জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ০০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা: ছাত্র, হাসপাতালে চাকুরী (পার্ট টাইম), শাহাদাতের স্থান : গুদারাঘাট সেতু, বনশ্রী, ঢাকা
নাজমুলের নিজের বাড়ি কুমিল্লা হলেও তিনি তার পরিবারসহ মাদারীপুরে নানার বাড়ির কাছাকাছি অবস্থান করতেন। তার বাবা অসুস্থতার কারণে তেমন কিছু করতে পারেন না। মা ঢাকায় একটি হাসপাতালে চাকুরী করেন। নাজমুল নিজেও লেখাপড়ার পাশাপাশি মায়ের সাথে কাজ করতেন। ঘটনার প্রেক্ষাপট শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে দেশপ্রেমিকদের বিতাড়িত করে দলীয় অদক্ষ, চাটুকার ও লম্পটদের মাধ্যমে লুটপাট চালিয়ে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল । শেখ হাসিনা পরিকল্পনা নেয় ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার। সরকারী চাকুরীতে অযৌক্তিক মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে ২০১৮ সালে প্রতিবাদের মুখে বাতিল করলেও ২০২৪ সালে আবার হাইকোর্টে দলীয় বিচারকের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা ২০১৮ সালের মতো কোটাপ্রথা নিষিদ্ধ করতে শুরু করে দেয় প্রতিবাদ। টোকাই ও ধর্ষক লীগ নামে খ্যাত ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে লাঠিপেটা করে। জুলাই মাস জুড়ে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব , আনসার ছাত্র-জনতাকে দমনে যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে রাজপথে নেমে আসে। আহত ও নিহত হয় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়ে কারফিউ দেয়া হয়। ছাত্র-জনতাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হতে থাকে। এরকম উত্তাল দিনেও কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতেন নাজমুল। জীবিকার তাগিদে ছোটবেলা থেকেই রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করেন নাজমুল হাসান। পরিবারের হাল ধরতে রাজধানীর ফরাজী হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি টেকনিশিয়ান হিসেবে এক বছর আগে চাকরি নেন নাজমুল। গত ১৯ জুলাই দুপুরে আফতাবনগর এলাকার বাসা থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হন তিনি। গোলাগুলি ও সংঘর্ষের কারণে সড়কে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বনশ্রী এলাকার গোদারা ঘাটের সাঁকোর কাছে পেটে গুলি লাগে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নাজমুল। পাশে থাকা এক পথচারী নাজমুলকে উদ্ধার করে নিয়ে যান নাগরিক প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি। ওইদিন রাতেই তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর এলাকায়। ২০ জুলাই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নাজমুলকে। পরিবারের বক্তব্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা জীবিকার তাগিদে ছোটবেলা থেকেই রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করেন নাজমুল হাসান। পরিবারের হাল ধরতে রাজধানীর ফরাজী হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি টেকনিশিয়ান হিসেবে এক বছর আগে চাকরি নেন নাজমুল। একই হাসপাতালে তার মা জব করেন। নিহত নাজমুলের বাবা সৈয়দ আবুল কায়েস বলেন, আমার ছেলে কাজে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। নামজুল ছিল পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত নাজমুল হাসানের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কাজে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ও তো আন্দোলন করে নাই। আমার ছেলেকে কেন গুলি কইরা মারলো? আমার একমাত্র ছেলে। আমি এখন কি নিয়া বাঁচমু?’ নাজমা বেগম বলেন, ‘বাইরে গোলাগুলি হচ্ছে, অনেকবার নিষেধ করেছিলাম ডিউটিতে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আমার কথা শুনেনি ছেলেটা। হতভাগা এভাবেই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে, বুঝতেও পারিনি। নাজমুলের বড় বোন তানজিলা আক্তার বলেন, আমার লেখাপড়ার কাজে সহযোগিতা করতো ভাই। এভাবে মরে যাবে এটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। বুকের ভেতরটায় যে কি হচ্ছে তা কাউকে বোঝাতে পারবো না। আমাকে ভাইকে কেন গুলি করে মারা হলো, এটার বিচার আমি আল্লাহ ছাড়া কার কাছে দেবো? নিহতের মামা সাইদুল মাতুব্বর বলেন, এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করা হোক। নির্দোষ একটি ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলল, তার বিচার হওয়া উচিত। প্রতিবেশী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ছোটবেলা থেকেই নাজমুল ঢাকায় থাকে। এলাকায় ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল। তার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : নাজমুল হাসান পেশা : ছাত্র, হাসপাতালে চাকুরী (পার্ট টাইম) বাবা : আবুল কায়েস মা : নাজমা বেগম (৪৫), চাকুরীজীবী বোন : তানজিলা আক্তার স্থায়ী ঠিকানা : চাপাতলি, মুরাদনগর, কুমিল্লা বর্তমান ঠিকানা : মাতুব্বরবাড়ি, উত্তরকান্দি, চরগোবিন্দপুর, সদর উপজেলা, মাদারীপুর ঘটনার স্থান : গুদারাঘাট সেতু, বনশ্রী, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ ও আওয়ামীলীগ আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, আনুমানিক দুপুর ২ টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪ গুদারাঘাট সেতু, বনশ্রি, ঢাকা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : মাদারীপুর