জন্ম তারিখ: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ছাত্র, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
বরিশালের কৃতি সন্তানদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল আবীরের নাম অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তার মৃত্যু বাংলার ফেরাউন স্বৈরাচার খুনি হাসিনার মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তিনি ২০ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মিজানুর রহমান ও মায়ের নাম পারভীন সুলতানা। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ১৯ জুলাই, ২০২৪ — বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়াল দিন। তার আগের দিন রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হাতে ছাত্র আন্দোলনের বহু অংশগ্রহণকারী আহত ও নিহত হয়। এই নির্মমতার প্রতিবাদে ১৯ জুলাই ঢাকা মহানগরজুড়ে ছাত্রসমাজ রাজপথে নামে। উত্তাল হয়ে ওঠে বসুন্ধরা, নর্দ্দাসহ বিভিন্ন এলাকা। রাজপথে তৈরি হয় এক ভয়াবহ রণক্ষেত্র। এই দিনে গুলিবিদ্ধ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ও কর্মকর্তা শহীদ আবদুল্লাহ আল আবীর। বিকেল ৬:৩০ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সময় নর্দ্দা এলাকায় তিনি পেটের পাশে গুলিবিদ্ধ হন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাহসী শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রণক্ষেত্র থেকে তাঁকে সরিয়ে আনেন। পরবর্তীতে দ্রুত তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, গুলিটি তাঁর কিডনিতে আঘাত করেছে, এবং জরুরি অস্ত্রোপচার ছাড়া বাঁচানো সম্ভব নয়। দীর্ঘ চার ঘণ্টার অপারেশনে একটি কিডনি অপসারণ করা হয়। এরপর তাঁকে ইনটেনসিভ কেয়ারে নেওয়া হয়, চলতে থাকে রক্ত সঞ্চালন, শেষ চেষ্টা হিসেবে লাইফ সাপোর্টও দেওয়া হয়—কিন্তু ততক্ষণে সময় ফুরিয়ে গেছে। ২০ জুলাই সকাল ৮:৩০ মিনিটে শহীদ আবীর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আবীর ভাইয়ের শাহাদাতের পর তাঁর মরদেহ পরিবহনের জন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছিল না। একে একে হাসপাতালগুলো অস্বীকৃতি জানায়—তাদের ভাষায় "উপরে থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে।" এমতাবস্থায় এগিয়ে আসেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। তাদের সহযোগিতায় একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়। মরদেহ পরিবহনের সময়ও আশঙ্কা ছিল প্রাণনাশের। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে তল্লাশির নামে আহতদের ওপর হামলা করছিল। তাই অ্যাম্বুলেন্সের সামনে ও পেছনে নিরাপত্তা দিয়ে এগিয়ে চলছিল ছাত্র সংগঠনের সাহসী কর্মীরা। শেষবারের মতো আবীর ভাইকে তাঁর বরিশালের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দিতে অনেকেই ছিলেন পাশে। পুরো রাতটাই কেটেছে ভয়, কান্না আর রক্তাক্ত স্মৃতির মধ্যে। স্মরণে শহীদ আবীর আবদুল্লাহ আল আবীর ছিলেন কেবল একজন তরুণ শিক্ষার্থী নয়—তিনি ছিলেন সাহস, বিনয়, নেতৃত্ব আর দায়িত্ববোধের জীবন্ত প্রতিমূর্তি। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রাণচঞ্চল, আড্ডাপ্রিয়, মজার মানুষ—যার মুখে হাসি, চোখে স্বপ্ন, আর অন্তরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার অঙ্গীকার। তিনি ১৭ ও ১৮ জুলাই সংঘটিত রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিলেন, গর্জে উঠেছিলেন সাধারণ ছাত্রদের কণ্ঠ হয়ে। ১৯ জুলাই-এর সেই মর্মান্তিক শাহাদাত দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিল—ভয় নয়, প্রতিবাদই সত্যের পক্ষে উত্তম জবাব। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : আবদুল্লাহ আল আবীর জন্ম : ২০-০৯-২০০১ পেশা : ছাত্র, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পিতা : মিজানুর রহমান (৪৮) মাতা : পারভিন সুলতানা (৪৫) স্থায়ী ঠিকানা : বাহেরচর, ক্ষুদ্রকাটি, বাবুগঞ্জ, বরিশাল বর্তমান ঠিকানা : গোরাচাঁদ দাস রোড, বরিশাল ঘটনার স্থান : নর্দ্দা, বসুন্ধরা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : তারিখ: ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার, সময়: সন্ধ্যা ৬.৩০ টা আঘাতের ধরন : পেটের দিকে গুলি মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২০ জুলাই ২০২৪ শনিবার, ঢামেক শহীদের কবরের অবস্থান : পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা : ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা