Image of শাকিনুর রহমান

নাম: শাকিনুর রহমান

জন্ম তারিখ: ১৫ অক্টোবর, ১৯৯৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : গার্মেসম কর্মী শাহাদাতের স্থান : আশুলিয়ার

শহীদের জীবনী

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি থানার কিশোরগাড়ি গ্রামে বাড়ি মো. শাকিনুর রহমানের। তিনি ইন্টারমিডিয়েট পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতেন ঢাকা ইপিজেডে। সাম্প্রতিক সময়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে মো. শাকিনুর রহমান আন্দোলনে যোগদান করেন। গত ৫ আগস্ট মো. শাকিনুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ২০০৮ সালে নির্বাচনের পরে থেকে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে অন্যায় অবিচার কায়েম করা শুরু করে। শুরুতে ২০০৯ সালে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নাম দিয়ে ভারতের সহযোগিতায় পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে যারা যারা হত্যাকান্ড কাছ থেকে নিজ চোখে দেখেছিল তাদের একে একে হত্যা করা হয়। সমস্ত আলামত নষ্ট করা হয়। ২০১০ সালে ২৭ জানুয়ারিতে সাবেক স্বৈরশাসক, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সম্পদ ভারতের হাতে তুলে দিয়ে এবং প্রচন্ড রকমের লুটপাটের মাধ্যমে ৭৪ সালে দূর্ভিক্ষ সৃষ্টিকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবকে বিপ্লবের মাধ্যমে যারা ক্ষমতাচ্যুত ও তার মৃত্যু ঘটিয়ে দেশকে মুক্ত করেছিল তাদের ৪ জনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়। ঐ বিপ্লবে বজলুল হুদা ছিলেন অন্যতম নায়ক। তার বুকে পা দিয়ে চেপে ধরে শেখ হাসিনা নিজ হাতে ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করেন। শেখ হাসিনা ও তার হিংস্র সংগঠন আওয়ামীলীগ বুঝতে পেরেছিল এদেশে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে হলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে ঘায়েল করা আবশ্যক। এই দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, গুম, খুন, হত্যার মাধ্যমে দেশে অরাজক পরিস্থিতি জন্ম লাভ করে। ২০১৩ সালে ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়। এরপরে একে একে কামারুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী, আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির বাঘা ইসলামী নেতা সালা উদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ বিখ্যাত আলেম, জ্ঞানী-গুণীদের ঝুলিয়ে দেয়া হতে থাকে। প্রতিবাদী আলেমরা গুম হয়ে যায়। দেশের মানুষ ফেইসবুকেও প্রতিবাদ করতে পারেনা। হুমকি-ধমকি, গ্রেফতারে দেশ ছাড়া হতে থাকে ছাত্র-জনতার একাংশ। দেশে একমাত্র আওয়ামীলীগ ছাড়া বাকি সবাই বৈষম্যের শিকার হয় সকল ক্ষেত্রে। শাকিনুর রহমান একজন সচেতন মানুষ ছিলেন। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন এদেশে থাকবে ততদিন তার মতো সাধারণ মানুষের মুক্তি নেই। মেধাবী ছাত্ররা সরকারী চাকুরীতে অদক্ষ, অযোগ্য, দলীয় কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার প্রতিবাদ শুরু করে। শুরু হয় কোটার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। আওয়ামী লীগ যুদ্ধাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নির্বিচারে গুলি করে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে আহত ও নিহত করে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে টিকতে না পেরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। পালানোর আগে তার দল থেকে নিয়োগ দেয়া পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবিকে নির্দেশ দেয় গণহত্যা চালানোর। হাসিনা পালানোর খবরে শাকিনুর আনন্দে রাস্তায় নেমে আসেন। আনন্দরত শাকিনুরকে আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। অর্থনৈতিক অবস্থা ও পরিবারের বক্তব্য নিহত সাকিনুর রহমান গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি থানার কিশোরগাড়ি এলাকার জালিম মিয়ার ছেলে। তিনি স্ত্রীসহ আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন বড় ভাই আদম আলী সরকার জানান, আমার ভাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তার স্ত্রী ও ছোট একটি সন্তান রয়েছে। এখন আমাদের পরিবারে তেমন কোনো আয়ের পথ নেই। তার চাকরির টাকায় আমাদের সংসার চলতো। মো. শাকিনুর রহমান ছোট বেলায় তার মাকে হারিয়ে ফেলেন। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৯ জন। তার মধ্যে বড়ভাই পড়াশোনা চলাকালীন পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ফিরে জীবনযাপন করছেন। মেজো ভাই এখনো লেখাপড়া করছে। বাবা বয়স্ক অসুস্থ কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। পরিবারের দেখাশোনা তার নিজ হাতে ছিলো। শাকিনুর তার স্ত্রীসহ একটি ৫ বছরের ছেলে রেখে গেছেন। স্বামীকে হারিয়ে যেন দিশেহারা স্ত্রী। শিশু সন্তানকে নিয়ে এখন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। স্বামীর মৃত্যুতে শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও রয়েছে তার অনিশ্চয়তা। এসব নানা দুশ্চিন্তায় কাটছে তার দিন। শাকিনুরের ভাই আদম আলী সরকার আরো বলেন, আমাদের পরিবার আর্থিকভাবে গরীব ও অসচ্ছল, তার রোজগারের টাকায় চলতো আমাদের সংসার। তার মৃত্যুতে এখন আমাদের সংসার চলাটা বড় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি বর্তমান সময়ের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান থাকবে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে আমার ভাইকে শহীদ বীর উপাধি দেয় এবং তার নাবালক এতিম ছেলেসহ তার পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নজরদারি রাখার জন্য বিশেষভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। মো. শাকিনুর রহমানের বাবা মো. জালিম মিয়া বলেন, আমার ছেলেতো নির্দোষ ছিলো, কি অপরাধ ছিল তার? যার ফলে তাকে আশুলিয়া থানার সামনে পুলিশ তার দিকে বুলেট নিক্ষেপ করে। সে তো কোন রাজনীতি করতো না, পরিবারের করুণ দশা দেখে সে ঢাকায় গিয়ে ইপিজেডে চাকরি নেন। তার চাকরির টাকা-পয়সা দিয়ে আমার পরিবারের ভরণ পোষণ চলতো। বড় ছেলের চিকিৎসার টাকা পয়সা দিত আমার বড় ছেলে সারা বছর অসুস্থ থাকে। মেজো ছেলে এখনো পড়াশোনা করে। সে মারা গেল তার স্ত্রীসহ নাবালক এতিম ছেলেকে আমার পাশে রেখে গেল। আমি তো একজন বৃদ্ধ লোক। আমি এখন বড় অসহায় কারণ আমার তো আর্থিক অবস্থা তেমন সচ্ছল না। যার ফলে আমি আমার পরিবার চালাতে পুরোপুরি অপারগ। আমার সন্তানের মৃত্যুতে আমি এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। কোথায় যাবো কার কাছে যাবো বুঝতে পারছি না। আমার সন্তানের মৃত্যুর বিষটি তদন্ত করে অপরাধিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শাকিনুর ছোটবেলা থেকেই সহজ সরল ছিলো। প্রতিবেশি ও এলাকার মানুষের সাথে ছিলো তার গভীর সম্পর্ক। এলাকার বয়স্ক মুরব্বিদের সে খুবই সম্মান করতো। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রতি ছিলো তার আদর ও ভালোবাসার সম্পর্ক। তার এই মৃত্যুর শোক যেন এলাকার ছোট বড় কেউ মেনে নিতে পারছে না। তার এই হত্যার সঠিক বিচার যেন হয় সেই দাবিই করেন তারা। অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরেছে সে। বাড়িতে রয়েছে তার স্ত্রী ও ৫ বছরের শিশু সন্তান। হতবিহ্বল বাবা ও বোনদের পাশে দেশের দায়িত্বে থাকা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও স্থানীয় বিত্তশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে কিছুটা হলেও কষ্ট কমবে পরিবারটির। স্ত্রীর মামলা ১৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে ১৫৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সাকিনুর রহমানের স্ত্রী মোছা. শারমিন আক্তার। সাকিনুর হত্যা মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান (৬১), ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন ভূইয়া (৩৮), আশুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মাদবর (৫৮), আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির সরকার (৪০), আ.লীগ নেতা মঞ্জু দেওয়ান (৫৮), মোয়াজ্জেম হোসেন (৫০), মোতালেব ব্যাপারী (৫৫), আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ মন্ডল (৫৭), এনামুল হক মুন্সী (৫০), মতিউর রহমান মতি (৫২), সাদেক ভূইয়া (৫৭), নুরুল আমিন মন্ডল (৫২), আমিনুল ইসলাম (৪৮), বাহারউদ্দিন (৪৭), আ. কাদের মুন্সী (৫৯), আমিনুল ইসলাম খান (৩৭), লুৎফর রহমান জয় (৩৬), মমতাজ উদ্দিন মেম্বার (৫০), জাফর আলী (৫৫), শাহাদত হোসেন খান (৫৫), মইনুল ইসলাম ভূইয়া (৪০), শাহআলম মাস্টার (৫২), নাদিম (৩৫), রহম আলী (৪৫), সাইদ (৫৫), শাকিল (৪০), শেখ উজ্জল (৪৯) শফিক মাদবর (৩৬), সাইফুল শিকদার (৩৮), জাকির হোসেন (৫০), দেলোয়ার ভূইয়া (৪০), মনির ভূইয়া (৩৮), আকিজুল (৪০), আনোয়ার হোসেন (৪০) সহ ১৫৮ জন। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা ২. স্ত্রী ও ভাইদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা একনজরে শহীদ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শাকিনুর রহমান পিতা : ইবনে সাঈদ মন্ডল (জালিম মিয়া) স্ত্রী : মোছা. শারমিন আক্তার ঠিকানা : কিশোরগাড়ি, পলাশবাড়ি, গাইবান্ধা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of শাকিনুর রহমান
Image of শাকিনুর রহমান
Image of শাকিনুর রহমান
Image of শাকিনুর রহমান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রাকিবুল হাসান রকি

মো: জাহিদুল ইসলাম

মো: মামুন

মো: জাহিদুর রহমান

মো: সাগর রহমান

মো: রুবাইদুজ্জামান রেজওয়ান নাইম

আল শাহ রিয়াদ

মো: শাহাবুল ইসলাম ( শাওন )

মো: রায়হানুল হাসান

মানিক মিয়া

মো: আসাদুল হক বাবু

মো: মিরাজুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo