জন্ম তারিখ: ২১ জুন, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: ছাত্র, কওমি মাদ্রাসা শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শহীদ পরিচিতি চার ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট এবং আদরের ছেলে রুবাইদুজ্জামান। তিনি সাত বছর বয়সে বাবাকে হারান। তারপর তার মা অন্যত্র বিয়ে করেন। দুই বছর বয়স থেকে রুবাইদ পালিত হন মামার কাছে। বর্তমানে জন্ম সনদে তিনিই পিতা হিসেবে পরিচিত। রুবাইদুজ্জামান ২০০৬ সালের ২১ শে জুন নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ থানার রণচন্ডী ইউনিয়নের সোনাকুড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ: ৪ আগস্ট ২০২৪ সালের ঘটনা, সারা দেশে চলছে কমপ্লিট শাটডাউন। জুলাইয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন তখন রূপ নিয়েছিল সরকার পতনের আন্দোলনে। ১৬ বছরের নির্যাতন নিষ্পেষণের জিঞ্জির ভেঙে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে ১৮ কোটি জনতা। ছাত্র জনতার এই ঐক্য অবৈধ সরকারের ভীত নাড়িয়ে দেয়। কম্পন ধরায় ফ্যাসিবাদ সরকারের অন্তরে। তাই দিশেহারা হয়ে নির্বিচারে পাখির মত গুলি করে মারতে থাকে ছাত্র-জনতাকে। বিনা কারণে গ্রেফতার করে এবং নির্বিচারে আটকে রাখে হাজার হাজার নিরীহ ছাত্র-জনতা। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি কোমলমতি শিশু কিশোররাও। এই আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে যোগ দেয় সাধারণ দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক, ভ্যানচালকসহ সর্বস্তরের জনগণ। সেদিন বৃহস্পতিবার, আন্দোলনের কারণে কারখানা ছুটি হয় অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেকটা আগে। তাই সুযোগ পেয়ে আন্দোলনে যোগ দেন রুবাইদুজ্জামান। মুক্তির নেশায় ছুটে যান মিছিলে। আশুলিয়া থানার সামনে যেতেই পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বাধা প্রদান করে ও এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে একটি গুলি রুবাইদের ডান পাঁজর ভেদ করে বের হয়ে যায় অপর পাশ দিয়ে। তৎক্ষণাৎ বাইপাইল নারী ও শিশু হাসপাতালে পাঠানো হলে তারা কোন চিকিৎসা না দিয়ে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর এক নির্মম বাস্তবতার শিকার হয় রুবাইদুজ্জামানের পরিবার। চারদিকে শুধু আহত মানুষের হাহাকার। ৪ আগস্ট বিকেলে রুবাইদুজ্জামানকে হাসপাতালে নেয়া হলেও তাকে ভর্তি করায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার জায়গা হয় ঢাকা মেডিকেলের ফ্লোরে। সেখানে শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা পান তিনি। তাছাড়া অন্য কোন ধরনের কোন চিকিৎসা তিনি পাননি। সারারাত সেখানেই পড়ে থাকেন। পরদিন সকাল ১১ টায় কোন এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি ভর্তির সুযোগ পান। ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে তার অপারেশন হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রুবাইদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এছাড়া অনেকগুলি নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ডাক্তার ও আশঙ্কা মুক্ত হতে পারছিলেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে দিতে পারছিলেন না সঠিক চিকিৎসাও। অবশেষে ৫ই আগস্ট রাত আড়াইটায় তিনি মারা যান সঠিক চিকিৎসার অভাবে। শাহাদাতের প্রমাণ হিসেবে সাথে নিয়ে যান তাজা ক্ষতের চিহ্ন। যে মুক্তির নেশায় তিনি আন্দোলনে অংশ নেন সেই নেশাই তাকে চির মুক্তির পথ করে দেয়। পরেরদিন সকালে সেখান থেকে এম্বুলেন্সে করে তার লাশ নেয়া হয় নিজ গ্রামে। ৬ আগস্ট বাদ আছর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয় তাদের পারিবারিক কবরস্থান। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থান রুবাইদুজ্জামানের চার ভাই বোনসহ ৬ জনের পরিবার ছিল। সাত বছর বয়সে তার বাবা মারা যান কিন্তু কোন বাসস্থান কিংবা কোন জমিজমা রেখে যান নি। তার মা অন্যত্র বিয়ে করেন। দুই বছর বয়স থেকে পালিত হন মামার কাছে। সেখানেও নেই সচ্ছলতার ছোঁয়া। পালিত বাবাও খুবই দরিদ্র। স্থানীয় মাদ্রাসায় হাফেজি পড়িয়ে ও মাঝে মাঝে ভ্যান চালিয়ে তার দুই সন্তানসহ রুবাইদের দেখাশোনা করতেন। রুবাইদ ছিলেন কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। তার দুই ভাই সরকারি বাঁধ ও রাস্তার ধারে বসবাস করে। বর্তমানে তারা ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরিবার চালান এবং বোনেরা বিবাহিত। এই পরিবারটির সকলেই হত দরিদ্র শ্রেণীর। রুবাইদের আশা ছিল পুরো পরিবারের হাল ধরবেন। সেই আশায় নিহত হওয়ার মাত্র একমাস আগে আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় সিএস হার্ডওয়ার লিমিটেডে কাজ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের হাল ধরা আর হলো না। পথ ধরলেন অনন্ত যাত্রার। শহীদ সম্পর্কে নিকট আত্মীয়ের অনুভূতি বা বক্তব্য : শহীদের নানি বলেন, এরকম ছেলে আর কারো হবে না। শহীদের মামী বলেন, আমার বিয়ের পর এসে দেখি সে এখানে থাকে। আমাকে মায়ের মত মনে করত। আমিও তাকে ছেলের মত মনে করতাম। সব সুখ দুঃখের ঠিকানা ছিল সে। অনেক এবাদত করত এবং আমাকে বুঝাতো মামাসহ একসাথে আন্দোলনে যাব। মানুষ এত ভালো হয় আমি আর কাউকে দেখিনি। আগামীবার টাকা কামাই করে কুরবানী দিবে বলেছিল। শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা : ১.নিজের ভাইদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া ২.পালিত ভাইদের পড়ালেখার খরচ চালানো ৩.পালিত বাবাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয়া একনজরে শহীদের পরিচয় পুরো নাম : রুবাইদুজ্জামান রেজওয়ান নাইম জন্ম তারিখ : ২১/০৬/২০০৬ পিতার নাম : মো: আনিসুর রহমান মাতার নাম : রোকসানা বেগম ঠিকানা : গ্রাম: সোনাকুড়ি, ইউনিয়ন: রণচণ্ডী, থানা: কিশোরগঞ্জ, জেলা: নীলফামারী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৬ আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : জামগড়া, আশুলিয়া, ৪ আগস্ট, ২০২৪ আক্রমণকারী : পুলিশ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : ৫ আগস্ট, ২০২৪, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমাধি : নিজ গ্রামে
যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদের জন্য রয়েছে মহান পুরস্কার। (সুরা মুহাম্মদ ৪৭:৪)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৯)


