Image of বাবুল মিয়া

নাম: বাবুল মিয়া

জন্ম তারিখ: ২ মার্চ, ১৯৮০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ড্রাইভার শাহাদাতের স্থান : উত্তরা, মায়াবি হাসপাতাল, ঢাকা

শহীদের জীবনী

বাবুল মিয়া ১৯৮০ সালের ২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবুল কাশেম এবং মায়ের নাম রাহেলা বেগম। বাবুল মিয়া পেশায় ড্রাইভার ছিলেন। তিনি উত্তরা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার গাড়ি চালাতেন। বাবুল মিয়ার ৩ সন্তান, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে লিজা আক্তার বিবাহিত, ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, আর ছেলে শুভ হাফেজি পড়ে। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করে, যার ফলে জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন পুনরায় জোরদার হয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভের পর, ১৫ জুলাই আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর উত্তেজনা বেড়ে যায়। পরবর্তী দিনগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যার মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি, সেইসাথে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের সাথে সহিংস সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষের ফলে অসংখ্য মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে রয়েছে আন্দোলনকারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, দলীয় সদস্য, পথচারী ও শিশুরাও। আগস্টের শুরুর দিকে এই সহিংসতার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে, প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় এক হাজার পর্যন্ত অনুমান করা হয় এবং আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। এতো ব্যাপক প্রাণহানি সত্ত্বেও হাসিনা সরকার এই গণহত্যার দায় অস্বীকার করে এবং সহিংসতার জন্য অন্যান্য কারণকে দায়ী করে। কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের সূচনা ২০১৮ সালে হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তখন চাকরিতে কোটা তুলে দিয়েছিল সরকার। এ বছরের ৫ জুন হাইকোর্টের এক রায়ে কোটা পুনর্বহাল হলে ‘‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’’ ব্যানারে শুরু হয় নতুন আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে ২ জুলাই থেকে মিছিল-সমাবেশ শুরু করে। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগকে কেন্দ্র করেই চলছিল শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। প্রায় প্রতিদিন শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিল তারা। ধীরে ধীরে আন্দোলনের পরিসরও বাড়তে থাকে পুরো দেশজুড়ে। তবে বিক্ষোভের অনলে ঘি ঢালেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। ১জুলাই ২০২৪ থেকে ৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে সংগঠিত হয় এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তি পুনঃবহালের দাবিতে টিএসসি এলাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরের কয়েকদিন দেশের অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে মিছিল-সমাবেশ করে। ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৫ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন ৬ জুলাই শিক্ষার্থীরা 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির ডাক দেয়। ৭ জুলাই এ সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করা হয়। ব্যাপক বিক্ষোভে অচল হয়ে যায় রাজধানী। পরের দিনও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৯ জুলাই সারা দেশে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা ব্লকেড অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ১০ জুলাই এ কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের আদেশের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা, ৭ই আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ। ১৪ জুলাই কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। পরবর্তীতে ব্যার্থ বিদেশ সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে কটাক্ষ করে। সারাদেশে শিক্ষার্থীরা ফুসে উঠে। তাৎক্ষনিক ছাত্র-ছাত্রীরা রাজপথে নেমে এসে প্রতিবাদে মুখর হয়। তারা স্লোগান দেয়- ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা। ১৬ জুলাই সারা দেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকার সমর্থকরা। এতে ব্যপক আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটে। রংপুরে আন্দোলনকারী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের বুলেটে নিহত হন। বিকেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে। ১৭ জুলাই আগের রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের বের করে দেয় প্রতিবাদী সাধারণ ছাত্ররা। এছাড়া নিহতদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গায়েবানা জানাজা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষও ঘটে। এদিন বিক্ষোভের কেন্দ্রের ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। শীর্ষ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি। রাতেই যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘাতের সূত্রপাত হয়। যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ওই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে সরকার। ১৮ জুলাইতে দেশব্যাপী ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে লাঠিচার্জ ও গুলি করা হয়। অনেক ছাত্র আহত ও নিহত হয়। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে সরকার থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিহতদের পরিবারকে নানা ভাবে লাঞ্চিত করা হয়। এসময়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশ ছিল প্রায় অচল। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পালটাপালটি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নিহত ও আহত হয়েছেন অনেকেই। ফলে সারা দেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এদিন রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাবুল মিয়া ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার গাড়ি ড্রাইভিং করে উত্তরায় অবস্থিত উত্তরা ব্যাংকে আসেন। এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিল। দুপুরে খুনি হাসিনার নির্দেশে পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলিবর্ষণ শুরু করে। বাবুল মিয়া জোহরের নামাজ পড়ে মসজিদের বাইরে বের হন। এবি ব্যাংকের সামনে আসার পরে গুলিবিদ্ধ হন। তার চোখে ও বুকে গুলি লাগে। গুলিতে চোখ গলে যায়। উত্তরা মায়াবী হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় রাত ২টায় মৃত্যুবরণ করেন। অর্থনৈতিক অবস্থা বাবুল মিয়া একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে সংসারের হাল ধরেছেন তার স্ত্রী। বর্তমানে তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করছেন। নদী ভাঙ্গনের কারণে তাদের গ্রামে কোন জমি নেই। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : বাবুল জন্ম : ২ মার্চ ১৯৮০ পেশা : ড্রাইভার পিতা : আবুল কাশেম মাতা : রাহেলা বেগম সন্তানদের নাম : লিজা আক্তার (বিবাহিত), মোঃ শুভ (১৪ পারা হিফজ), নুরজাহান, ৮ম শ্রেণি বর্তমান ঠিকানা : ২৯/এ, ভোলা বস্তি, এইচ ২৪, পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : নাদের মিয়ার হাট, ইলিশা, ভোলা সদর, ভোলা ঘটনার স্থান : উত্তরা এবি ব্যাংক আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : দুপুর ১ টা ৪০ আঘাতের ধরন : চোখে ও বুকে গুলি মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯ জুলাই, রাত ২টা, মায়াবী হাসপাতাল শহীদের কবরের অবস্থান : দুয়ারি পাড়া কবরস্থান, পল্লবী, ১নং গেইট প্রস্তাবনা : ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাকিল হোসেন

মো: সোহেল

সাবিদ হোসেন

মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব

রিয়া গোপ

রথিন বিশ্বাস

মো: শুভ

মো: নজরুল ইসলাম

মো: রাসেল গাজী

আল আমিন ইসলাম (সেলিম)

রাইফা

মো: গণি মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo