জন্ম তারিখ: ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৯৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: চাকরিজীবি, শাহাদাতের স্থান : শাহাজাদপুর বাটার গলির সামনে
শহীদ মো: মনির হোসাইন ১৯৯৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার কয়রতখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে গ্রামের নির্মল বাতাসে। স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় খিলবাড়ির টেক, অটোস্ট্যান্ড, ভাটারা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। মনির পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী ছিলেন। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী এবং পরিশ্রমী। রাজধানীর একটি পলিটেকনিক কলেজে পড়াশোনা শুরু করছিলেন। ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরবেন কিন্তু আর্থিক সংকটের কারনে তাঁকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। তাঁর বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ। মা মোছা: মিনারা বেগম এক বিরল রোগে আক্রান্ত। মাথার রগ ছিড়ে গেছে। তিনি এখন প্রতিবন্ধি। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে বাবা পরিবার ছেড়ে চলে যান। শহীদ মনিরের ছোট আরও ২টা ভাই বোন আছে। বাবা দায়িত্ব না নিয়ে চলে যাওয়ার পর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার খরচ এবং ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনার দায়িত্ব শহীদ মনিরের কাধে এসে পড়ে। পরিবারের করুণ অবস্থা দেখে তিনি বসে থাকতে পারেন না। কঠোর পরিশ্রম শুরু করে দেন। ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ শুরু করেন। পরিবারে আর্থিক সহায়তা করার মত আর কেউ ছিল না। তার ছোট ভাই এলাকার বখাটেদের সাথে মিশে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর ছোট বোনের সার্বক্ষণিক মায়ের সেবা-যত্ন করতেই সময় চলে য়ায়। শহীদ মনিরের একমাত্র আয়েই সংসার চলত। মায়ের চিকিৎসা করার সামর্থ তাঁর ছিল না। শহীদ মনির ছিলেন একজন অকুতোভয় সাহসী তরুণ। জীবদ্দশায় কখনো কোনো অন্যায় কাজে তিনি লিপ্ত হননি। সবসময় চেষ্টা করেছেন সৎ পথে থাকার। বাবা পরিবার থেকে চলে গেলে নিজেই সংসারের হাল ধরেন। ব্যবহারে ছিলেন অমায়িক। কখনো কারও সাথে বিবাদে লিপ্ত হননি। জুলাই বিপ্লবের তিনি ছিলেন এক সাহসী যোদ্ধা। জীবন দিয়ে স্বাধীনতা উপহার দিয়ে যান আমাদেরকে। হাসতে হাসতে শামিল হন। মৃত্যুর মিছিলে। তিনি এক অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক। সারাজীবন সংগ্রাম করে গেছেন অন্যের জন্য। কখনো নিজের কথা ভাবেননি। দেশের স্বার্থে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। ১৯ জুলাই ২০২৪ স্বৈরাচারের নির্মমতার স্বীকার হন। ঘাতক পুলিশের বুলেটের আঘাতে মৃত্যু ঘটে তার। শাহাদাত বরণ করেন তিনি। দিয়ে যান একটি স্বাধীন দেশ। তার পরিবার হারায় একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে। শাহাদাতের নিদারুণ বর্ণনা। ১৯ জুলাই ২০২৪ মনির আন্দোলনে যোগ দেন। এই দিনটিই ছিল তার জীবনের শেষ দিন। শাহাজাদপুরের বাটার গলির সামনে আন্দোলনকারীদের সাথে অবস্থান নেন তিনি। সেখানেই পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। গুলি তার পেটের এক পাশে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন তার মত আরও অনেকেই পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছিল। উদ্ধার করার মত কেউ ছিল না। চারিদিকে টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছিল না। সবাই পানি পানি বলে চিৎকার করছিল। কিন্তু এক ফোঁটা পানি দেওয়ার মত কেউ ছিল না সেখানে। পুলিশ আশেপাশের উচুঁ ভবনের উপর থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও গুলি নিক্ষেপ করছিল। সেখানে আহত অবস্থায় পড়ে ছিল শহীদ মনিরের নিথর দেহটি। গুরুতর আহত অবস্থায় আন্দোলনকারীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তার জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ মনির হোসেনের লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয়। টানা ৫ দিন পরে ২৪ জুলাই মরদেহ উদ্ধার করে বরিশালে নানার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত ১১ টায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। একটি পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। পারিবারিক অবস্থা এক অসহায় অসচ্ছল দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় শহীদ মোঃ মনির হোসাইনের। দরিদ্রতার কারনে জীবিকার তাগিদে পরিবারের সাথে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকায় এসে একটি ভাড়া বাড়িতে উঠেন। বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ। তাঁর মা এক বিরল রোগে আক্রান্ত। মাথার রগ ছিড়ে গেছে। তিনি এখন প্রতিবন্ধি। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে বাবা একদিন পরিবার ছেড়ে চলে যান। আর ফিরে আসেন না। তাঁর ছোট আরও ২ টা ভাই বোন আছে। বাবা পরিবার থেকে চলে যাওয়ায় সংসারের সকল দায়-দায়িত্ব শহীদ মনিরের উপর পড়ে। একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ শুরু করেন। পরিবারে আর্থিক সহায়তা করার মত আর কেউ ছিল না। তার ছোট ভাই এলাকার বখাটেদের সাথে মিশে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর ছোট বোনের সার্বক্ষণিক মায়ের সেবা-যত্ন করতেই সময় চলে য়ায়। শহীদ মনিরের একমাত্র আয়েই সংসার চলত। মায়ের চিকিৎসা করার সামর্থ তাঁর ছিল না। তার মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ঢেউ বইতে থাকে। ছেলেকে হারিয়ে মা পাগলপ্রায়। তাদের অবস্থাও এখন শোচনীয়। বাড়িতে নিজস্ব কোন জায়গা জমিও নেই, যা দিয়ে তাদের সংসার চলবে। আত্মীয়স্বজনদের কেউ তাদের সহযোগিতা করবে সে সুযোগও নেই। নিকটাত্মীয়ের বর্ণনা প্রতিবেশি মো: সোহেল রানা বলেন, “শহীদ মনির হোসাইন আন্দোলনে যোগদান করে শহীদ হন। তিনি তার পরিবারের খরচ বহন করতেন। তার মা অসুস্থ। মনির ছাড়া তার পরিবার খুবই অসহায়। মনির হোসাইন ছিলেন সৎ ও সাহসী যুবক। পরিবারের সবাইকে তিনি খুব ভালবাসতেন। তার মৃত্যুতে আমরা সকলেই শোকাহত।” ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : শহীদ মো: মনির হোসাইন; পেশা: চাকরিজীবি জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৫/১২/১৯৯৬, ২৭ বছর পিতা : জনাব মো: শাহাজাহান ফরাজী মাতা : মোছা: মিনারা বেগম আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪ আহত হওয়ার স্থান : শাহাজাদপুর বাটার গলির সামনে শাহাদাতের তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪, সন্ধ্যা: ৬:৩০ দাফন : ২৪ জুলাই, ২০২৪, তার মরদেহ উদ্ধার করে বরিশালে নানার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় জানাজা শেষে সেখানেই তাকে কবর দেওয়া হয়