Image of মোস্তফা জামান সমুদ্র

নাম: মোস্তফা জামান সমুদ্র

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, প্রতিষ্ঠান : ঢাকা আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ শাহাদাতের স্থান : ডেলটা হাসপাতাল, ঢাকা

শহীদের জীবনী

ডাক্তাররা জানায়- ‘‘আপনাদের ছেলে আর বেঁচে নেই, ছেলের মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, চিৎকার করে বারবার বলছিলাম ওর হার্ট চলছে।” আজ এক অনন্যগাঁথা নিয়ে লিখতে বসেছি। আজ লিখব এক সাহসী সৈনিকের গল্প। যিনি জুলাই ২৪ এর ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন। গত ১৯ জুলাই ২০২৪ ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন মোস্তফা জামান সমুদ্র। চলতি বছর ঢাকার আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৯৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা এই তরুণ আমাদের জন্য প্রেরনা। তাঁর জীবনের পথচলা কেবল মাত্র অধ্যায় নয় বরং একটি চেতনা। যা আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এবং ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করতে শেখায়। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সমুদ্র ছিলেন সবার ছোট। বড় ভাই মোর্শেদুজ্জামান পিএইচডি করে জাপানে আছেন। বোন মিরানা জামান স্বামীর সঙ্গে ফিনল্যান্ডে বসবাস করছেন। ছোট থেকে সমুদ্র স্বপ্ন দেখতেন দেশেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। তবে সব স্বপ্ন আওয়ামী হায়েনারা চুরমার করে দিয়েছে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া গ্রামে মনিরুজ্জামান তাজুল ও মাসুদা জামানের কোল আলোকিত করে ২০০৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন সমুদ্র। তিনি যেদিন শাহাদাত বরণ করেন ঠিক তার একদিন পরে সিদ্বেশ্বরী কলেজে তাঁর ভর্তির কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে দাফনের জন্য নেওয়া হলো মুন্সিগঞ্জে। সমুদ্র’র পিতা বলেন, “সিদ্বেশ্বরী কলেজ থেকে ভর্তি ফরম নিয়ে এসেছিলাম। রবিবার ভর্তির কথা ছিল। কিন্তু ছেলেটা শুক্রবারেই মারা গেল”। ছেলের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে ঢাকার রামপুরায় মহানগর প্রজেক্টের ভাঁড়া বাসা ছেড়ে পরিবার নিয়ে গ্রামে ফিরে গিয়েছেন শহীদ পরিবারটি। শাহাদাতের স্মৃতিপট সন্তানের শাহাদাতের বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর পিতা জনাব মনিরুজ্জামান তাজুল। তিনি বলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই মোস্তফা জামান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। গত ১৯ জুলাই সকালে বাসা থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে রামপুরায় ডিআইটি রোডে নেমে আসে। বেলা ৩টায় আমি জুমার নামাজ শেষে বাসায় এসে ভাত খেতে বসি। আর সমুদ্রের মা নামাজে দাঁড়ায়। বারবার আমি সমুদ্রর ফোনে কল করছিলাম। একপর্যায়ে ওর বন্ধু আরাফাত কল রিসিভ করে জানায়, “ সমুদ্র পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ডেলটা হাসপাতাল আছে। তাড়াতাড়ি এখানে আসেন।” ও সেদিন বলতে পারেনি আমার ছেলে মারা গিয়েছে। খাবার ফেলে দৌড়ে রাস্তায় গোলাগুলি উপেক্ষা করে ওর আম্মু আর আমি ডেলটা হাসপাতাল গিয়ে দেখি পাঁজরে গুলিবিদ্ধ আমার ছেলে খালি গায়ে মেঝেতে পড়ে আছে। ডাক্তাররা জানায়, আমাদের ছেলে আর বেঁচে নেই। ছেলের মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। চিৎকার করে বারবার বলছিলাম ওর হার্ট চলছে। ওর শরীর এখনো গরম আছে। সর্বশেষ ওকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে বেটার লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেও ডাক্তাররা নিশ্চিতভাবে জানিয়ে দেন আমার ছেলে আর বেঁচে নেই। তারা বলেন- একটি বুলেট সমুদ্রের হাত ভেদ করে পাঁজরে ঢুকে যায়। এর ফলে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়ে সে মারা যায়। সেদিন রাতেই নিজ গ্রামে এনে জানাজা শেষে দাফন করি তাকে। এর আগের দিন সমুদ্র আন্দোলনে গিয়ে পায়ে ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে বাসায় আসে। ঘটনার দিন নিষেধ করেছিলাম বাইরে যেতে। তার পরও সকালে বন্ধুদের সঙ্গে সে রাজপথে নেমে আসে। প্রিয়জনদের অনুভূতি ছেলে হারানোর শোকের মধ্যেও আতঙ্ক কাটছে না শহীদ সমুদ্রর বাবা মনিরুজ্জামান তাজুলের। নতুন করে আর কোনো ঝামেলায় পড়তে চান না তাঁর পরিবার। তিনি বলেন, “ ছেলে ফিরে পাব না। আমরা আর কোনো ঝামেলায় পড়তে চাই না। কারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আদরের সন্তান দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। ছেলের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি যেন দেওয়া হয়। সরকার যেন সব শহীদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়। আমার ছেলে মোস্তফা জামান সমুদ্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক ছিল। সমুদ্র দেশের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছে। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সপ্তম শ্রেণিতে পড়তাম। সে সময় যুদ্ধ দেখিনি। তবে ঢাকার সদরঘাটে ৮ থেকে ১০ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখেছিলাম। সহ্য করতে না পেরে গ্রামের বাড়ি চলে এসেছিলাম। ১৯ জুলাইও যুদ্ধ দেখেছি। নিজের ছেলেসহ একসঙ্গে হাসপাতালে লাশের দীর্ঘ সারি দেখেছি। মা-বাবা-স্বজনদের আহাজারি দেখেছি।” শহীদ মাতা মাসুদা জামান বলেন- “ সমুদ্র সকালে বলে যায় জুমার নামাজ পড়ে বাসায় এসে দুপুরের ভাত খাবে। আমি ভাত বেড়ে সন্তানের অপেক্ষায় থাকি। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে ফোন করে সমুদ্রকে বাসায় খেতে আসতে বলি। সে দুই মিনিট পরে আসার কথা বলে। দুপুর গড়িয়ে যায়। সমুদ্র বাসায় আসে না। টেবিলে ভাত বেড়ে আমি নামাজ পড়তে যাই। নামাজ পড়াবস্থায় ফোন আসে সমুদ্র গুলি খেয়েছে। অশ্রুসজল এই মা এখনও চোখের পানি ফেলেন আর বলেন, আমার বাবা আর ভাত খেতে আসে না। আমি অপেক্ষায় থাকি। আমার অপেক্ষা শেষ হয় না। ওকে গুলি করা হয়েছে। আমরা বিচার চাই না। আমার ছেলে মারা গিয়েছে। আমরা তাকে ফিরে পাব না। বিচার চেয়ে আর কী লাভ হবে! ” নিউজ লিংক 1 . https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/quota-protest/news-601091 2. https://reformbangladesh.net/martyrs/‡gv¯Ídv-Rvgvb-mgy`ª/ 3. https://andolon.com/martyr/‡gv¯Ídv-Rvgvb-mgy`ª/ 4. https://mzamin.com/news.php?news=120661#gsc.tab=0 5. https://www.dainikamadershomoy.com/details/0193ef9b585217 6. https://crimepatrol.news/?tag=‡gv¯Ídv-Rvgvb-Ii‡d-mgy`& 7. https://skhobor.com/news/115114 একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মোস্তফা জামান সমুদ্র জন্ম : ২০০৬ পেশা : ছাত্র প্রতিষ্ঠান : ঢাকা আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি শেষ করে সিদ্বেশ্বরী কলেজে ভর্তিচ্ছু বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মধ্যপাড়া, উপজেলা: সিরাজদিখান, জেলা: মুন্সীগঞ্জ পিতা : মনিরুজ্জামান তাজুল, বয়স: ৬৮ বছর মাতা : মাসুদা জামান, বয়স: ৬৮ বছর, পেশা : গৃহিণী ভাই : মোর্শেদুজ্জামান, বর্তমানে পিএইচডি করে জাপানে আছে বোন : মিরানা জামান, স্বামীর সাথে ফিনল্যান্ডে বসবাস করে আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, আনুমানিক দুপুর ৩.৩০ মিনিট ঘটনার স্থান : রামপুরা, বাড্ডা, ঢাকা আক্রমণকারী : ঘাতক পেটুয়া পুলিশ বাহিনী চিকিৎসা সেবা নেওয়া হাসপাতাল : ১. ডেলটা হাসপাতাল ও ২. বেটার লাইফ হাসপাতাল, ঢাকা শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, ডেলটা হাসপাতাল, ঢাকা লাশ হস্তান্তর : ১৯ জুলাই ২০২৪ শহীদের কবরের অবস্থান : মুন্সিগঞ্জ প্রস্তাবনা : ১. পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা : ২. শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণে বাড়িতে পাঠাগারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আল আমিন

রিয়া গোপ

মোহাম্মদ নুরু

শেখ রাকিব

সুমন মিয়া

রাহাত হোসেন শরিফ

হযরত বিল্লাল

মো: মাবরুর হুসাইন

মোঃ সুজন খাঁন

নাফিসা হোসেন মারওয়া

রিয়াজুল ফরাজী

 আফিকুল ইসলাম সাদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo