Image of মোস্তাক আহমদ

নাম: মোস্তাক আহমদ

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ০০০১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: সিলেট

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, শাহাদাতের স্থান : টাউন হল এলাকা, হবিগঞ্জ

শহীদের জীবনী

মোস্তাক আহমদ হবিগঞ্জ জেলার এক সাহসী সন্তান। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিতাড়িত করতে যারা নিজের তাজা রক্ত দিয়েছেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। প্রায় একযুগ আগে মারা যান মোস্তাকের বাবা আব্দুল কাদির। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে মোস্তাক সবার ছোট ছিলেন। তার মায়ের নাম মায়া বেগম। মোস্তাক বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী ছিলেন। মোস্তাকের পরিবার বর্তমানে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের ধনপুর গুচ্ছগ্রামে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করছে। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছিল তাদের দূর্নীতিবাজ সরকারকে সরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির সক্রীয়ভাবে কাজ করছে। এজন্য ১ আগস্ট ২০২৪ সালে জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করে স্বৈরাচারী সরকার। দেশবাসী আরো ক্ষেপে উঠে। তারা ততদিনে বুঝতে পেরেছিল এদেশে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই রাজাকার, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বলে খেতাব পায়। প্রতিবাদীদের জামায়াত-শিবির বলে পেটানো হয়। জনতা অনুধাবন করে এদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত রক্ষক, অন্যায়ের বিরোধীতাকারী হল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির। দেশপ্রেমিক জনতা আরো বুঝতে পারে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে সরকার মূলত আন্দোলন নির্মূলে গণহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২ আগস্ট ছাত্র-জনতা সরকারী সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে রাজপথে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়। ২ আগস্টে নতুন কর্মসূচী ঘোষিত হয়- ‘শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও আগামীকাল রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন’। যেভাবে গুলিবিদ্ধ হন ২ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জুমার নামাজের পর হবিগঞ্জে শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেন। পরে তারা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শহরের টাউন হল এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় ছিলেন। শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহিরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান। এ সময় মোস্তাক আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকালে হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতালে মোস্তাকের ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মমিন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর পেছন দিক থেকে ডান হাতের বাহুতে অর্থাৎ বগলের নিচে গুরুতর জখম ছিল। সেই জখমের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মোস্তাক মারা যান। জখমটি গুলির মতোই বলা যায়। শনিবার বাদ জোহর গৌরীপুর মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে মোস্তাকের মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। পরিবারের বক্তব্য চাচাতো ভাই রাজা বলেন, ‘মোস্তাকের বিয়ের জন্য আমরা মেয়ে দেখা শুরু করেছিলাম। এখন তো আমার ভাই-ই চলে গেল।’ তিনি বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, মোস্তাক মারা যাওয়ার আগে কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সেটা বলতে চেয়েছিল। শুধু বলেছে, ‘পুলিশের যে সাদা গাড়ি (এপিসি), ওউটা থেকে গুল্লি করছে।’ মোস্তাকের বড় ভাই ময়না মিয়া বলেন, ‘জুমার নামাজের পর দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে জুতা লওয়াত গিয়েছিল। জুতা লওয়ার সময় দুইওবায় হাল্লা-গোল্লা লাকছে। বাদে গুল্লিবিদ্ধ ওইছে। ওতটুকু আমরা জানি।’ গৌরীপুরের বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, ‘মোস্তাক অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। সে একাধিক কাজও জানত।’ মোস্তাকের বন্ধু জমির উদ্দিন বলেন, ‘তারে আমি নিজে নিয়ে এই কাজ শিকাইছি। যেদিন যায়, আমি নিজে গাড়িতে তুলে দেই। যখন শুনলাম সে মারা গেছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে আমরা সেখানে যাই। আমরা চেয়েছি লাশ যেভাবে আছে সেভাবে (ময়নাতদন্ত ছাড়া) নিয়ে আসতে। আমাদের অনেক দৌড়াদৌড়ি করাইছে। পরে বলছে সকাল ৭টায় নিয়ে যেতে। সকালে গিয়ে দেখি লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।’ পরিবারের মামলা হবিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিলেটের মোস্তাক আহমেদ (২৫) হত্যার ঘটনায় হবিগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট আবু জাহিরসহ ১১১ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা রুজু হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে। গতকাল বুধবার বিকাল ৪টার দিকে এসএম মামুন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন। মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুল আলম। গত মঙ্গলবার রাতে এই মামলার এজাহার দায়ের করা হয়েছিল। নিহত মোস্তাক আহমেদ সিলেটের জালালাবাদ থানার বউরিপুর এলাকার আবদুল কাদিরের ছেলে। তিনি হবিগঞ্জে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পে শ্রমিকের কাজ করতেন। মামলার বাদী এসএম মামুন হবিগঞ্জ পৌর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক। তিনি জানিয়েছেন, নিহতের পরিবারের সম্মতি নিয়ে তিনি এ মামলায় বাদী হয়েছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুশফিউল আলম আজাদ, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, বানিয়াচং উপজেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, বানিয়াচং উপজেলার মন্দরী ইউপির চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক, জেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ রাজ, ড. শাহ নেওয়াজ, পৌর আওয়ামীলীগ নেতা আলমগীর সোহাগ, মক্রমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল আজাদ রাসেল, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ সুমন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফয়জুর বশির চৌধুরী সুজন, জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্ত টিটুসহ ১১১ জন। প্রস্তাবনা ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া। ২। শহীদ পরিবারের জন্য স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মোস্তাক আহমদ পেশা : ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বাবা : আবদুল কাদির মা : মায়া বেগম বোন : শাহানা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গৌরীপুর, থানা: সিলেট সিটি কর্পোরেশন, জেলা: সিলেট ঘটনার স্থান : তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ২ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক দুপুর ২:৩০টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক দুপুর ৩:৩০টা, হবিগঞ্জ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : গৌরীপুর

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মোস্তাক আহমদ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আজমত আলী

রিপন চন্দ্র শীল

সানি আহমদ

পঙ্কজ কুমার কর

শেখ মো: সফিকুল ইসলাম (শামীম)

মো: মোনায়েল আহমেদ

মো: আশরাফুল আলম

মো: আকিনুর রহমান

ময়নুল ইসলাম

মো: মোজাক্কির মিয়া

এটিএম তুরাব

মো: মামুন আহমেদ রাফসান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo