Image of আবদুল ওয়াদুদ

নাম: আবদুল ওয়াদুদ

জন্ম তারিখ: ১৫ জুন, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : আজিমপুর , ঢাকা

শহীদের জীবনী

আবদুল ওয়াদুদ ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি বরিশালের বাকেরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। নিউমার্কেট এলাকায় প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে তার কাপড়ের দোকান ছিল। আব্দুল ওয়াদুদ দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্য তৃতীয় ছিলেন। বাবা তাহের আলী আকন্দ (৬৮) এবং মা মাজেদা বেগম (৬০)। আব্দুল ওয়াদুদ ও শাহানাজ ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি পারিবারিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে একমাত্র পুত্র হুজাইফা আকন্দ জন্মগ্রহণ করে। পলাশিতেই শশুরের সরকারি কোয়ার্টারেই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ওয়াদুদ। তার সাত বছর বয়সের সন্তান হুজাইফা আজিমপুর লিটলস্ এঞ্জেলস স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। ঘটনার প্রেক্ষাপট ১৫ বছরে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল হাসিনা সরকার। শেখ হাসিনা পরিকল্পনা নেয় চিরস্থায়ী ভাবে ক্ষমতায় থাকার। তারা সরকারী চাকুরীতে অযৌক্তিক মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে ২০১৮ সালে প্রতিবাদের মুখে বাতিল করলেও ২০২৪ সালে আবার হাইকোর্টে দলীয় বিচারকের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনে। তাদের উদ্দেশ্য একসময়ের সন্ত্রাসী ও ধর্ষক সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজাম্মেলের মাধ্যমে দলীয় কর্মীদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট প্রদান করে তাদেরকে কোটার মাধ্যমে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ দিয়ে হাসিনা শাসন চিরস্থায়ী করা। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা ২০১৮ সালের মতো কোটা প্রথা নিষিদ্ধ করতে শুরু করে দেয় প্রতিবাদ। টোকাই ও ধর্ষক লীগ নামে খ্যাত ছাত্র লীগ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে লাঠিপেটা করে। জুলাই মাস জুড়ে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ছাত্র-জনতাকে দমনে যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে রাজপথে নেমে আসে। আহত ও নিহত হয় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। ইন্টারনেট, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়ে কারফিউ দেয়া হয়। ছাত্র-জনতাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করা হতে থাকে। এরকম উত্তাল দিনে ১৯ জুলাই বিকালের দিকে নিউমার্কেট এলাকায় আবদুল ওয়াদুদ গুলিবিদ্ধ হন। তার মাথায় গুলিটি বিদ্ধ হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শহীদের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী কাপড়ের ব্যবসা করতেন নিউমার্কেটে। আমরা আজিমপুর কলোনিতে থাকি। ১৯ জুলাই শুক্রবার কলোনির ভেতর দিয়ে নিউমার্কেট ১ নম্বর গেটের অপজিটে যায়। সেখান থেকে মসজিদে নামাজ পড়ে মার্কেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছিল। আমার সঙ্গে কথা বলে মাত্র লাইনটা কেটেছে মোবাইলটা পকেটে রাখেনি। এসময় হঠাৎ করে পুলিশ নীলক্ষেতের দিক থেকে বিকালে গুলি করা শুরু করেছে। সেখানে ৫০-৬০ জনের মতো লোক দাঁড়িয়ে ছিল; এরমধ্যে ৫-৬ জন লোক স্পটে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যায়, তারমধ্যে আমার স্বামী ছিল একজন। আহত অবস্থায় তাকে ধরে লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার স্বামী চেয়েছিল সেখান থেকে যদি পরিস্থিতি ভালো মনে হয় তাহলে সে মার্কেটের দিকে যাবে না হলে বাসায় চলে আসবে। গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে যায় রাস্তায়। মোবাইলটি নিয়ে সেখানে থাকা এক ভাই আমার নাম্বারে শেষ ডায়াল দেখে আমাকে কল করে ঘটনাটি জানান। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ২-৩ মিনিট আগে আমার সঙ্গে কথা হয়। খবর শুনে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। প্রথমে আমরা কোন হাসপাতালে নিয়েছে এটি জানতে পারিনি। পরে আমার ভাইকে বললে সে দৌড়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চলে যায় সেখানে গিয়ে দেখে আমার স্বামীর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে নেয়ার আধাঘণ্টা পরে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আমি গিয়ে আমার স্বামীকে আর দেখতে পাইনি। সরকারী সিদ্ধান্তে অনেক টালবাহানা ও টাকা খরচ করে মৃত্যুর তিন দিন পরে তার মরদেহ আমরা হাসপাতাল থেকে পাই। পরে তাকে গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জে নিয়ে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। নিহত ব্যবসায়ীর শ্যালক আব্দুর রহমান বাদী হয়ে গত ২১ আগস্ট নিউমার্কেট থানায় এ মামলা করেন। পরিবারের বক্তব্য ও অর্থনৈতিক অবস্থা শহিদ আব্দুল ওয়াদুদের শশুর সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারি আব্দুর রব জানান, মেয়েটার মাত্র ১২ বছর আগে বিয়ে দিলাম। নাতিটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। আমার জামাইটা খুব ভালো মানুষ ছিল। আল্লাহর নিকট একটাই চাওয়া সে যেন জান্নাতবাসী হয়। শ্যালক আব্দুর রহমান বলেন, আসলে সেদিনের অবস্থা ও কষ্টের কথা বলা খুবই কঠিন। বড় বোনটা সব সময় মন খারাপ করে থাকেন। ভাগিনা’র মুখের দিকে তাকাতে পারি না। আর কোন পরিবারকে যেন এমন সমস্যায় পড়তে না হয় আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি। ওয়াদুদ কাপড়ের ব্যবসা করতেন। হুজাইফা তাদের একমাত্র সন্তান। স্বামীর মৃত্যুতে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ওয়াদুদের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন। তিনি বলেন- ‘কী করবো, কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবো, কী হবে আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ? আমার আট বছরের শিশুটি বাবাহারা হয়ে গেল। ওর বাবা তাকে অনেক ভালোবাসতো। সে সারাক্ষণ বুলেট-রক্ত, পুলিশের ছবি আঁকে, ছবি এঁকে তার ভেতরের কষ্টগুলো প্রকাশ করে। যখন বাবার জন্য কষ্ট হয় তখন বুকে হাত দিয়ে আমাকে দেখায়। বাবাকে ছাড়া নীরব হয়ে গিয়েছে আমার সন্তানটি। ‘’একজন নারীর স্বামী চলে গেলে তার পুরো পৃথিবীটাই শূন্য হয়ে যায়। আমার সংসারটি একেবারে শেষ হয়ে গেছে আর কিছু নেই। আমার সন্তানটি এতিম, অসহায় হয়ে গেছে। এখন আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে কিছু একটা চেষ্টা করতে হবে। এখন আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। চাকরি না করলে আমি আমার সন্তানকে কীভাবে বড় করবো। তাকে কীভাবে মানুষ করবো? আমার বাবা-মা বয়স্ক, তাদেরও ইনকাম সোর্স বন্ধ হয়ে গেছে। আমি জানি না কীভাবে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবো। আমি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচারে ডিপ্লোমা কমপ্লিট করেছি। এরপর বিএসসি মাঝামাঝি এসে নানাবিধ সমস্যার কারণে আর শেষ করতে পারিনি। কিছুদিন একটি বেসরকারি কনসালটেশন ফার্মে চাকরি করেছিলাম। সন্তান হওয়ার পরে চাকরিটা ছেড়ে দেই। এই পরিস্থিতিতে আমার একটা চাকরি খুব দরকার। এখন যদি আমি চাকরি না করি তাহলে আমার সন্তানটিকে নিয়ে ভেসে যেতে হবে। সরকারের কাছে আমি এতটুকু চাই আমার একটা পুর্নবাসন হোক, একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হোক। প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া ২. স্ত্রীর জন্য চাকুরীর ব্যবস্থা করা একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : আবদুল ওয়াদুদ জন্ম : ১৫ জুন ২০০২ পেশা : ব্যবসায়ী বাবা : মো: তাহের আলী আকন মা : মাজেদা বেগম স্ত্রী : শাহনাজ পারভীন। সন্তান : হুজাইফা স্থায়ী ঠিকানা : দুধাল বাকেরগঞ্জ, বরিশাল বর্তমান ঠিকানা : ৩৮, (৪র্থ তলা), আজিমপুর রোড, ওয়ার্ড নং-২৬ লালবাগ, ঢাকা ঘটনার স্থান : নিউ মার্কেট এলাকা আক্রমণকারী : পুলিশ ও ছাত্রলীগ আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, আনুমানিক দুপুর ২টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪ নিউ মার্কেট, ঢাকা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আবদুল ওয়াদুদ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রাব্বি

জসিম উদ্দিন

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন

মো: জিহাদ হোসেন

মো. মনির

 মো: আরিফুর রহমান রাসেল

মো: বাবলু মৃধা

মামুন খন্দকার

মো: আখতারুজ্জামান নাঈম

সাইদুল ইসলাম

মো: হাবিবুর রহমান

মো: বাচ্চু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo