জন্ম তারিখ: ২০ অক্টোবর, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: সাংবাদিক, শাহাদাতের স্থান : ধানমন্ডির
জনাব আবু হেনা মোস্তফা জামান ও সামছি আরা জামানের সংসারে নব্বইয়ের দশকে তাহির জামান প্রিয়র জন্ম হয়। রংপুর শহরতলীতেই পিতামাতার পরম স্নেহে লালিত পালিত হয়েছেন এই বীর যোদ্ধা। বড় হয়ে মেধা ও চৌকশ বুদ্ধিমত্তায় নিজেকে সৃজনশীল চিত্রকর হিসেবে তৈরি করেছিলেন। নিজেকে চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফিসহ যে-কোন সৃজনশীল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে পছন্দ করতেন। বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করার বিষয়ে তার ছিল বিশেষ দক্ষতা ও আগ্রহ। পাঠশালা-সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট থেকে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি (পেশাদার আলোকচিত্র) কোর্সের ওপর ডিপ্লোমা অধ্যয়ন শেষ করেছিলেন। তবে দাম্পত্য কলহে স্ত্রী’র সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর একমাত্র মেয়ে পদ্মপ্রিয় পারমিতাকে নিয়েই ছিল তাঁর বিচরণ। তবে চলতি বছর ‘গুটিপা’ নামের চামড়াজাত পণ্য তৈরির একটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে যোগদানের কথা ছিল সৃজনশীল এই তরুণের। তার আগেই আওয়ামী পশুদের নৃশংস হত্যার শিকার হয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন প্রিয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফটো জার্নালিস্ট হিসেবে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিভাবান এই তরুণ। ২০২৪’র ফেব্রুয়ারিতে মাল্টিমিডিয়া অনলাইন নিউজ পোর্টালটির ভিডিও জার্নালিস্ট পদ থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করেন তিনি। যেভাবে তিনি শহীদ হয়েছিলেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই ২০২৪ ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে আওয়ামী ঘাতক পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন। ঘটনার দিন সকাল ১১টা থেকে প্রিয়র মমতাময়ী মা নিউমার্কেট থানায় বসেছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ কোনভাবেই মামলা নিতে রাজি হয় না। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর লোকজনের সমাগম বেড়ে যাওয়ায় এডিশনাল কমিশনার (ডিএমপি) এসে রাত ১২ টার দিকে মামলা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রিয়জনদের অনুভূতি সাবেক সহকর্মী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহাবুব আলম শ্রাবণ বলেন, দীর্ঘ সময় এক সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে গেলে তাহির জামান প্রিয় অসম্ভব মেধাবী এবং বিচক্ষণ একজন মানুষ ছিল। দুর্দান্ত ক্যামেরা চালাতে পারতো। ছবি আঁকতে ভালবাসতো। ভীষণ আড্ডাবাজ মানুষ ছিল প্রিয়, আর সবচেয়ে বড় যে বিষয় সে একটা স্বপ্নবাজ মানুষ। নিজ দেশ নিয়ে সিনেমা বানানোর খুব ইচ্ছে ছিলো ওর। আমাকে প্রায় বলতো শ্রাবণ আমার মুভিটা খুব সুন্দর হবে দেখিস! তুই কিন্তু থাকবি। কোন কাজের আগেই প্লানিং করতো। ফুল খুব পছন্দ করতো, একটা মজার বিষয় ছিলো ও খুব ঘুমপাগল মানুষ ছিল। কখনও চলতি পথে রাস্তায় একটা ময়লা পড়ে থাকলে নিজ হাতে উঠিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতো। কোনদিন কখনও এমন শুনিনি কারও সাথে ওর ঝগড়াবিবাদ হয়েছে। সদাহাস্যজ্বল ওর নাম যেমন প্রিয় ও সবার কাছে তেমনই প্রিয় ছিলো। ওকে সবাই খুব স্নেহ করতো। অল্পতেই ভালোবেসে কাছে টানার অসম্ভব ক্ষমতা ছিলো প্রিয়র। সর্বশেষ মেয়েকে নিয়ে লেখা শহীদ তাহির জামান প্রিয়র ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো- শেয়ার করা সেই পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, “আমার মেয়ে পদ্মপ্রিয় পারমিতা। ৪ বছরে পা দিয়েছে পাখিটা। কাল থেকে ওর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু। প্রথম স্কুল পদ্মর। ওর বাবা ও মা একই সাথে আমিই। সিংগেল ফাদার, আবার মায়ের দায়িত্বও আছে। আমার অতীত যা ছিল সেটা সুখকর নয়। কিন্তু অনাগত ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অনেক অনেক সুখকর হবে ইনশাআল্লাহ। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়েটার জন্য।” প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা ২. শহীদের একমাত্র মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে একনজরে শহীদ সম্পর্কিত ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : তাহির জামান প্রিয় জন্ম : নব্বয়ের দশক পিতা : আবু হেনা মোস্তফা জামান মাতা : সামছি আরা জামান সন্তান : মেয়ে: পদ্মপ্রিয় পারমিতা, বয়স: ৪ বছর, পেশা: ছাত্রী, শ্রেণি: প্রথম বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : জেলা: রংপুর, উপজেলা: সদর শাহাদতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, সময়: সকাল, স্থান: ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডে, ঢাকা দাফন : নিজগ্রাম, পারিবারিক কবরস্থান