জন্ম তারিখ: ২২ মে, ২০০৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ছাত্র, প্রতিষ্ঠান: ঢাকা নৌবাহিনী কলেজ, শ্রেণি: একাদশ, বিভাগ: বিজ্ঞান শাহাদাতের স্থান: ফার্মগেট, ফুটওভার ব্রীজ সংলগ্ন, ঢাকা
আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয় শহীদ পরিচিতি শহীদ মো: গোলাম নাফিজ ২০০৮ সালের ২২ মে ঢাকা জেলার উত্তরখান থানার দোবাদিয়া ইউনিয়নের ২৪৬/এ/২ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জনাব মো: গোলাম রহমান (৫৪) পেশায় ব্যবসায়ী এবং তার মা জনাবা নাজমা আক্তার (৪৫) গৃহিণী। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র গোলাম নাফিজ রাজধানীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। তবে একদিনও কলেজে ক্লাস করতে পারেননি। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন ছোট। বড় ভাই গোলাম রাসেল (১৯) বি এ এফ শাহিন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক। ছোট্ট এই পরিবারটি বসবাস করে রাজধানীর মহাখালীতে। তার বাবা গুলশান শপিং সেন্টারে একটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করতেন। কিন্ত সেই সেন্টারটি ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়, যার কারণে বর্তমানে তিনি দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর যৌক্তিকতা উপলব্ধি করতে পেরে শহীদ নাফিজ ঘরে বসে থাকতে পারেননি। ৪ আগস্ট ২০২৪ রোজ রবিবার সকাল ১১ টার সময় বাবার কাছ থেকে বংলাদেশের পতাকা কেনার জন্য ২০ টাকা নিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। তার উদ্দেশ্য ছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে পরিচালিত যৌক্তিক আন্দোলনে তিনি অংশ নেবেন। নাফিজ বাসা থেকে পায়ে হেটে ফার্মগেট এলাকায় তার বন্ধুদের সাথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সকাল থেকেই ছাত্র-জনতা বের হওয়ার চেস্টা করেন। তবে দুপুর থেকে আন্দোলনের গতি বাড়তে থাকে। ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনী ও যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীরা থেমে থেমে আক্রমণ চালাচ্ছি। পুলিশ এবং সন্ত্রাস বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে ছাত্রজনতা পিছু না হটে সামনে আগ্রসর হতে থাকলে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়। সেই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন গোলাম নাফিজ এবং তার বন্ধুরাও। তারা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কেউ আহত হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য হাসপাতালে নেয়ার ক্ষেত্রেও গোলাম নাফিজ ভূমিকা রেখেছিলেন। সময় গড়াতে গড়াতে যখন বিকাল আনুমানিক ৩ টা, তখন মেধাবী ছাত্র গোলাম নাফিজ সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়াল আক্রমণের শিকার হন। একটা গুলি তার বুকে বিদ্ধ হয়ে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলি খেয়ে রাস্তায় ঢলে পড়েন নাফিজ। এদিকে স্বৈরাচারের ঘাতক পুলিশ ও যুবলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমনে সাধারণ ছাত্ররা পিছু হটে। ঐ সময় একজন পুলিশ সদস্য একটি রিকশা ডেকে নাফিজকে তাতে তুলে দেন। গুলিবিদ্ধ গোলাম নাফিজকে পুলিশ যখন রিকশায় তুলে দিচ্ছিল তখনো সে রিকশার রডটি হাত দিয়ে ধরে রেখেছিল। রিকশাচালক নূর মোহাম্মদ তাকে নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটের একটি হাসপাতালে ঢুকতে গেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা তাকে বাধা দেয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিক। পরে ১৬ বছরের গোলাম নাফিজকে নিয়ে রিকশাচালক খামারবাড়ির দিকে চলে যান। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাধার পরও রিকশার পাদানিতে ঝুলতে থাকা নাফিজের কয়েকটি ছবি তুলতে পেরেছিলেন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ। অন্যদিকে দিন গড়িয়ে রাতের অন্ধকার নেমে আসলে তার মা বাবা নাফিজের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। ৪ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার পর পত্রিকাটির প্রথম পাতায় ছাপা নাফিজের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছবি দেখেই নাফিজের মা-বাবা সন্তানের খোঁজ পান। ছবি দেখেই কষ্টে ফেটে পড়ে তার পরিবার। কারণ তারা বুঝতে পারেন যে, তাদের প্রিয় নাফিজ আর বেঁচে নেই। তবে যা কিছুই হোক লাশটা যে পেতে হবে। মন তো আর মানে না। রাত ৩ টার দিকে তার মামা আবুল হাসেম ফোন করে জানান যে, নাফিজের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। এরপর তারা লাশ আনতে সেখানে যান। বাসায় লাশ আনার পর গোলাম নাফিজকে গোসল করানো হয়। পরেরদিন ৫ আগস্ট দোবাদিয়া মসজিদে জানাজা শেষে নাফিজের দাফন সম্পন্ন হয়। শহিদ সম্পর্কে তার মায়ের অনুভূতি: শহিদ সম্পর্কে তার মা নাজমা আক্তার বলেন, ’ নিজেই চাইতাম আন্দোলনে ছাত্ররা জিতুক। নামাজ পড়ে দোয়া করতাম আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। ছেলের মোবাইলে আন্দোলনের অনেক ছবি ছিলো। নিরাপত্তার জন্য ছবি ডিলেট করতে বলায় ছেলে আমার সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিল।’ স্মৃতি রিকশায় বহনরত নাফিজের একটি গ্রাফিতি বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ তাঁদের একটি ভবনের নাম নাফিজের নামে নামকরণ করেছে। নাফিজকে বহন করা রিকশাটি পরবর্তীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে দান করা হয় এবং রিকশাচালক নূর মোহাম্মদকে তার দুঃসাহসিক ভূমিকার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা হয়। একনজরে ব্যক্তিগত পরিচিতি নাম : শহীদ মো: গোলাম নাফিজ পেশা: ছাত্র, প্রতিষ্ঠান: ঢাকা নৌবাহিনী কলেজ, শ্রেণি: একাদশ, বিভাগ: বিজ্ঞান পিতা : মো: গোলাম রহমান, পেশা: ব্যবসা মাতা : নাজমা আক্তার, পেশা: গৃহিণী জন্ম : ২২ মে ২০০৮, বয়স: ১৬ বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ৪ আগস্ট ২০২৪ সময়: বিকাল ৩.০০টা স্থান: ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে স্থায়ী ঠিকানা : ২৪৬/এ/২, থানা: উত্তরখান, ইউনিয়ন: দোবাদিয়া বাজার, জেলা: ঢাকা-১২৩০ বর্তমান ঠিকানা : মহাখালী, ঢাকা বিশেষ কৃতিত্ব: জিপিএ-৫ (এসএসসি), বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা