Image of মো: শাহাবুদ্দিন

নাম: মো: শাহাবুদ্দিন

জন্ম তারিখ: ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: সিএনজি চালক, শাহাদাতের স্থান : শেরেবাংলা নগর থানার সামনে

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: শাহাবুদ্দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ সালে ভোলা জেলার চর সামাইয়া গ্রামের আব্দুল কালাম ও মনোয়ারা বিবি দম্পতির পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আবুল কালাম ও মনোয়ারা বিবি দম্পতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। শহীদের পিতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। অভাব অনটনের সংসার সামলানোর জন্য ৬৩ বছর আগে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে ভাতের হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন শহীদের পিতা। শহীদের মা একজন গৃহিণী। শাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী একসাথে বাবা-মায়ের সাথেই ঢাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শাহাবুদ্দিনের জীবন ছিল খুব সংগ্রামের। অভাব অনটনের সংসারে পড়াশোনার তেমন সুযোগ হয়নি। শৈশব থেকে তিনি ছিলেন কর্মঠ। বাবার ব্যবসা দেখাশোনার পাশাপাশি সিএনজি চালিয়ে সংসারের খরচ বহন করতেন। যে ভাবে শাহীদ হলেন এ আন্দোলনটি ছিল মূলত ছাত্রদের যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলন। আর এই যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে প্রতিহত করতে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ও তার পেটুয়া গুন্ডাবাহিনী ছাত্রলীগকে দিয়ে ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে নেক্কারজনক ঘটনার সৃষ্টি করে । অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে পরের দিন সারা দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যার মাধ্যমে আন্দোলন তীব্রতর হয়। আন্দোলন সব জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন দমাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এমপিদের নির্দেশে বিতর্কিত দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের আহত করে। সেই দিন শহীদ হয় সারা বাংলাদেশে ছয় জন। প্রথমজন হচ্ছেন শহীদ আবু সাঈদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ১৭ জুলাই থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ন সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে রাজপথে নেমে আসে। ছাত্ররা রাজপথ ব্লক করার আহ্বান জানায়। তাদের ডাকে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। স্বৈরাচারী সরকারের ঘাতক পুলিশ ও র‌্যাব আন্দোলনকারীদের রাজপথ থেকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। তাৎক্ষনিকভাবে আন্দোলনকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে থাকে। গুলিতে আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। গুলিবিদ্ধ হওয়া আহতদের অনেকে অধিক রক্তক্ষরণ ও সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে না পারায় ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করে। লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। তারা যেন হত্যার আনন্দে মেতে উঠে। সারাদেশ জুড়ে সাধারণ জনতার মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ১৭ জুলাই রাতে সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১৮ জুলাই সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকা সহ ৫ জেলায় বিজিবি মোতায়ন করা হয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্দেশে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। পরের দিন থেকে অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি নির্মমভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যা শুরু করে। ছাত্র জনতা যেন বেরিয়ে আসতে না পারে তাই সেই দিন রাতেই কারফিউ জারি করে স্বৈরাচার সরকার। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের পেটোয়া বাহিনীর মাধ্যমে পরিচালিত ছাত্র জনতার গণহত্যার আন্দোলনের দাবি তখন ১ দফার দাবিতে পরিনত হয়। ৫ আগস্ট পূর্ব ঘোষিত ‘মার্চ ফর ঢাকা’ সফল করার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী পিতা আবুল কালাম ও শাহাবুদ্দিন দোকান বন্ধ করে ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনে যোগ দেন । দুপুর বেলায় খবর আসে মাফিয়া সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশের শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ বিজয়োল্লাসে রাজপথে নেমে আসে। মিষ্টির দোকান গুলো খালি হতে থাকে। দেশের কোটি টাকা নষ্ট করে স্বৈরাচার সরকারের বানানো সমস্ত মূর্তি ভাঙ্গা হতে থাকে। সর্বত্র শুরু হয় ঈদের আনন্দ। আনুমানিক ৭:৩০ মিনিটে শেরে বাংলা নগর চৌরাস্তার কাছে একটি বিজয় মিছিল চলছিলো। মিছিল শেরেবাংলা নগর থানার সামনে আসলে ফ্যাসিস্ট কুলাঙ্গার পুলিশ বাহিনী এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে উচ্ছ্বসিত জনতার উপর। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি শাহাবুদ্দিনের মাথায় এসে বিদ্ধ হয় এবং অপর একটি গুলি পায়ে এসে আঘাত করে। তৎক্ষণাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শাহাবুদ্দিন। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে জরুরী ভিত্তিতে নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাত ৮:৩০ মিনিটে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : মো: শাহাবুদ্দিন জন্মতারিখ : ২৫-০২-১৯৮৭ পিতার নাম : আবুল কালাম মায়ের নাম : মনোয়ারা বিবি পেশা : গৃহিণী স্ত্রীর নাম : বিবি হালিমা বয়স : ৩৫, পেশা: গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : ৫ জন পরিবারের মাসিক আয় : ১৫ হাজার টাকা ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা : দুই মেয়ে ১. বড় মেয়ে: মোসা: লামইয়া, বয়স ১৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সপ্তম শ্রেণি ২. ছোট মেয়ে : সানজিদা, বয়স সাত, স্বদেশ মৃত্তিকা আদর্শ বিদ্যানিকেতন, প্রথম শ্রেণি পেশা : সিএনজি চালক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রামচর সুমাইয়া, ইউনিয় চন্দ্র প্রসাদ, থানা সদর, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : ২৮ নং ওয়ার্ড, এলাকার শেরেবাংলা নগর-১২০৭, থানা: শেরেবাংলা নগর, জেলা: ঢাকা ঘটনার স্থান : শেরেবাংলা নগর থানার সামনে আঘাতকারী : সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭:৩০টা নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ৫ আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:৩০ মিনিট নিউরোসাইন্স হাসপাতাল শহীদের কবরের অবস্থান : ভোলা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: শাহাবুদ্দিন
Image of মো: শাহাবুদ্দিন
Image of মো: শাহাবুদ্দিন
Image of মো: শাহাবুদ্দিন
Image of মো: শাহাবুদ্দিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: নাইমুর রহমান

এনামুল

জাহিদুজ্জামান তানভীন

মো: ইমন

মো: জাহিদ হোসান

আকরাম খান রাব্বি

মো: জাহিদ-এ-রহিম

মো: সবুজ

 মোঃ শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ

মারুফ হোসেন

মোঃ ইয়াকুব

মো: মনির হোসাইন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo