Image of শফিকুল ইসলাম

নাম: শফিকুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১ ডিসেম্বর, ১৯৯২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : দিনমজুর শাহাদাতের স্থান : সাভার, ঢাকা

শহীদের জীবনী

শফিকুল ইসলাম ১৯৯২ সালে ১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবু বক্কর ও মাতার নাম মোছা: সাহেদা বেগম। শফিকুল ইসলাম পেশায় দিনমজুর ছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন ঘাতক পুলিশ তাকে গুলি করে হত্যা করে। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শেখ হাসিনা পৃথিবীর ইতিহাসে এক নির্দয় নারী শাসক। মৌমাছির চাকের মধ্যে রানী মৌমাছি যেভাবে পুরুষ মৌমাছিগুলোকে নিজের প্রয়োজন শেষে নির্দয়ভাবে হত্যা করে এবং তার মত বেড়ে ওঠা নারী মৌমাছিদের ক্ষমতা হারানোর আশংকায় বেঁচে থাকতে দিতে চায়না। হাসিনাও এমনই ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা রেন্টু তার ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইতে এই পিশাচ নারী সম্পর্কে যে বিবরণ দিয়েছেন সেসব অতিরিক্ত ও বাড়াবাড়ি মনে হলেও গত ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে দেশবাসী উপলব্ধী করেছে উক্ত বইয়ের তথ্য অতিরঞ্জিত নয় বরং শতভাগ সত্য! শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে বেছে নিয়েছিল অদক্ষ, মাতাল, দূর্নীতিপরায়ন, নিষ্ঠুর ব্যক্তিদের। এদের অনেকে ভারতের হাতে প্রশিক্ষিত ছিল। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে সকল বিভাগ থেকে দেশপ্রেমিক ও সৎ ব্যক্তিদের সরিয়ে দিয়ে আওয়ামীলীগের দূর্নীতিবাজ ও নিষ্ঠুর ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়। ফলে সর্বত্র অব্যবস্থাপনা দেখা দেয়। লুট হতে থাকে দেশের সম্পদ। এসব কর্মকর্তারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করতে থাকে। প্রথম আলো পত্রিকার ২ ডিসেম্বর ২০২৪ সালের তথ্য মতে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিদেশে পাচার করা হয়েছে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বা ২৮ লাখ কোটি টাকা। প্রতি বছরে গড়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামীলীগ সরকারের রাজনীতিবিদ, আওয়ামীলীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী ও সরকারী আমলারা এই অর্থ পাচার করেছিলেন। টাকা গুলো পাচার করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, হংকং, মালয়শিয়া ও ভারতে। পাচারের টাকায় গাড়ি, বাড়ি তৈরী করা হয়েছে। দুবাইয়ে বাংলাদেশীদের বাড়ির সংখ্যা ৫৩২ টি। বাড়ির ক্ষেত্রে ২য় অবস্থানে আছে মালয়শিয়া। প্রথম আলো আরো জানায়, ঘুষ নেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের নেতারা নিয়েছেন ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং আওয়ামীলীগের নিয়োগকৃত আমলারা ঘুষ নিয়েছেন ৯৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও শেয়ারবাজার থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকা এবং প্রকল্প থেকে লুটপাট করা হয়েছে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত আওয়ামীলীগের জঘন্য ধরণের খুনি আসামীদের ছেড়ে দেয়া শুরু করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত প্রথম ৫ বছরে ২৮ জন খুনি আসামী ছাড়া পেয়ে যায়। দেশটা হয়ে যায় অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। দেশের মানুষ প্রতিবাদ করা ভুলে যেতে থাকে। কারণ প্রতিবাদী দেশপ্রেমিকেরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা। গ্রেফতার, গুম, খুন, অথবা আপষ রফা করে জীবন কাটাতে হয়। অনেককে দেশ থেকে ভিন্ন দেশে পালিয়ে যেতে হয়েছে। একসময় জঘন্য দেশের উদাহরণ হিসেবে মগের মুল্লুকের কথা বলা হলেও আওয়ামীলীগের অত্যাচারের মাত্রা দেখে জনতা ভাবতে বাধ্য হয় হাসিনা মুল্লুক নিঃসন্দেহে মগের মুল্লুকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। শফিকুল ইসলাম ছিলেন সাধারণ দরিদ্র জনতার প্রতিচ্ছবি। দিন এনে দিন খাওয়া পুরুষ। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়ার চিন্তা ছাড়া তাকে আর কোন কিছু ভাবাতে পারেনা। জুলাই মাস জুড়ে ঘর থেকে যতবারই বের হয়েছিলেন ততবারই রাস্তায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছিল। তিনি দেখেছেন তার সামনে অনেক ছাত্র-জনতার মোবাইল ফোন চেক করে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে। সরকারি সাধারণ ছুটি, কারফিউ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হওয়ায় তার কর্মক্ষেত্রে বেশ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ৪ আগস্ট ছাত্ররা ইট ও লাঠি দিয়ে অস্ত্রধারী আওয়ামীলীগের খুনি সন্ত্রাসী, ঘাতক পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবকে প্রতিরোধ করা শুরু করে। সারাদেশে ১৩০ জনের মত ছাত্র-জনতা ও কিছু আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী নিহত হয়। এর ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনা আতংকিত হয়ে পড়ে। ছাত্র নেতারা ৯ দফা থেকে ১ দফা কর্মসূচী ঘোষণা দেয়। ৫ আগস্ট মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা থাকার পরেও জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের সকল স্তরের কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসে। সড়কে সরকার দলীয়দের গুলির মুখে অনেকে প্রাণ ত্যাগ করলেও সবাই গণভবন অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকে। দুপুর ১ টায় খবরে প্রকাশ হয় খুনি হাসিনা ছোট বোনকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। সংবাদটি আনন্দের ছিল। জনতা মিস্টি বিতরণ করে, ঈদ মুবারক বলে কোলাকুলি করতে থাকে, নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর স্লোগানে সারাদেশের রাজপথ প্রকম্পিত হতে থাকে। হাজার কোটি টাকা করে ব্যয় করা ফ্যাসিবাদের উৎস সাবেক স্বৈরাচারী শাসক শেখ মুজিবের মূর্তি ও ম্যুরাল ভাঙ্গতে থাকে জনতা। মূর্তিতে ঘৃণার সাথে থুথু ও জুতা নিক্ষেপ করে। শফিকুল তাঁর বন্ধুদের সাথে হাসিনার পলায়নের খবরে আনন্দে রাজপথে বেরিয়ে আসেন। আনন্দ মিছিলে যুক্ত হন। কিন্তু উনি জানতেননা ওটাই ছিল তার শেষ আনন্দ-উল্লাস। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার নির্দেশ ছিল গণহত্যা পরিচালনা করার। হিংস্র আওয়ামী পুলিশ বাহিনী সাভার এলাকায় শফিকুল ইসলামের মাথায় গুলি করে। ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অর্থনৈতিক অবস্থা শফিকুলের সন্তান আয়েশা একজন গার্মেন্টস কর্মী। রফিকুল ইসলাম ভ্যান চালক এবং অপর সন্তান রবিউল যোগালীর কাজ করেন। তারা সাভারে ভাড়া বাসায় থাকেন। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : শফিকুল ইসলাম জন্ম : ১ ডিসেম্বর ১৯৯২ পেশা : দিনমজুর পিতা : মৃত আবু বক্কর মাতা : মোসা: সাহেদা বেগম সন্তানদের তথ্য : ১. আয়েশা আক্তার, গার্মেন্টস কর্মী ২. রফিকুল ইসলাম, ভ্যান চালক, ৩. রবিউল ইসলাম, যোগালী স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : ১৩০/১০, গ্রাম: ভাগলপুর,দক্ষিন দরিয়াপুর, ডাকঘর: সাভার, ঢাকা ঘটনার স্থান : সাভার, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৪ টা (আনুমানিক) আঘাতের ধরন : বুকে গুলি মৃত্যুর তারিখ ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, সাভার শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : সাভার তালবাগ কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাওন

শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন

মো: রফিকুল ইসলাম

তামিন হৃদয়

ইসমাইল হোসেন রাব্বি

মো: শুভ

জসিম ফকির

মো: গণি মিয়া

মো: আদিল

দীপ্ত দে

শেখ হৃদয় আহমেদ শিহাব

মাহবুবুর রহমান সোহেল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo