জন্ম তারিখ: ১০ জানুয়ারি, ১৯৮৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ব্যবসা শাহাদাতের স্থান : মানিকনগর, বিশ্বরোড, ঢাকা
মো: জালাল উদ্দিন ১৯৮৩ সালের ১০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহছন রাড়ী এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। তিনি ছিলেন বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম মোছাঃ মলি। তার দুই ছেলে রয়েছে। তাদের নাম হলো মো: সিজান এবং মো: শিহাব। দুই সন্তান পড়ালেখা করে। স্ত্রী গৃহিণী। পরিবারের একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি মোঃ জালাল উদ্দিন ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্রুজনতার গণঅভুত্থানের সময় আওয়ামী সরকার দমনপীড়ন ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। বিতর্কিত কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল ও ব্যাপক গণঅসন্তোষের জের ধরে এই গণহত্যা অভিযান পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন- পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর একাংশ আর ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা ‘র’। ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করে, যার ফলে জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন পুনরায় জোরদার হয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভের পর, ১৫ জুলাই আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। রক্তাক্ত হয় ছাত্র-ছাত্রীরা। হাসপাতালে গিয়ে আবারও আহতদের উপরে হামলা করে ছাত্রলীগ। পরবর্তী দিনগুলোতে অর্থাৎ জুলাই মাস জুড়ে বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা আন্দোলনে সরকারী বাহিনীর হামলা, গুলি, গ্রেনেড নিক্ষেপের ফলে অসংখ্য মানুষ আহত ও নিহত হয়। আটক হয় হাজার হাজার। আগস্টের শুরুর দিকে এসে দেখা যায় এই সহিংসতার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে, প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় আটশতাধিক পর্যন্ত অনুমান করা হয় এবং আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সামাজিক-রাজনৈতিক বৈষম্য জাতির মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ২০ জুলাই থেকে সারাদেশে কারফিউয়ের মধ্যে ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভ কারীদের সংঘাত চলে। আওয়ামীলীগ যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে রাজপথে হাজির হয়। অপরদিকে সাধারণ ছাত্র-জনতা ছিল খালি হাতে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বিপ্লব বিরল একটি ঘটনা। অর্থাৎ ভারতের অনুগত রাষ্ট্র তার নাগরিকদের বিনাশ করতে যুদ্ধাস্ত্র হাতে অপরদিকে নাগরিকেরা ছিল সম্পূর্ণ খালি হাতে। সরকারী বাহিনীর আক্রমণে বহু বিক্ষোভকারী হতাহত হন। আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রির সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারীর বৈঠক হয় এদিন। আন্দোলনকারীরা আট দফা দাবি পেশ করেন। এই বৈঠক নিয়ে সমন্বয়কদের মধ্যে মতভেদের খবর আসে। শিবিরের সহযোগিতায় পরে ৯ দফা দাবি পেশ করা হয়। এই নয় দফা সরকারকে কাঁপিয়ে দেয়। জালাল উদ্দিন ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ঘটনার দিন জালাল উদ্দিন মাগরিবের নামাজ পড়ে বাজার করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকার কারনে আন্দোলনকারীদের দমন-পীড়ন প্রেক্ষাপটে দোকান-পাট, বাজার অনেকটা বন্ধ ছিলো। বাজার ও ঔষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি বাসা থেকে বের হন। এছাড়াও তার রসমালাই ও ছানাবিক্রির দোকানটি ঠিক আছে কিনা দেখে আসা খুব প্রয়োজন। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কবলে পড়লে তিনি পথে বসবেন। অপরদিকে শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিলো কারফিউতে দেখা মাত্র গুলি করার। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব এবং আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র হাতে ওতপেতে বসে ছিলো রাজপথে। জালাল উদ্দিন কে দেখা মাত্র তারা গুলি ছোড়ে। তিনি ঐসময় মানিকনগর বিশ্বরোডে তার দোকান ঠিক আছে কিনা দেখার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশের নিক্ষিপ্ত গুলি তার গায়ে এসে বিদ্ধ হয় এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরন করেন। অর্থনৈতিক অবস্থা গ্রামে ভিটেবাড়ি সংক্রান্ত ২ শতাংশ জমি আছে। শহীদ জালাল উদ্দিন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি ছিলেন। তিনি রসমালাই এবং সানা বিক্রি করতেন। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তার মৃত্যুতে পরিবার এখন অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মো: জালাল উদ্দিন জন্ম : ১০/০১/১৯৮৩ পেশা : ব্যবসা পিতা : মোহছন রাড়ী মাতা : ফাতেমা বেগম স্ত্রী : মোছা: মলি সন্তান : ১. মোঃ সিজান (১২), ৬ষ্ঠ শ্রেণি, মানিকনগর আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা ২. মো: শিহাব (৭) স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : আনু সরকার কান্দি, ওয়ার্ড নং ০৯, আনন্দ বাজার জামে মসজিদ কবরস্থান, সখিপুর, শরিয়তপুর ঘটনার স্থান : মানিকনগর, বিশ্বরোড, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : সন্ধ্যা ৭ টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২০ জুলাই, সন্ধ্যা ৭ টা শহীদের কবরের অবস্থান : আনন্দ বাজার জামে মসজিদ কবরস্থান প্রস্তাবনা : ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা