জন্ম তারিখ: ১৫ জুন, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : চাকুরীজীবী, শাহাদাতের স্থান : আশুলিয়া থানা
শাহাদাত হোসেন শামীমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। তার বাবার নাম আবদুল হাই এবং মায়ের নাম নুরুন নাহার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় গুলিতে নিহত হন তিনি। ঘটনার প্রেক্ষাপট ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অকার্যকর দেশে পরিণত হতে থাকে। ধনীরা আরো ধনী হতে থাকে আর গরিবরা গরিবই থেকে যায়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টারা ভারতকে কি কি সম্পদ প্রদান করলে আমরা কানাডা-সিংগাপুর হয়ে যাব সেসব খোয়াব দেখাতো! ১৫ বছর পরে দেশের মানুষ বুঝলো শাসক শ্রেণি শুধু চোর নয়, ভয়ংকর ডাকাত! খুনি শেখ হাসিনা সরকারের দূর্নীতি, লুটপাট, বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা ধ্বংসসহ সকল ক্ষেত্রে অদক্ষ, দলীয় ও লম্পট লোকেদের প্রাধান্যের ফলে দেশবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। ভারতের সাথে দেশের স্বার্থবিরোধী গোপন চুক্তিতে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। হাসিনা সরকার ২০০৮ সালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় আসার পরে দেশপ্রেমিক নাগরিক ও প্রতিবাদী জনতাকে আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে আটক, গুম, খুন করতে থাকে। শেখ হাসিনা বিএনপির নেতা-কর্মীদের কিনে নিতে পারলেও দেশের বড় ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কিনতে চরমভাবে ব্যর্থ হন। দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষমতায় থাকতে জামায়াত নেতাদের আটক, গুম ও খুন করা শুরু হয়। কেউ ন্যায়ের পক্ষে কথা বললে, সরকারী দলের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে কিংবা যেকোন আন্দোলন হলে হাসিনা ও তার এমপি মন্ত্রীরা প্রতিবাদকারীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালাতো। অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে কাউকে জামায়াত-শিবির অভিযোগ তুলে পিটিয়ে হত্যা করা বৈধ একটি কাজ। বিশ্বজিৎ নামক এক পথচারি হিন্দুকে শিবির আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে খুন করে। হাসিনা সরকার পরিকল্পনা নেয় চিরস্থায়ী ভাবে ক্ষমতায় থাকার। তারা সরকারী চাকুরীতে অযৌক্তিক মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে ২০১৮ সালে প্রতিবাদের মুখে বাতিল করলেও ২০২৪ সালে আবার হাইকোর্টে দলীয় বিচারকের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনে। তাদের উদ্দেশ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে দলীয় অদক্ষ লোকেদের চাকুরীতে নিয়োগ দিয়ে হাসিনা শাসন চিরস্থায়ী করা। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা কোটা প্রথা নিষিদ্ধ করতে শুরু করে দেয় প্রতিবাদ। ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে লাঠিপেটা করে। জুলাই মাস জুড়ে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার ছাত্র-জনতাকে দমনে যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে রাজপথে নেমে আসে। আহত ও নিহত হয় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়ে কারফিউ দেয়া হয়। ছাত্র-জনতাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হতে থাকে। দেশবাসী প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। রাজপথ আরো বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ৪ আগস্ট ১ দফা সরকার পতনের ঘোষণার ফলে ৫ আগস্ট দেশের মানুষ রাজপথে নেমে পড়ে। শেখ হাসিনা তার পতন ঘন্টা বেজে উঠতে দেখে ভারতে পালিয়ে যান। সংবাদ শুনে জনতা আনন্দে ছুটে আসে রাস্তায়। শাহাদাত হোসেন শামীম ও ছুটে যান বিজয় মিছিলে। হাসিনা পালিয়ে গেলেও পুলিশ-বিজিবির প্রতি তার নির্দেশ ছিল গনহত্যা পরিচালনা করার। শামীম আশুলিয়া থানার সামনে বিকাল ৪ টার সময় গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যু বরণ করেন। পরদিন আসলপাড়া, রামগঞ্জ লক্ষ্মীপুরে তাকে কবরস্থ করা হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা শামীমের বাবার কৃষিকাজের ফলে সংসার চলে। শামীম চেয়েছিল ঢাকায় চাকুরী করে পরিবারকে আরো সচ্ছল করতে। প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : শাহাদাত হোসেন শামীম জন্ম : ১৫ জুন ২০০২ পেশা : চাকুরীজীবী বাবা : আবদুল হাই (৬০) মা : নুর নাহার (৫০) ভাই-বোন : মো: রাজু, এইচ এস সি পাস ইমা আক্তার, ছাত্রী, ১০ম শ্রেণি ইমন, ছাত্রী, শিশু শ্রেণি স্থায়ী ঠিকানা : মুরাদ বাড়ি গ্রাম: সবুজ গ্রাম, ডাকঘর: আলেকজান্ডার, থানা: রামগতি, জেলা: লক্ষ্মীপুর ঘটনার স্থান : সংসদ ভবন এলাকা আক্রমণকারী : পুলিশ ও ছাত্রলীগ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক বিকাল ৪ টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, আশুলিয়া থানা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : সবুজগ্রাম, লক্ষ্মীপুর