Image of রমজান আলী

নাম: রমজান আলী

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ০০০১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: চাকুরী, শাহাদাতের স্থান : বেটার লাইফ হসপিটাল, ওমর আলী লেন, রামপুরা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

নেত্রকোণা সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের নন্দীপুর গ্রামের লিটন মিয়া ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে রমজান মিয়া বড়। জীবিকার তাগিদে তিনি ঢাকার আকিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। একমাত্র কর্মক্ষম সন্তান রমজানকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। নীরব নিস্তব্ধ শহীদ রমজান আলীর বাড়ি। আদুরে ছেলের কথা মনে পড়তেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন তার মা মনোয়ারা বেগম। স্ত্রীর কান্না দেখে নিজের চোখের জল লুকিয়ে রাখতে পারেননি রমজানের বাবা লিটন মিয়াও। ঘটনার বিবরণ শহীদ রমজান আলীর বাবা সন্তানের শাহাদাতের ঘটনা বর্ণনা করতে জানান, শুনেছি আমার ছেলের গায়ে সাড়ে ৯টার দিকে গুলি লেগেছে। রামপুরার ওমর আলী লেন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। বাসা থেকে বের হয়ে রামপুরা এলাকায় ‘বেটার লাইফ হসপিটাল’ এর সামনে সে গুলি খেয়েছে। কিছুক্ষণ পর রমজানের খালু ফোন দিলে আমি জানতে চাই কোথায় গুলি লেগেছে? তখন সে বলে আমি জানি না, হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আবার আধা ঘণ্টা পর ফোন দিয়ে জানায় আপনার ছেলে মারা গেছে। কোথায় গুলি লেগেছে জিজ্ঞেস করার পর জানায় গলায় গুলি লেগেছে। আমি এবং আমার স্ত্রী যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলাম, এই সংবাদ শোনার পর আমরা দুজনই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। শহীদের মরদেহ নিয়ে ভোগান্তি শহীদ রমজান আলীর বাবা লিটন মিয়া জানান, ছেলের লাশটা আনতে গিয়ে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। লাশ আনতে গিয়ে অনেক দৌড়াদৌড়ি করার পর ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে ছেলের মরদেহ আনতে পেরেছি। জানাজা ও দাফন পরবর্তীতে রাত ১২টার দিকে শহীদ রমজান আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। পারিবারিক অবস্থা শহীদ রমজান আলী আকিজ কোম্পানিতে সেলস বিভাগে চাকরি করতেন। তিনি ভালো অবস্থানে ছিলেন। প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচের জন্য বাবাকে দিতেন। সংসারের খরচ, তার ছোট দুই ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ সবকিছু চলত এই টাকা দিয়ে। রমজানের অবর্তমানে সংসারের খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শহীদ সম্পর্কিত বক্তব্য সর্বশেষ ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টার দিকে ছেলে রমজানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মনোয়ারা বেগম। তখন রমজান তার মাকে বলেছিলেন, সোমবার টাকা পাঠাবো। টাকা পাঠানো হলে আমাদের যে ঋণের টাকা দেওয়া লাগবে সেটা দিয়ে দিবা। বাকি টাকা দিয়ে সংসারের খরচ করবা। আর এখান থেকে এক হাজার টাকার ওষুধ আনবা তোমার নিজের জন্য। ওইদিন বিকেল ৫টায় তার ছোট ভাই শাহীনকে ফোন দিয়ে রমজান বলেছিলেন, কোনো মিটিং-মিছিলে যেন সে না যায় এবং এটাও বলেন যে, আমরা গরিবের সন্তান আমরা কেন রাস্তায় পড়ে মারা যাব? মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলেটা বৃহস্পতিবার বিকেলে তার ছোট ভাইকে সাবধান করলো, আর শুক্রবার সকালে আমার ছেলে রাস্তায় পড়ে মারা গেল। সন্তান হত্যার বিচার চান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কার কাছে বিচার চাইব? আর কার বিরুদ্ধে মামলা করব? আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে নাকি অন্য কারো গুলিতে মারা গেছে আমি এটাও তো জানি না। তাহলে আমি কার বিরুদ্ধে মামলা করব? আমি চাই না কারো সাথে কোনো ধরনের মামলায় জড়াতে। সরকার যদি দয়া করে আমাকে একটু সহযোগিতা করে, আমার এই ছোট ছেলেটার একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে হয়তো একটু ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারব। রমজানের দাদি আছেন মানু বলেন, লাশটা আনার পর আমার ভাইয়ের মুখটা যখন হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলাম, তখন খুব নরম লাগছে। আমি বারবার তার আঘাতের জায়গাটা দেখতে চাইলাম, কিন্তু কেউ আমাকে একবারের জন্য গুলিবিদ্ধ জায়গাটা দেখতে দেয় নাই। সবাই বলে তুমি এটা দেখলে মারা যাবে, এসব বলে আমাকে দেখতে দেয়নি। রমজানের কলেজ পড়ুয়া ছোট ভাই শাহীন বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। বন্ধুর মত সম্পর্ক ছিল। সে আমাকে খুব আদর করত, ভাইকে সব সময় খুব বেশি মনে পড়ে। এটার জন্য আমার খুব খারাপ লাগে, কষ্ট লাগে। ভাই না থাকায় আমরা খুব কষ্টে সময় পার করতেছি। ভাই নাই এটা মানতেই পারি না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোণার সদ্যবিদায়ী পুলিশ সুপার মো: ফয়েজ আহমেদ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকায় এবং তার আশেপাশে যারা মারা গিয়েছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রস্তাবনা ১। শহীদ পরিবারের নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। শহীদ রমজান আলীর পড়ুয়া ছোট ভাই-বোনের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ নিশ্চিত করা। ৩। পাশাপাশি শহীদের ছোট ভাইয়ের চাকরির ব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : রমজান আলী পেশা : চাকরি প্রতিষ্ঠান : আকিজ গ্রুপ স্থায়ী ঠিকানা, গ্রাম : নন্দীপুর, ইউনিয়ন: মদনপুর, জেলা: নেত্রকোণা সদর পরিবারের তথ্য পিতা : লিটন মিয়া মাতা : মনোয়ারা বেগম ভাই-বোন : ২ ঘটনার স্থান : বেটার লাইফ হসপিটাল, ওমর আলী লেন, রামপুরা, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, সকাল ৯টা আঘাতের ধরন : গলায় গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : নিজ গ্রাম

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of রমজান আলী
Image of রমজান আলী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রাহুল

মো: আলি হুসেন

মো: সাদিকুর রহমান

সারদুল আশিষ সৌরভ

হৃদয় মিয়া

মো:  শাকিবুল হাসান সাজু

মো: মাসুম শেখ

মো: মাহিন মিয়া

মো:  উবায়দুল হক

মো: কাওসার মিয়া

মো: জুবায়ের আহমেদ

রহমত মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo