতা : মো: রফিকুল ইসলাম মাতা : মিনি বেগম ঠিকানা : গ্রাম: ধোপাচান্ডা, ইউনিয়ন: ২ নং গোড়গ্রাম, থানা: নীলফামারী সদর, জেলা: নীলফামারী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৬ ১. পিতা : মো: রফিকুল ইসলাম ভাই-বোনদের বিবরণ : রুপসানা বেগম (বয়স-৩০, বিবাহিতা) : রুনা বেগম (বয়স-২৫, বিবাহিতা) : পিংকি (বয়স-২০, বিবাহিতা) : রনি (বয়স-১২, হিফজ) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : আদাবর থানার সামনে, ০৫/০৮/২০২৪ বিকেল ৪ টা আক্রমণকারী : পুলিশ ও ছাত্রলীগ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ৭ আগস্ট আনুমানিক রাত ৮টায় সমাধি : নিজ গ্রামে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রুবেল ইসলাম
Image of মো: রুবেল ইসলাম
Image of মো: রুবেল ইসলাম
Image of মো: রুবেল ইসলাম
Image of মো: রুবেল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সাজ্জাদ হোসেন

লাবলু মিয়া

মো: আজিজুল ইসলাম

মো: শাহিনুর আলম

মো: রাশেদুল হক

মো: ছমেছ উদ্দিন

মো: গোলাম রব্বানী

মো: নুর আলম

মো: রাকিবুল হাসান রকি

মো: সুজন হোসেন

মো: জোবায়ের হোসেন

মো: রায়হানুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo