জন্ম তারিখ: ২১ নভেম্বর, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা: চাকুরীজীবী (ফার্নিচারের দোকান), শাহাদাতের স্থান : সাভার বাসস্ট্যান্ডে রাজ্জাক প্লাজার সামনে
আবু মুজাহিদ মল্লিক ২১ নভেম্বর ২০০৭ সালে বাবা সাহাবুদ্দিন মল্লিক ও মা সারমিন বেগমের সংসারে জন্ম নেন। তার জেলা গোপালগঞ্জ। অবৈধ শাসক শেখ হাসিনার নিজ জেলাও গোপালগঞ্জ। একারণে দেশের অন্যান্য জেলার মানুষ আওয়ামীলীগ সরকারের হাতে নির্যাতিত হলেও এই জেলার অধিকাংশ বাসিন্দা ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারী সরকারের কাছে বিভিন্নভাবে লাভবান হয়েছিল। আবু মুজাহিদ মল্লিকের মা শারমিন বেগম। এক বছর আগে তাঁর রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসা বাবদ ২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। মুজাহিদ ছিলেন ফার্নিচারের দোকানের কর্মচারী। তার আয় ছিল মাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। শাহাদাতের ঘটনা সমস্ত বিরোধীদলকে ধ্বংস করে দিয়ে একচ্ছত্রভাবে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতায়। দিনে দিনে বিরোধী দল-মত-আলেম সমাজের কন্ঠরোধ করতে থাকে। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মুসলিম লীগে পরিণত হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের একে একে খুন করা হয়। চরমোনাই, ইসলামিক ফ্রন্ট নামে কিছু চাটুকার ইসলামী দলকে সরকারের তাবেদারী করার কারণে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়। হাসিনা নিজেকে সর্বেসর্বা ভেবে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা নেয়। এজন্য তার দরকার ছিল সরকারী চাকুরীর সর্বত্র নিজস্ব অযোগ্য, অদক্ষ ও চাটুকার দলীয় লোক। ২০২৪ সালে কোটা পদ্ধতি চালু করলে দেশের ছাত্র-জনতা ক্ষেপে উঠে। বিভিন্নভাবে বঞ্চনার স্বীকার আবু মুজাহিদ মল্লিক ছাত্রদের আন্দোলনে যুক্ত হয়। সরকার পক্ষ থেকে আন্দোলন প্রতিহত করা হয়েছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুররতার সাথে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টিকতে না পেরে ভারতে পলায়ন করেন। তিনি রেখে যান তার খুনি বাহিনীকে। হাসিনার পদত্যাগ ও পালিয়ে যাওয়ার খবরে দেশবাসী আনন্দে রাস্তায় নেমে আসে। আবু মুজাহিদও রাজপথে ছিলেন। সাভার বাসস্ট্যান্ডে রাজ্জাক প্লাজার সামনে বিজয়োল্লাসরত মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু মুজাহিদ মল্লিক। তাঁকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ৬ আগস্ট মরদেহ গোপ্তরগাতি গ্রামে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরিবারের বক্তব্য ‘কর্মক্ষম ছেলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রাণ দিল। সেই ছেলের শোকে ১৫ দিন কাজে না গেলে চাকরিচ্যুত করা হলো স্বামীকে। টানাটানির সংসারে দুই বেলা খাবারই জোটে না ঠিকমতো। নিজের চিকিৎসা করাব কী দিয়ে?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার খান্দারপাড়া ইউনিয়নের গোপ্তরগাতি গ্রামের আবু মুজাহিদ মল্লিকের ক্যান্সার আক্রান্ত মা শারমিন বেগম। এক বছর আগে তাঁর রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসা বাবদ ২ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। শাহাবুদ্দিন মল্লিক বলেন, ‘আন্দোলন শুরু হলে এতে শামিল হয় মুজাহিদ। অংশ নেয় মিছিল-মিটিংয়ে। ৬ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলে গ্রামে তার লাশ আনা হয়। ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। ১৫ দিন পর কাজে গিয়ে দেখি অন্য শ্রমিক কাজ করছে। এখন দিনমজুরের কাজ করছি। সব দিন কাজ থাকে না। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এক বছর আগে স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়ে। তাঁর চিকিৎসায় প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। মুজাহিদই ২ লাখ টাকা খরচ করেছে। সে-ই নাই। এত টাকা কীভাবে জোগাড় করব।’ মুজাহিদের মা শারমিন বেগম বলেন, ‘ছেলে শহীদ হয়েছে। স্বামী কাজ হারিয়েছে। গ্রামে জায়গাজমি নেই। সরকারের সাহায্য ছাড়া আমরা বাঁচতে পারব না।’ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হারুন অর রশীদ বলেন, শহীদ আবু মুজাহিদের মায়ের চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা আবু মুজাহিদ মল্লিকের বাবা শাহাবুদ্দিন মল্লিক ঢাকার সাভারে সিঙ্গার কোম্পানির গুদামে শ্রমিকের কাজ করে ২৫ হাজার টাকা পেতেন। স্ত্রী ও বড় ছেলে মুজাহিদকে নিয়ে সেখানেই বসবাস। ছোট ছেলে মোফাচ্ছের মল্লিক শ্রীপুর গ্রামে মামাবাড়িতে থাকে। মুজাহিদ ফার্নিচারের দোকানে মিস্ত্রির কাজ করে মাসে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতেন। বাবা-ছেলের টাকায় সংসার ভালোই চলছিল। ছেলের শোকে ১৫ দিন কাজে যেতে পারেননি শাহাবুদ্দিন। তাই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া ২. স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : আবু মুজাহিদ মল্লিক জন্ম তারিখ : ২১ নভেম্বর ২০০৭ পেশা : চাকুরীজীবী (ফার্নিচারের দোকান) বাবা : মো: সাহাবুদ্দিন মল্লিক মাতা : সারমিন বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গোপ্তরগাতি, ডাকঘর: খান্দারপাড়া, থানা: মুকসুদপুর জেলা: গোপালগঞ্জ পরিবারের তথ্য ভাই: মোফাচ্ছের ঘটনার স্থান আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক দুপুর ২:৩০টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, সাভার বাসস্ট্যান্ডে রাজ্জাক প্লাজার সামনে শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : গোপ্তরগাতি, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ