Image of মো: কবিরুল ইসলাম

নাম: মো: কবিরুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ২৮ জুন, ১৯৭৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : চিকিৎসক শাহাদাতের স্থান : শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

শহীদের জীবনী

মো: কবিরুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের জুন মাসের ২৮ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান নোয়াখালী এবং বর্তমানে তার পরিবার বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, আদাবর, মোহাম্মদপুর এলাকায় বসবাস করেন। তার বাবার নাম এম এ মতিন এবং মায়ের নাম শামছুর নাহার। বাবা-মা দুজনেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তার স্ত্রীর নাম শামছুন্নাহার শেলী এবং তাদের একাটি মাত্র কন্যা সন্তান আছে। মো: কবিরুল ইসলাম পেশায় ছিলেন একজন ডাক্তার। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে দুই সদস্যের এই পরিবারটি এখন দিশেহারা, স্বামীর এ আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তিনি। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে অন্যায় অবিচার কায়েম করা শুরু করে। নির্বাচন হয়ে শুরুতে তারা ২০০৯ সালে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নাম দিয়ে ভারতের সহযোগিতায় পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ৫৭ জন দেশসেরা সেনা অফিসারসহ ৭৪ জনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে, পরবর্তীতে যারা যারা হত্যাকাণ্ড কাছ থেকে নিজ চোখে দেখেছিল তাদের একে একে নির্মমভাবে হত্যা করে। সমস্ত আলামত নষ্ট করা হয় এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ২০১০ সালে ২৭ জানুয়ারিতে সাবেক স্বৈরশাসক, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সম্পদ ভারতের হাতে তুলে দিয়ে এবং প্রচণ্ড রকমের লুটপাটের মাধ্যমে ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবকে বিপ্লবের মাধ্যমে যারা ক্ষমতাচ্যুত ও তার মৃত্যু ঘটিয়ে দেশকে মুক্ত করেছিলো তাদের চার জনকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়। ঐ বিপ্লবে বজলুল হুদা ছিলেন অন্যতম নায়ক। তার বুকে পা দিয়ে চেপে ধরে শেখ হাসিনা নিজ হাতে ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করেন। শেখ হাসিনা ও তার হিংস্র সংগঠন আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছিলো এদেশে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে হলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ঘায়েল করা আবশ্যক। এ স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার পরিকল্পনা নেয় ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার, এর পরিপ্রেক্ষিতে সে যা যা করা লাগে তা সে করবে। ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয় এবং দলটির অন্যান্য নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার গুম, খুন, হত্যার মাধ্যমে দেশে অরাজক পরিস্থিতি জন্ম লাভ করে। এরপর এ স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা একে একে কামারুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির বাগা ইসলামী নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ বিখ্যাত আলেম, জ্ঞানী-গুনীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হতে থাকে। এরপর ২০১৮ সালে সরকারি চাকুরীতে কোটা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে, বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এ কোটা ব্যবস্থা যেন না থাকে। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন, বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। লাগাতার আন্দোলনের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার। কোটা আন্দোলন শেষ হওয়ার পর এ খুনি হাসিনা ৭ অক্টোবর ২০১৯ সালে বুয়েট এর সবচেয় মেধাধী ছাত্র আবরার ফাহাদকে ও তার বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা দ্বারা আবরার ফহাদকে সারা রাত অত্যাচার, নির্যাতন করে তাকে মেরে ফেলে। তার অপরাধ হলো তিনি খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে ফেসবুকে একটি পোস্ট করে। খুনি হাসিনা কেন ভারতকে মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় এবং ফেনী নদী থেকে পানি প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশ থেকে এলপিজি আমদানি করার বিষয়গুলো নিয়ে আবরার ফাহাদ ফেসবুকে পোস্ট করে। এ রকম অসংখ্যা হত্যাকাণ্ড এ খুনি হাসিনা ক্ষমতা থাকাকালীন করতে থাকে। এরপর ২০২৪ সালে আবার কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামতে থাকে, যা বাংলাদেশে সংঘঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এটি " জুলাই বিপ্লব" নামে পরিচিত। যা দেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর যাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে হয়ে গ্রাম হতে শহর অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ সময় কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ করে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিলে ছাত্ররা পাল্টা শিক্ষকদের সরকারি বাসভবন ত্যাগের নির্দেশ দেয়। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা শিক্ষক ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে পাল্টা নোটিশ প্রদান করে নজির স্থাপন করে। ছাত্ররা যাতে আন্দোলনে নামতে না পারে একারণে সরকার সর্বত্র সাধারণ ছুটির ঘোষণা দেয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়, ফলে অনলাইনে আয়-ব্যয় বন্ধ হয়ে যায়। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে কাজ করাসহ আয়-ব্যয় বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংকিং সেক্টর স্থবির হয়ে পড়ে। অনলাইনে ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসাইনের আহ্বানে প্রবাসীরা আওয়ামী লীগের গ্রেফতার, গুম, খুন ও গণহত্যার প্রতিবাদে রেমিটেন্স প্রেরণ বন্ধ করে দেয়। বৈদেশিক আয় কমে যাওয়ায় শেখ হাসিনা ইন্টারনেট সংযোগ অব্যাহত রাখতে বাধ্য হন। অফিস আদালত আবার সরব হয়ে উঠে। স্থগিত এইচ এস সি পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণের নির্দেশনা পেয়ে নটরডেম কলেজ, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, তামিরুল মিল্লাত মাদরাসা, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, চট্টগ্রামের বাইতুশরফ, পতেঙ্গা আলিয়াসহ সারাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ইসলামী ছাত্রশিবিরের পরামর্শে তৈরি ৯ দফা দাবী বাস্তবায়নের পক্ষে জোর দাবী জানায়, এর পরিপ্রেক্ষিতে ১ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ৯ দফা আদায়ের দাবীতে সারাদেশে গণমিছিল করে ছাত্র জনতা, রাজাধানীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ইত্যিমধ্যে আন্দোলনকারী হাজারো শিক্ষার্থী গ্রেফতার, গুম, খুন ইত্যাদি শিকার হয়। এ খুনি হাসিনার পুলিশ বাহিনী ও ছাত্রলীগ কর্মী দ্বারা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবী না মেনে খুনি হাসিনা গণগ্রেপ্তার ও গণহত্যা চালু রাখে, এর প্রতিবাদে শহীদ মিনারে বিশাল বিভোক্ষ সমাবেশ করে ছাত্রজনতা। সেনাপ্রধান তার সেনা কমান্ডার নিয়ে মিটিং করেন। সেখানে তিনি এই বার্তা পান যে, সেনাবাহিনী আর গুলি করতে প্রস্তুত নয়। কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে ৯ দফা বাদ দিয়ে ১ দফার (খুনি হাসিনার পদত্যাগ) ঘোষণা দেয় ছাত্রনেতারা। হাসিনা ছাত্রদের আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়, প্রয়োজনে মন্ত্রীদের কয়েকজন পদত্যাগ করার ঘোষণাও দেয়, ছাত্ররা সব আলোচনা নাকোচ করে দেয়। ৪ আগস্ট রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী। এদিন পুলিশ এর সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীরাও ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। পরদিন ঢাকামুখী লং-মার্চের কর্মসূচি দেয় ছাত্র জনতা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারের পতন ঘটে। স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে গোপনে পালিয়ে যায়। খুনি হাসিনার দেশ পলায়নের খবর ছড়িয়ে পরলে সারাদেশে আনন্দ মিছিল বের হয়, মো: কবিরুল ইসলাম তখন এ আনন্দ মিছিলে অংশ নিতে নিজের বাসা থেকে বের হন, তিনি ছিলেন রাজধানী আদাবর এর বাসিন্দা। কিন্তু তার এ আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকেনি। সারাদেশে আনন্দ মিছিল করলে রাজধানী আদাবর এলাকা তখন ও ছিল উত্তপ্ত। চারদিকে শুধু গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল, তখন তার স্ত্রী শামছুন্নাহার শেলী স্বামীকে ফোন দিলে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। বিকেল গড়িয়ে রাত হলো শামছুন্নাহার শেলী আর তার স্বামীর খোঁজ পায়নি। রাত গড়িয়ে সকাল হলে ডাক্তার কবিরুল ইসলাম এর খোঁজ পাওয়া গেল, তবে তিনি আর জীবিত নয় মৃত। ডাক্তার কবিরুল ইসলাম এর মৃতদেহ পাওয়া যায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। খুনি হাসিনার পুলিশ বাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং তার মৃত দেহ ঐখানে তারা ফেলে রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে তার মৃতদেহ তার পরিবার এর কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা বাসা ভাড়া থেকে আয় দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন স্ত্রী শেলী। পাশাপাশি গ্রামে একটি মসজিদ ও মাদরাসার খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন। নিউজ লিংক https://youtu.be/7C1Ov_SlfDo?si=WAGiuUzYaXsHFFsE একনজরে শহীদের তথ্য নাম : কবিরুল ইসলাম বাবা : এম এ মতিন মা : শামছুর নাহার স্ত্রী : সামসুন্নাহার শেলী কন্যা : স্থাপনা ইসলাম পৌষী বর্তমান ঠিকানা : ৮০৮, ৩ নং রোড, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, আদাবর, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : নোয়াখালী আক্রান্তের স্থান : আদাবর থানার সামনে মৃত্যুবরণ করেন : সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মোহাম্মদ ওয়াসিম

মো: হৃদয়

মো: রাব্বি আলম

মো: পারভেজ

জামসেদুর রহমান জুয়েল

মোহাম্মদ সবুজ

নাছিমা আক্তার

মো: আজাদ সরকার

 কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের

মো: জাকির হোসেন (শাকিব)

 কাউছার হোসেন

রবিন মিয়া মিঠু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo