জন্ম তারিখ: ১ আগস্ট, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : হোটেল শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : বসিলা
শহীদ শাকিল ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার কাজিরা বাদ গ্রামের একজন তরুণ, যিনি ঢাকার বসিলা গার্ডেন সিটিতে বসবাস করতেন। তিনি ২০০২ সালের ৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন। শাকিলের পিতা দলিল উদ্দিন এবং মাতা সোকানুর। তার পিতা ২০২০ সালের জুলাই মাসে মারা যান। শহীদের মা একজন গৃহিণী এবং বয়স ৬০ বছর। পারিবারিক অবস্থা শহীদ শাকিলের বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইয়েরা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে একটি মাদ্রাসায় তাকে ভর্তি করিয়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি হোটেলের কাজে যোগ দেন। এ কাজ করে তার মাসিক ৬০০০ টাকা আয় হত। শাকিলের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পাঁচ ভাই এবং নয় বোন রয়েছেন। তাদের বাড়িতে কোন জমিজমা নাই বললেই চলে। শহীদ শাকিলের মা-ছেলের সম্পর্ক গভীর এবং পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ববোধ লক্ষ্যণীয়, এ থেকে উপলব্ধি করা যায়, শহীদ শাকিল একটি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা একজন সংগ্রামী যুবক, যিনি জীবনে উন্নতি করতে সদা প্রচেষ্টায় ছিলেন। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে ২০২৪ সালে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যা "জুলাই বিপ্লব" নামে পরিচিত, দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। দীর্ঘ ষোল বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সামাজিক-রাজনৈতিক বৈষম্য জাতির ভেতরে তীব্র জনরোষের সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিক বৈষম্য, শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল অবস্থা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের মতো ইস্যুগুলো ক্রমে যুবসমাজের মধ্যে ক্ষোভ জাগিয়ে তোলে। জুলাই ২০২৪ সালে এই ক্ষোভ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে, যখন ছাত্রসমাজ একসঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। তাদের দাবি ছিল সমাজের সব স্তরে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পুনরুদ্ধার এবং শিক্ষা ও কর্মস্স্থংানের ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করা। আন্দোলনটি তীব্রভাবে সংগঠিত ছিল এবং এর নেতৃত্বে ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ছাত্রনেতারা। আন্দোলনটি শুরু হয় মূলত শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, যা দ্রুতই সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন পায়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমদিকে আন্দোলন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিন্তু এর ফলে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ে। সমাজের নানা স্তরের মানুষ—শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক এবং পেশাজীবীরাও এই আন্দোলনে যুক্ত হন। জুলাই মাসের মধ্যে এই আন্দোলন সারা দেশে বিপ্লবের রূপ নেয়, যার কারণে এটি "জুলাই বিপ্লব" নামে পরিচিতি লাভ করে। জুলাই বিপ্লবের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক ছিল এর নেতৃত্বে তরুণদের সক্রিয় ভূমিকা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের তথ্য প্রচার এবং জনসমর্থন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এতেও ছিল স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের ‘ইন্টারনেট র্কাকডাউন’ এর মাধ্যমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখার ন্যাক্কারজনক কাজ। এই বিপ্লব শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রতিরোধ ছিল না; এটি ছিল সমাজের কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য একটি জাগরণ। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আস্থা হারায় সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। যদিও আন্দোলন সফলভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কিছুটা সময় নিয়েছিল, এটি দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। "জুলাই বিপ্লব" তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করে, যা ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবে। যেভাবে শহীদ হন বিপ্লবী ছাত্র-জনতার স্লোগান হুংকারে স্বৈরাচার হাসিনার ক্ষমতার মসনদ কেঁপে উঠে। মুক্তিকামী জনতার তোপের মুখে ৫ আগস্ট রক্তপিপাসু খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘনীভূত হওয়া ক্ষোভ ক্রমেই গণআন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় নিরীহ-নিরস্ত্র মুক্তিকামী জনতার সাথে; আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়। অধিকার আদায়ের নির্ভীক সাহসী যোদ্ধা শাকিল ছাত্র-জনতার মুক্তির সংগ্রামে যুক্ত হয়। ১৯ জুলাই, শুক্রবার। জুমার নামাজের পর মোহাম্মদপুরের বসিলায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর চড়াও হয় ঘাতক পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী। মুহুর্তেই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে শাকিল গুরুতর আহত হন। পরে ওই দিন বাদজুমা, শাকিল মৃত্যুবরণ করেন। তার শাহাদাতের ঘটনা দেশের তরুণ সমাজকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এবং সরকারের দমনমূলক কার্যকলাপের প্রতি তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শাকিলের চাচা মো. শফিউল্লাহ তার সম্পর্কে বলেন, "শাকিল ছিল একজন পরিশ্রমী ও ধার্মিক যুবক। সে নিয়মিত নামায ও মাদ্রাসায় পড়াশুনা করত এবং পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করে পরিবারকে সাহায্য করত। তার মতো ছেলেকে হারানো আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।" শহীদ শাকিলের শাহাদাত দেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে এক নতুন চেতনা জাগিয়ে তুলেছে, যা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শাকিলের আত্মত্যাগ পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সমগ্র জাতির জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে থাকবে। প্রস্তাবনা ১। শহীদের মায়ের জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা ২। বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া যেতে পারে। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পূর্ণ নাম : শাকিল জন্ম তারিখ : ০১/০৮/২০০২ পেশা/পদবী : হোটেল শ্রমিক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কাজিরাবাদ, পো: টিটিয়া, ইউনিয়ন: বদরপুর, উপজেলা: লালমোহন, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : বাসা/মহল্লা: বসিলা, এলাকা: গার্ডেন সিটি, থানা: বসিলা, জেলা: ঢাকা পরিবারের তথ্য পিতার নাম : দলিল উদ্দিন মায়ের নাম : সোকানুর মায়ের পেশা : গৃহিণী মায়ের বয়স : ৬০ বছর ভাই : ৫ জন ১. মো: মিরাজ (৪৫), রিকশাচালক ২. মো: শাহিন (৪০), রড মিস্ত্রী ৩. মো: শামীম (৩৮), হোটেল কর্মচারী ৪. মো: রাকিব (৩৫), হোটেল কর্মচারী ৪. মো: শাকিল (১৯), শহীদ বোন : ১ জন, নুরুন নাহার (৪৩), বিবাহিতা ঘটনার স্থান : বসিলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, জুমার পর আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, জুমার পর, বসিলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : চগ৩২+গ৮৪