Image of মোঃ শহিদ হোসেন

নাম: মোঃ শহিদ হোসেন

জন্ম তারিখ: ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৭ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র শাহাদাতের স্থান: উত্তরা, এয়ারপোর্ট সংলগ্ন, ঢাকা

শহীদের জীবনী

মোঃ শহিদ হোসেনের বাড়ি জামালপুর জেলায়। তার বাবার নাম আব্দুর রহমান এবং মায়ের নাম সুন্দরী বেগম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গত ২৭ জুলাই ২০২৪ ঢাকার উত্তরা এয়ারপোর্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। ঘটনার প্রেক্ষাপট কোটাপ্রথা নিয়ে এবারের আন্দোলন ছিল দ্বিতীয় দফা আন্দোলন। মূল আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে আন্দোলন থেমে গিয়েছিল। পরে কয়েক বছর বিরতির পরে আদালতের এক রায়ের পরে দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু হয় গত জুন ২০২৪ থেকে। এরপর তা খুব শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভা থেকে ছাত্রলীগের নির্মম হামলার কারণে ক্রমান্বয়ে সহিংস রূপ নেয়। এ অবস্থায় আন্দোলনকারীদের দমাতে সরকার সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় ১৭ জুলাই। ফলে বন্ধ থাকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অনলাইনের সকল কার্যক্রম। ১৮ জুলাই ছাত্রদের শান্তি পূর্ণ কোটা বিরোধী সমাবেশে ছাত্রলীগ ও পুলিশ, অতর্কিত আক্রমণ করে। ফলে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী আহত ও নিহত হয়। প্রতিবাদে পরদিন আবার ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পরে আরও অধিক সংখ্যক ছাত্র-জনতা রাজপথে অবস্থান নেয়। স্কুল-কলেজের ড্রেস পরে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকেরাও রাজপথে নেমে আসে। সবাই ভেবেছিল শেখ হাসিনা জনদরদী। তিনি বিষয়টি সহজভাবে সমাধান করবেন। কিন্তু তিনি রাজাকারের নাতি বলে কটাক্ষ করলেন। ১৮ জুলাই স্বৈরাচারি সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী আগের দিনের চেয়েও অত্যন্ত নির্মমভাবে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ, ছররা গুলি, হ্যান্ডগ্রেনেড, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও উঁচু ভবন থেকে স্নাইপার রাইফেলের মাধ্যমে ঝাপিয়ে পড়ে। ঢাকার উত্তরা, মিরপুর, বাড্ডা-রামপুরা, যাত্রাবাড়ি, সাভার ছিল যেন যুদ্ধ ক্ষেত্র। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, মাদারিপুর, ফেনী, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, রংপুরসহ সর্বত্র ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয় বিপুলভাবে। দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেসব অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার করা হয় তার সবই সরকারি দলীয় বাহিনী অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করে। ট্যাংক নিয়ে রাজপথ দখলে নেয় পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব। আওয়ামীলীগ প্রত্যেক হাসপাতালে নির্দেশ দিল, গুলিতে আহত কোন ছাত্রকে চিকিৎসা দেওয়া যাবেনা। গুলিতে নিহত হলে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাসপাতাল গুলো নিজেদের রক্ষার স্বার্থে প্রকাশ্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকে। অনেক হাসপাতালে ছাত্রদের বলপ্রয়োগ করে চিকিৎসা সেবা দিতে বাধ্য করাতে হয়। এর আগে দেশপ্রেমিক ছাত্ররা কোটার বিষয়টি নিস্পত্তি করতে অনুরোধ জানানোয় খুনি হাসিনা তাদেরকে দম্ভ করে রাজাকার বলে কটাক্ষ করেছিল। এর প্রেক্ষিতে তাৎক্ষনিক ছাত্ররা মিছিল বের করেছিল। তারা স্লোগান দিল- ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলে তীব্র প্রতিবাদ। শেখ হাসিনার চাটুকার ও প্রকৃত রাজাকারের নাতি বিকৃত লেখক জাফর ইকবাল ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। একারণে পরদিন থেকে সকল প্রকাশনী ধীরে ধীরে তার লেখা না ছাপানোর পক্ষে বিবৃতি দিতে থাকে। মূলত রাজাকার শব্দটি ১৬ বছরের অবৈধ শাসনে আওয়ামী লিগের অন্যতম অস্ত্র ছিলো। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ কারী দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে এমন শব্দ দিয়ে অপবাধ দিতো এবং নির্মম নির্যাতন চালাতো। হাসিনার সাথে আপোষ না করায় তাদের অনেক নেতাকর্মীকে গুম, খুন, জেলে নিক্ষেপ করা সহ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো। এই শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে প্রতিবাদীদের নির্যাতন করে যেতো। অনেক তরুণের স্বপ্ন ‘রাজাকার’ অভিযোগ তুলে নষ্ট করে দিত আওয়ামীলীগ। শহিদ হোসেন ছিলেন একজন প্রতিবাদী যুবক। তার স্বপ্ন ছিলো দেশের সেবা করা। তার দুঃখী মায়ের মুখে হাসি ফোঁটানো। শহীদ বুঝতে পেরেছিলেন এ সরকার অবৈধ কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে অদক্ষ, চাটুকার, দলীয় কর্মীদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে তার মতো সাধারণ ছাত্রকে বঞ্চিত করবে। শহীদ হোসেন চাইলে ছাত্রলীগের বাহিনীতে যোগ দিয়ে সরকারি চাকরি পেতে পারতেন। কিংবা অর্থের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, যুবলীগের সাবেক ধর্ষক ও সন্ত্রাসী মোজাম্মেল হকের কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ কিনে নিয়ে সরকারী চাকরীতে যুক্ত হতে। কিন্তু তিনি একজন বিবেকবান ছাত্র ছিলেন। তার পারিবারিক শিক্ষা তাকে অন্যায়ের সাথে যুক্ত হতে দেয়নি। কোটা আন্দোলনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে যে সকল বীর তরুণ দক্ষ হাতে ভূমিকা রেখেছিলেন শহীদ হোসেন তার অন্যতম। ১৯ জুলাই এর পরবর্তী দিনগুলো ছিলো অত্যন্ত ভয়াবহ। ঘরে ঘরে গিয়ে ছাত্রদের আটক করা হচ্ছিল। আন্দোলন কারী সন্দেহ হলে টোকাই লীগ নামে খ্যাত ছাত্রলীগের বর্বর হামলার স্বীকার হতে হতো। অসংখ্য ছাত্রজনতা প্রতিদিনই গ্রেফতার, আহত, ও নিহত হতে থাকে। ২৭ জুলাই একটি কালোদিন। এ দিন দেশ হারায় শহিদ হোসেনের মত একজন শিক্ষিত দেশপ্রেমিক নাগরিককে যার স্বপ্ন ছিলো দেশগড়ার। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে প্রাণ দিতে হয়। এ দিন বিকাল ৪ টায় তিনি উত্তরা এয়ারপোর্ট এলাকায় কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা কালে আওয়ামী পুলিশ দ্বারা গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘন্টা খানেক এর মধ্যে শাহাদাত বরণ করেন। পুলিশি নির্যাতনের মধ্যে শহিদ হোসেনের লাশ দ্রুত কবরস্থ করতে হয়। পরদিন ২৮ জুলাই নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা: শহিদ হোসেন এর গ্রামে ভিটেবাড়ি ছাড়াও ৫ শতাংশ জমি আছে। তাছাড়া আর কোন সম্পত্তি নাই। ছোট ভাই শিহাব সৌদি আরবে স্বল্প বেতনে চাকরি করে। পরিবারের বক্তব্য নিহতের বিধবা মা বলেন, আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। আমার সন্তানকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো। শহিদের বোন বলেন, আমার ছোট ভাইকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আমরা উপকৃত হবো। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মো: শহিদ হোসেন পেশা : ছাত্র, জন্ম: ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ বাবা : আব্দুর রহমান (মৃত) মা : সুন্দরী বেগম বোন : ফাতেমা (বিবাহিত) ভাই : শিহাব (১৯), প্রবাসী স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: মদন গোপাল, ইউনিয়ন: রায়ের ছড়া, থানা: মাদারগঞ্জ, জামালপুর ঘটনার স্থান : উত্তরা এয়ারপোর্ট আক্রমনকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ২৭ জুলাই, ২০২৪, বিকাল ৪ টা (আনুমানিক) আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২৭ জুলাই ২০২৪, উত্তরা এয়ারপোর্ট বিকাল ৫টা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : জামালপুর প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা করা ২. শহীদের ছোট ভাইয়ের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আব্দুল নুর

 মো: সাইফুল ইসলাম

ইসমাইল

মোঃ জামাল মিয়া

সাব্বির ইসলাম

মো: মাজিদুল

মো: সবুজ মিয়া

জোবায়েদ

কুদ্দুস মিয়া

হৃদয় মিয়া

রমজান আলী

সাফওয়ান আখতার সদ্য

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo