জন্ম তারিখ: ১৯ অক্টোবর, ১৯৯৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৬ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ছাত্র, উন্মক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ডিগ্রি ১ম বর্ষ শাহাদাতের স্থান : পঙ্গু হাসপাতাল, ঢাকা
মোঃ সোহেল ঢাকা শহরের বাড্ডা এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি ১৯ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি গাড়ি চালাতেন। মা রহিমা বেগম গৃহিনী। নুপুর আক্তার নামে তিতুমীর কলেজে পড়ুয়া তার একটি বোন আছে। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট স্বৈরাচারী সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকে একে একে সমস্ত বিরোধী দলকে ভারতের সহায়তায় দমন করতে থাকে। শুরুতে ভারতীয় বাহিনীর মাধ্যমে পিলখানায় হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ৭৬ জন সেনা অফিসারসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। সাবেক দূর্নীতিবাজ স্বৈরাচারী সরকার শেখ মুজিব ও তার হিংস্র রক্ষী বাহিনীকে যারা দমন করেছিল সেইসব বিপ্লবী সেনাদের মধ্য থেকে ৫ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। বিরোধীদল বিএনপিকে মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে এবং অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়ে নিস্ক্রীয় করে ফেলে। বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটক করে এবং তার বড় সন্তানকে পিটিয়ে আহত করে। তিনি বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হন। আওয়ামীলীগ এবং তার প্রশ্রয়দাতা ভারত বুঝতে পেরেছিল এদেশের সম্পদ লুন্ঠনের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির। একারণে জামায়াতের দেশপ্রেমিক নিরীহ নেতাদের নিয়ে ২০০১ সাল থেকে সিন্ডিকেট ধর্মী মিথ্যা ও আজগুবী প্রপাগান্ডা নিউজ করতে থাকে ভারতের অর্থে পরিচালিত প্রথম আলো পত্রিকা। তারা জামায়াত নেতাদের ভয়ংকর কার্টুন ছবি যুক্ত করে ১৯৭১ সালে জামায়াত নেতারা কোন জেলায় কে কি করেছে শিরোনামে ধারাবাহিক সংবাদ উপস্থাপন করতে থাকে। প্রথম আলোর উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশে জামায়াত তথা ইসলাম ও ইসলামী চরিত্রকে সাধারণ মানুষের মাঝে ঘৃণিতভাবে প্রচার করা। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয় এই দলের উপরে নির্মম নির্যাতন। জেল, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, ধর্ষণ, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়াসহ এমন কোন নির্যাতন ছিলোনা যা এই দলের নেতা-কর্মীদের উপরে চালানো হয়নি! মিথ্যা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে জামায়াত নেতাদের ৫ জনকে একের পর এক ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এসব নেতাদের প্রাণভিক্ষা চাইতে বলা হয়েছিল। শেখ হাসিনা প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রাণ ভিক্ষা চাইলে হয়তো ক্ষমা করে দেয়া যেতে পারে! জামায়াত নেতারা জালিমের কাছে আনুগত্য স্বীকার না করে শাহাদাতকে বেছে নেয়। ২০০৯ সালে সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসার পরে আওয়ামী মদ্যপ-লম্পট উপদেষ্টারা স্বপ্ন দেখাতো অমুক অমুক সম্পদ বা সুযোগ-সুবিধা ভারতকে প্রদান করলে বাংলাদেশ চার বছরের মধ্যে কানাডা-সিংগাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু ৫ বছরের মধ্যে জনতা তাদের জমাকৃত সম্পদ ও দেশের সম্পদ হারাতে দেখে বুঝতে পারে দেশটা রাক্ষসের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ স্বাভাবিক নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসতে পারবেনা বুঝতে পেরে ২০১৪ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনের আয়োজন করে। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে দেখে তাদের ভোট দেয়া হয়ে গিয়েছে। প্রতিবাদকারীদের জেল-জুলুম, গুম-খুনের মাধ্যমে এক পর্যায়ে দেশ থেকে নিরুদ্দেশ হতে হয়। আলেম সমাজ উপলব্ধি করেন সর্বত্র ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডে দেশে ইসলাম ও মুসলমানদের কোনঠাসা করে ফেলা হচ্ছে। লম্পট ও নাস্তিকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হচ্ছে। এসময় সরকারী প্রশ্রয়ে নবী (স) কে অপমান করে লেখালেখির কারণে শুরু হয় হেফাজতে ইসলামের ইসলাম রক্ষার আন্দোলন। ২০১৪ সালে হেফাজতে ইসলামীর সরকার বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী দলগুলোর পাশে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির সমর্থন দিয়ে এগিয়ে আসে। হেফাজত কর্মীরা সরকারকে দাবী মানাতে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। তাদের দাবী ছিল নাস্তিক লেখকদের বিচার করা হোক। শেখ হাসিনা দাবী না মেনে গণহত্যার নির্দেশ দেয়। রাতভর চলে হেফাজত কর্মীদের গুলি চালিয়ে হত্যা। শতাধিক নিহত হয়। গণহত্যার সংবাদ প্রচার করায় দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিকে বন্ধ করে দেয় সরকার। বন্ধ করে দেয়া হয় অসংখ্য নিউজ মিডিয়া। সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা আওয়ামী লীগের চাটুকারিতা করা শুরু করে দেয়। ইসলাম ও ইসলাম পন্থীদের নির্মূলে তারা আওয়ামী সহযোগী হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে আবারো পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনা। এমনকি ২০২৪ সালেও। ছাত্র-জনতা অপেক্ষায় ছিল পরিবর্তনের। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনটি দমন করতে শেখ হাসিনা অতীতের মতো গনহত্যার নির্দেশ প্রদান করে। শুরু থেকে সাধারণ ছাত্রদের হত্যা করা হতে থাকে। দেশবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। মোঃ সোহেল একজন সচেতন ছাত্র ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন স্বাভাবিকভাবে দেশে চাকুরী পাওয়া সম্ভব নয়। কোটা বিরোধী সমাবেশে ছাত্র হত্যায় তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। ১৯ জুলাই রাজপথে ছাত্রদের পাশে উপস্থিত থাকেন। তার অবস্থান ছিল লিংক রোড গুদারাঘাট এলাকা। বিকাল ৩:৩০ টার দিকে পুলিশ এর গুলি তার দুই পা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তার বন্ধুরা তখন তাকে ধরাধরি করে বাড্ডা অগত যড়ংঢ়রঃধষ এ নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে প্রায় ৫ ঘন্টা ংবৎরধষ এ থাকার পর রাত ১০ টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয় ততক্ষণে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। প্রাথমিকভাবে তাকে পঙ্গু হাসপাতালের ২৭ নং সাধারণ বেড এ রাখা হয়। ২০ শে জুলাই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং তাকে পঙ্গু হাসপাতালের ওঈট ধিৎফ ০৮ এ শিফট করা হয়। ওঈট তে সে টানা ৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে এবং ২৬ শে জুলাই শুক্রবার লাইফ সাপোর্ট এ থাকা অবস্থায় দুপুর ২ টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। পঙ্গু হাসপাতালের ওহঃবহংরাব পধৎব ঁহরঃ এর ডাক্তার হারুন-উর-রশিদ এর ভাষ্যমতে গুলির ইনজুরি এবং বিষক্রিয়ার ফলে মোঃ সোহেল এর ষঁহমং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ট্রমার কারণে ব্রেন এ ফ্লুইড জমে গিয়েছিল। পাশাপাশি তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। পরিবারের বক্তব্য শহীদের বোনের অনুভূতি : আমার ভাই আমার যত্ন নিতেন। আমি শারিরীক ভাবে একটু অসুস্থ থাকি এইজন্য আমার ভাই আমাকে কোন টিউশনি করতে দিতো না। আমি যখন রাত জেগে পড়াশোনা করতাম ভাইয়া আমার পাশে বসে থাকতেন। পড়তে পড়তে গভীর রাত হলেও ভাইয়া আমার পড়ার টেবিলের পাশে বসে থাকতেন। আমার হাতের রাান্না ভাইয়া খুব পছন্দ করতেন। প্রায় সময় বলতেন নুপু আজকে তুই রান্না কর। আমার ভাই আমাকে আদর করে নুপু বলে ডাকতেন। আজ ৬ মাস হয়ে গেল আমি আমার ভাইয়ের ডাক আর শুনতে পাইনা। আমার ভাইটা কোথাও যাওয়ার আগে রেডি হয়ে জিজ্ঞাসা করত আমাকে কেমন লাগছেরে? আমি যখন বলতাম, সুন্দর লাগছে তখন খুব খুশি হয়ে যেত। অর্থনৈতিক অবস্থা বাবা অসুস্থ হওয়ায় কাজে যেতে পারেননা। বোন নুপুর পড়ালেখার পাশাপাশি ছোট একটি জব করেন। তাদের নিজস্ব কোন সম্পদ নেই। ঢাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মো: সোহেল জন্ম : ১৯ অক্টোবর ১৯৯৯ পেশা : ছাত্র, উন্মক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ডিগ্রি ১ম বর্ষ পিতা : মো: জাহাঙ্গীর আলম মাতা : রহিমা পরিবারের তথ্য স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : ৪০৫, বাগান বাড়ি, গুলশান, ওয়ার্ড ৩৮, ঢাকা ঘটনার স্থান : লিংক রোড গুদারাঘাট, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই, বিকাল ৩.৩০ টা আঘাতের ধরন : পায়ে গুলি মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২৬ জুলাই ২০২৪, পঙ্গু হাসপাতাল, দুপুর ২ টা প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা ২. ছোট ভাইকে লেখাপড়ায় সহযোগিতা করা