জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : রিকশা মিস্ত্রী শাহাদাতের স্থান: সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি জুলাই বিপ্লবে যারা রাজপথে নিহত হয়েছেন মো: শুভ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি রিকশার মিস্ত্রী ছিলেন। তাঁর বাবার নাম আবুল খান এবং মায়ের নাম রেনু বেগম। তাঁর বাবাও পেশায় ছিলেন রিকশাচালক। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট হাসিনা দেশ ছেড়ে পলায়নের পরে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শান্ত করতে সেনাপ্রধান যেসব রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বান করেছিলেন তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান ছিলেন অন্যতম। দেশবাসী আগে আবছা আবছা ভাবে অনুমান করলেও সেদিনই বুঝে গিয়েছিল স্বৈরাচার খুনি দেশের অর্থ লুণ্ঠনকারী বাংলার ফেরাউন শেখ হাসিনাকে হঠাতে বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের জুলাই আন্দোলনে যাকে কৃতিত্ব দেন তিনি ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২০২৪ সেশনের সভাপতি সালমান ওরফে সাদিক কায়েমকে। সাদিক কায়েম একাধারে ছাত্রদের প্রত্যেকটি সমাবেশে তার কর্মী বাহিনী নিয়ে সক্রিয় থাকেন, জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়কদের রক্ষা করেন এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের নির্যাতন তুলে ধরেন। জুলকারনাইন সায়ের ২০২৪ সালে পার্সন অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করেছিলেন সাদিক কায়েমকে। আন্দোলনের সময় সাদিক কায়েম সালমান নাম নিয়ে জুলকারনাইন সায়ের এবং প্রভাবশালীদের সাথে সমস্ত যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন। সমন্বয়কদের জন্য সেইফ হাউজের ব্যবস্থা করতে যা যা প্রয়োজন তা তিনি করেছিলেন। এক দফা ঘোষণা দেওয়ার আগে কিছু সমন্বয়ক দাবি করে বসে তাদের ফ্যামিলিকে এম্বেসিতে আশ্রয় না দিলে তারা এক দফার ঘোষণা দিবেন না। এখানে একজন রহস্যময় নারী চরিত্র আছে। যিনিই মূলত সাদিক কায়েমকে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছেন আন্দোলনের ব্যাপারে এবং উনিই মূলত সেইফ হাউজের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই রহস্যময় নারী বারবার সমন্বয়কদের উপর বিরক্ত হয়ে সহযোগিতা বন্ধ করতে চাইছিলেন। কিন্তু সাদিক কায়েম বারবার অনুরোধ করে বলেছিলেন যে, “এখানে অনেক স্টেক হোল্ডার আছে। কাজ করা খুবই পেইন হয়ে যাচ্ছে। বাট আমি এই আন্দোলনের জন্য আমার জীবন দিয়ে দিতেও প্রস্তুত।” এখানে এসে বুঝেছি কেন সাদিক কায়েমই পার্সন অব দ্য ইয়ার। কারণ, যখন এখনকার স্টার নেতারা সেইফ হাউজে বসে এম্বেসিতে পরিবার না নিলে খেলবো না বলে জেদ ধরেছিলেন, তখন সাদিক জেদ ধরেছিলেন যে আন্দোলন করতেই হবে। অন্যরা নিজের পরিবারের চিন্তা করেছে, সাদিক চিন্তা করেছে আন্দোলনটা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এতো সেক্রিফাইস করেও আজ পর্যন্ত এই বিপ্লবে সাদিক বা শিবিরের অন্য কোনো নেতা নিজের ভূমিকা নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি, সরকারে যাননি, নিজের জন্য কিছু দাবিও করেননি। অথচ আমরা আজ আবিষ্কার করলাম, সবার সেইফ থাকার ব্যবস্থা করে সাদিক ফাঁসির দড়িটা তার গলাতেই টেনে রেখেছিলেন। দুনিয়ার সবার সাথে যোগাযোগ করেছেন নিজের নাম্বার থেকে। যেই নাম্বার খুঁজে বের করে সাদিককে গুলি করে মারতে খুনি হাসিনার খুব অল্প সময় লাগতো। শুভ ছিলেন সকল নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক। যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা দলের চাটুকারিতার পাশাপাশি সর্বত্র চাঁদাবাজি, লুটপাটে ব্যস্ত থাকতো। শুভ সেখানে নিজের পরিশ্রম দিয়ে হালাল ইনকামের চেষ্টা করতেন। ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল দিনে শুভ তাঁর আত্মীয়সহ কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। ঐ মুহুর্তে ঢাকা মহানগরীর সায়েন্স ল্যাবে চলছিল গুলিবৃষ্টি। অস্ত্র বিহীন সাধারণ ছাত্রদের দমন ও খুন করতে শেখ হাসিনার বাহিনী অত্যন্ত নিষ্ঠুর পন্থায় যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করছিল। পুলিশের ছোড়া একটি গুলি শুভর মাথায় বিদ্ধ হয়। গুলিবৃষ্টি থামার দীর্ঘক্ষণ পরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে প্রথমে পপুলার হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে পরদিন ২০ জুলাই বিকাল ৪.১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু ঘটে। জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা : তাঁর পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। বাবা রিকশা চালক। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মোঃ শুভ পেশা : রিকশার মিস্ত্রী পিতা : আবুল খান মাতা : রেনু বেগম ভাই-বোন : জান্নাত (বিবাহিত), মিম (২য় শ্রেণিতে পড়ে এবং বেলুন বিক্রেতা), সোহাগ (বেকার) স্থায়ী ঠিকানা : চরসোনাপুর, শ্যামেরহাট, কাজীরহাট, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল বর্তমান ঠিকানা : ৮৬/১, রায়ের বাজার, ঢাকা ঘটনার স্থান : সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : বিকেল ৪ টা আঘাতের ধরন : মাথায় গুলি মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২০ জুলাই, বিকাল ৪.১০ মিনিট শহীদের কবরের অবস্থান : আজিমপুর কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা