জন্ম তারিখ: ১৩ আগস্ট, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মারা যায়
হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদ ২০০৭ সালের ১৩ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন এবং মায়ের নাম মলিনা বেগম। তিনি নিজ গ্রামের বিদ্যাপীঠ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকার খিলগাঁও মোহাম্মাদিয়া হাফিজুল উলুম মাদরাসা থেকে পবিত্র কুরআন হেফজ সম্পন্ন করে পার্শ্ববর্তী আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম কওমি মাদরাসায় ভর্তি হন। তাঁর একটি ছোট ভাই রয়েছে। নাম জুনায়েদ আহমাদ। তিনিও পবিত্র কোরআনের হাফেজ।শহীদ জুবায়ের আহমেদের বাবা জনাব কামাল উদ্দিন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলায়। জনাব কামাল উদ্দিন অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার বাবা মারা গিয়েছিল। এরপর তিনি বড় ভাইয়ের কাছেই মানুষ হয়েছেন। পরবর্তীতে তার নানী ওসিয়ত করে যায় যে-তাদের পৈতৃক যতটুকু জমি ছিল সবটাই বড় ভাইকে দিতে হবে। সে অনুযায়ী পরিবার থেকে পাওয়া সকল জমি বড় ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন শহীদের বাবা কামাল উদ্দিন। বর্তমানে তাঁর কোনো প্রকার জায়গা জমি নেই। স্ব-পরিবার নিয়ে খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ গোড়ানে ভাড়া বাড়ীতে বসবাস করেন। সন্তানদেরকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার। যে কারণে দুই ছেলেকে কুরআনের হাফেজ বানিয়েছেন তিনি। শহীদের মা হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং আর বাবা কামাল উদ্দিনও ফুসফুসের ইনফেকশনে আক্রান্ত। ২৪ এর বিজয় উৎসব আন্দোলনের শুরু থেকেই ঘাতক দালাল পুলিশ বাহিনী ও স্বৈরাচারী সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে আক্রমন চালাতে থাকে। ২রা জুলাই থেকে ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। কর্মসূচী ভেস্তে দিতে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, ছড়রা গুলি, গুম, খুন, নির্যাতন, মামলা করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালিত দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশীয় অস্ত্র ও রাইফেল নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে আওয়ামীর দাগী সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘদিন আন্দোলন চলার ফলে ভীত সঞ্চারিত হয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ কারফিউ ঘোষণা করে তৎকালীন খুনি শাসক শেখ হাসিনা। সেই কারফিউ ভেঙে রাজধানীর অলিগলিতে অবস্থান নেয় আপামর ছাত্র-জনতা। এরপর বেলা দুইটায় গণমাধ্যমে খবর আসে, পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। ঢাকার রাজপথসহ সারাদেশে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতা বিজয় উল্লাস করতে থাকেন। যে মাসে জন্ম তাঁর সে মাসেই মৃত্যু! তফাৎ শুধু সনের। সেই মাস কী তাহলে উৎসবের রইলো? না কী শোকের? শহীদের প্রেক্ষাপট ০৫ আগস্ট ২০২৪ সারাদেশের জনগণ গনভবন ঘেরাও কর্মসূচী পালন করে। সাধারণ জনতা ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে শাহবাগে মিলিত হয়। পরবর্তীতে একসাথে গনভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ফলে বাধ্য হয়ে হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যায়। সারাদেশে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিছিলে যোগদানের উদ্দেশ্যে বিকালে বাসা থেকে বের হন জুবায়ের। মিছিল সামনের দিকে অগ্রসর হয়। চারিদিক থেকে স্বৈরাচার হাসিনার দোসর পুলিশ বাহিনী গুলি চালাতে থাকে। হঠাৎ কয়েকটি গুলি জুবায়েরের পেটে এসে বিদ্ধ হয়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। উপস্থিত ছাত্র জনতা দ্রুত তাঁকে মুগদা মেডিকেলে নিয়ে যায়। বুক এবং পেট থেকে ফিনকি দিয়ে যেন রক্তের বন্যা বয়ে যায়। তাঁকে বাচাতে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সব রকম প্রচেষ্টা করে। তারপরও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ঘাতকের গুলিতে হাসপাতালের বেডে সন্ধ্যা ০৭:৩০ এর সময় শাহাদত বরণ করেন শহীদ জুবায়ের। পরবর্তীতে শহীদের লাশ গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়। নিজ এলাকা লাহিনীপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হন শহীদ দেশপ্রেমিক বীর হাফেজ জুবায়ের আহমাদ। ‘আশ্চর্য লোভ ছিল আমার, লোভ ছিল বেঁচে থাকবার, তবে, মাথা উঁচু করে, অন্যায়, অনিয়ম, দাসত্বে মাথা নোয়াবো না বলে, আমি মিছিলে গিয়েছিলাম, তথাকথিত সমরাস্ত্রের নির্লজ্জ বুলেট আমার মাথায় আঘাত করে! মৃত্যু সমুদ্র ঝড়ে আমি লাশ হলাম।’ এক নজরে শহীদ জুবায়ের আহমাদ নাম : হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদ পিতার নাম : মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন মাতার নাম : মলিনা বেগম পেশা : ছাত্র মাদ্রাসার নাম : আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম খিলগাঁও, ঢাকা-১২১৯ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: লাহিনীপাড়া, ডাকঘর: মোহিনী মিল, থানা: কুমারখালী, জেলা: কুষ্টিয়া ডেথ সার্টিফিকেট নং : ২০০৭২৬৯২০০২২৮৩৭৩৩ মৃত্যুর তারিখ : ০৫/০৮/২০২৪ কিভাবে মারা যায় : পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে পরবর্তীতে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মারা যায় কবরস্থান : লাহিনীপাড়া কেন্দ্রীয় গোরস্থান, লাহিনীপাড়া, কুমারখালী, কুষ্টিয়া জন্ম-তারিখ : ১৩/০৮/২০০৭; বয়স: (১৭)