জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ব্যবসা (কম্পিউটার কম্পোজ) শাহাদাতের স্থান: মিরপুর- ১০, আজমল হাসপাতাল
আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বাগেরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চরমোনাই পীরের খাটি একনিষ্ঠ মুরিদ ছিলেন। মিরপুরে তাঁর কম্পিউটার কম্পোজের দোকান ছিল। ৫ আগস্ট হাসিনা হটাও আন্দোলনে তাঁকে শেখ হাসিনার নির্দেশে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ২০০৮ সালে ক্ষমতার মসনদে বসে। পরে জানা যায় নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত নির্বাচনী আসনগুলোকে আওয়ামী লীগের সুবিধানুযায়ী রূপ দিয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করে। ক্ষমতায় এসেই শেখ মুজিবকে হঠাতে যেসব বীর সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে ৫ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সাধারণ মানুষসহ ৭৬ জনকে তাৎক্ষণিক নৃশংসভাবে হত্যা করে। জামায়াত নেতাদের একে একে গুম, খুন ও হত্যা করতে থাকে। প্রতিবাদকারীদের গুম করে রাখার জন্য তারা গোপন স্থানে আয়নাঘর তৈরি করে। এতে আটক রাখা হয় সৎ ব্যক্তিদের। হারিয়ে যাওয়াদের জন্য “মায়ের ডাক” নামে একটি সংগঠন গড়ে উঠে। তারা তাদের সন্তান, বাবা, ভাইদের ফিরে পেতে আকুতি জানায় সরকারের কাছে। ৫ আগস্টে দেশে ২য় স্বাধীনতার পরে আয়নাঘর থেকে কিছু মানুষ মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে। তারা গুমঘর বা আয়নাঘরে অবস্থানকালীন ভয়ানক বীভৎস অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে থাকে। ঘাতক হাসিনার নির্দেশে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলির গুম ও হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ তথ্য ফুটে আসে জনতার সামনে। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা উদ্যোক্তা জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার পরে তার সন্তান ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম আরমানকে আটক ও গুম করে রাখা হয় ৮ বছর। তিনি গুম থাকাবস্থায় জানতেন না তার বাবার হত্যাকাণ্ডের কথা। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক জনপ্রিয় আমীর অধ্যাপক গোলাম আজমের সন্তান সেনাবাহিনীর মেধাবী ও জনপ্রিয় কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আজমীকে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট নিখোঁজ হন। তাকে আয়নাঘরে গুম করে রাখা হয়েছিল দীর্ঘ ৮ বছর। অর্থনৈতিক অবস্থা : ৪ ভাইয়ের মধ্যে ৩য় ভাই জাকির হোসেন ডিপ্লোমা প্রজেক্ট ইঞ্জিয়ার তিনি একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরী করেন। গ্রামে ভিটেবাড়ি সংশ্লিষ্ট তাদের ৩ কাটা জমি আছে। শহীদ সম্পর্কে আনুভূতি শহীদের পিতা, ‘আমি কি বলব, ভাষায় প্রকাশ করতে পারতেছি না। দেশ আজকে স্বাধীন হয়েছে। ছাত্ররা যদি আন্দোলনের ডাক না দিত, তারা যদি ঝাপায়ে না পড়ত। যদি দেশ স্বাধীন না হতো। তাহলে খালেদা জিয়া লন্ডন যেতে পারত না। তারেক রহমান মামলা থেকে খারিজ পেত না। বাবরের জামিন হতো না। এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে যারা মামলা থেকে খারিজ পেয়ে বিদেশে যেতে পারছেন। তাদের উচিত ছাত্রদেরকে স্বরণ করা। আমি কি বলব, আপনাদের বুঝতে পারছি না। আমার ছেলের জন্য মনটা কানতেছে। যারা শহীদ হয়েছে তারা এখন নিরপেক্ষ। কিছুদিন তাদের স্বরণ করবে। এরপর আর কেউ স্বরণ করবে না। বর্তমানে দেখতে পাচ্ছি যে- যারা শহীদ হয়েছে তাদের জন্য কারও ভাবনা-চিন্তা কিছুই নাই। কবে নির্বাচন হবে, কবে ভোট হবে এই চিন্তায় পেরেশান।’ শহীদের ভাই আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন- ‘ভাইয়া যেদিন শহীদ হয়েছে সেইদিন আমি তাকে ছুয়ে শপথ নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ তার রক্ত বৃথা যেতে দেব না। তার মুখোশধারী মানুষরা ভাইয়ার ত্যাগকে বাঞ্চাল করার চেষ্টা করছে। ইনশাআল্লাহ এটা হতে দেব না’। শহীদ হওয়ার দশ মিনিট পূর্বে আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী তার ফেসবুকে লিখেছিলেন- ‘দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা, রাজপথে জনতার উল্লাস।’ জুলাই বিপ্লবের বিবরণ (২০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪) ২০ জুলাই: সেনা মোতায়েনের মধ্যে কারফিউর প্রথম দিনে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়। যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুরে ছিল সংঘর্ষের মূল পয়েন্ট। মোহাম্মদপুরেও সংঘর্ষ হয়। কারফিউর প্রথম দিনেই অন্তত ২৬ জন নিহত হয়। সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় এবং দুই দিনের 'সাধারণ ছুটি' ঘোষণা করে। কোটা আন্দোলনের নেতা এবং বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কয়েকজন নেতাকে আটক করা হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে ওই দিন ধরে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২১শে জুলাই: সুপ্রিম কোর্ট কোটা মামলায় রায় প্রদান করে, সিভিল সার্ভিসের চাকরির বেশিরভাগ কোটা বিলুপ্ত করে এবং সিভিল সার্ভিসে ৯৩% শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য এক শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়। এদিকে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ৫৬ জন সমন্বয়কের পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদের কাছে একটি যৌথ বিবৃতি পাঠানো হয় যাতে শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ৩০০ জনেরও বেশি ছাত্র ও মানুষ নিহত হয়েছে। শুধুমাত্র আদালতের আদেশ ব্যবহার করে সরকার হত্যার দায় এড়াতে পারে না। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পুলিশ কিছু মূল সংগঠককে তুলে নিয়ে গেছে এবং তাদের বিবৃতি দিতে বাধ্য করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ প্রকাশ করায় তিন বাহিনীর প্রধানরা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। কারফিউ চলতে থাকে এবং আরও সাতজন নিহত হয়। ২২শে জুলাই: আগের দিনের সংঘর্ষে আহত অন্তত ছয়জন মারা গেছেন। শেখ হাসিনা বিএনপি ও জামায়াতকে পরিণতির হুঁশিয়ারি দেন। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন সেনাপ্রধান। বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। আদালতের আদেশের ভিত্তিতে প্রণীত কোটা সংস্কার সংক্রান্ত গেজেট প্রজ্ঞাপনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সংঘর্ষে আরও ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং মৃতের সংখ্যা ১৮৭-এ দাঁড়িয়েছে। ২৩ জুলাই: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সার্কুলার জারি করলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের চার সংগঠক তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারফিউর মধ্যেও বিরোধী নেতা ও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গ্রেপ্তার ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সেদিনও বহু মানুষ নিহত হয়। বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাগুলি ধীরে ধীরে অগ্রাধিকার দিয়ে পুনরায় চালু করা হয়। পরের দিন সম্পূর্ণ চালু করা হয়। ২৪ জুলাই: আন্তঃজেলা বাস ও লঞ্চ চলাচল আংশিকভাবে চালু রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় চালু করা হয়। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর তিন সমন্বয়কারীকে পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর পাওয়া যায়। আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার এবং রিফাত রশিদকে ১৯ জুলাই অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তুলে নিয়েছিল। আসিফ এবং বাকের দুজনেই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন যে, পাঁচ দিন তাদের চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে এবং ধানমন্ডি এলাকায় আবু বকরকে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেয়া হয়। ২৫ জুলাই: জাপা নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ, ব্যবসায়ী ডেভিড হাসনাত সহ আরও ডজন খানেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ রাখা হয়। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ক্র্যাকডাউন বন্ধ করার আহ্বান জানায়। সেনা মোতায়েনের পর হাসিনা প্রথম জনসমক্ষে উপস্থিত হন এবং একটি ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন মারা যান, মৃত্যুর সংখ্যা ২০৪ জনে দাঁড়ায়। শুক্রবার ও শনিবার সপ্তাহান্তে ৯ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। অ্যামনেস্টি বলেছে যে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কোটা সংস্কারের সার্কুলারে কোন সমাধান দেখছেন না। সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলামের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা নিয়ে সংসদে কোনো আইন পাস হয়নি তাই এখনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি। ২৯ জুলাই: সরকার ছাত্র নেতাদের মুক্তির আল্টিমেটাম উপেক্ষা করার পরে ছাত্র এবং জনগণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় আকারের বিক্ষোভ পুনরায় শুরু করে। ঢাকায় ২ হাজার ৮২২ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয় সরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের সাথে খাওয়ার ছবি শেয়ার করাসহ ছয় কোটা সংগঠককে উপস্থাপন করা নিয়ে ডিবিকে তিরস্কার করেছে হাইকোর্ট। সারা বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা 'নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক সমাবেশ' ব্যানারে ছাত্র হয়রানি ও গণগ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান এবং চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মুহূর্ত নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়, যাকে শিক্ষকরা ‘জুলাই গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকার ঘোষিত শোক দিবস প্রত্যাখ্যান করে। পাল্টা পদক্ষেপে, তারা একটি অনলাইন প্রচারণা ঘোষণা করে, তাদের মুখ এবং চোখের চারপাশে লাল ব্যান্ড দিয়ে ছবি পোস্ট করে। ৩০ জুলাই: যারা সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে তাদের স্মরণে সরকার একটি 'শোক দিবস' পালন করে, কিন্তু ছাত্ররা দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করে। ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকরা তাদের প্রত্যাখ্যান দেখানোর জন্য তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল লাল করে দেয় এবং রাজধানীতে, অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ করে। কোটা আন্দোলনের ছয় সংগঠক এখনও ডিবির হেফাজতে। সহ পরীক্ষার্থীদের পুলিশ হেফাজত/জেল থেকে মুক্তি না দিলে শত শত এইচএসসি শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। পুলিশের বাধার মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মৌন মিছিল করে, বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাবেশ করে, অভিভাবকরা শিশুদের মৃত্যুর প্রতিবাদ জানায়। প্রাণহানির জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। হাসিনা বলেছেন যে, সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য 'বিদেশী সহায়তা' নেবে এবং পরের দিন দেশব্যাপী শোক ঘোষণা করেছে। পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ৩১ জুলাই: হত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, জোরপূর্বক গুম এবং ছাত্র ও নাগরিকদের হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে ছাত্ররা ‘মার্চ ফর জাস্টিস' নামে প্রতিবাদ করেছে। শিক্ষার্থীদের নয়টি সুনির্দিষ্ট দাবির পক্ষে দেশব্যাপী আদালত প্রাঙ্গণ, ক্যাম্পাস এবং রাস্তায় দুপুর ১২ টায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে কোর্ট পয়েন্টের দিকে মিছিল করে। দুপুর সোয়া ১টার দিকে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের দিকে মিছিল করে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কাছে পুলিশ তাদের অগ্রগতি বন্ধ করে দেয়। ফলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ছাত্ররা দোয়েল চত্বরে জড়ো হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়াইট প্যানেলের শিক্ষকরাও যোগ দেন। প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভের পর বিকেল ৩টার দিকে ঢাকায় বিক্ষোভ শেষ হয়। সকাল ১১টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে জড়ো হতে শুরু করে। পুলিশ ব্যারিকেড সত্ত্বেও, প্রায় ২০০ জন বিক্ষোভকারী চত্বরে প্রবেশ করে এবং অবস্থান নেয়। ৫০ থেকে ৬০ জন বিএনপিপন্থী আইনজীবী ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা পাল্টা মিছিল করেন। বেলা সোয়া ৩টার দিকে আদালত চত্বর থেকে নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত একটি পদযাত্রার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ শেষ হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে দুপুর ১২টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর বিকেল ৩টায় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো আবার খুলে দেওয়া হয়। ১ আগস্ট: সরকার জামায়াতে ইসলামী দল এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের পাশাপাশি এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। জাতিসংঘ সহিংসতা তদন্তে একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দল পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। আন্দোলনের ছয় সংগঠককে পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা নিহতদের জন্য গণ মিছিল ও প্রার্থনা করে। পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। ৪ আগস্ট: ঢাকা এবং দেশের অন্তত ২১টি জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষের ফলে ১৪ পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ৯১ জন নিহত হওয়ার সাথে দিনটি বিক্ষোভের সবচেয়ে মারাত্মক হয়ে ওঠে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সহিংসতায় অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত ১৩ পুলিশ সদস্য রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যখন বিক্ষোভকারীরা প্রধান মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ স্টেশনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যালয়কে লক্ষ্য করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। পুলিশ বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে বলে দাবি করেছে যদিও কিছু লোক প্রকৃত বুলেটে আহত ও নিহত হয়েছে। নতুন করে বিক্ষোভের ফলে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করে। হাসিনা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমালোচনা করে বলেন যে যারা 'নাশকতা' এবং ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত তারা আর ছাত্র নয় বরং সন্ত্রাসী, যখন বিক্ষোভকারীরা তাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানায়। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা দেশের সব প্রান্ত থেকে ঢাকায় পদযাত্রা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ জনগণকে কারফিউ না ভাঙতে বা আইন লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানায়। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া সেনা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানান। বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। আগস্ট ৫: দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ কারফিউ অমান্য করে রাজধানীর কেন্দ্রে একত্রিত হয়। হাসিনার পতনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে আগ্রাসন প্রদর্শন করে। ‘মার্চ টু ঢাকা’ ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও দেশবাসী রাজধানী অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। দুপুর নাগাদ ভিড় ভিড় করে হাসিনার সরকারি বাসভবনে। বিকেলে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে তার পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করেন হাসিনা। এরপর হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সামরিক বিমানে করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং পরে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জনসাধারণ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে, জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করার সাথে সাথে ঢাকা জুড়ে উদযাপনের কুচকাওয়াজ শুরু হয়। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। তথ্যসূত্র- বিএসএস নিউজ একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মো: আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী পেশা : ব্যবসা (কম্পিউটার কম্পোজ) পিতা : মো: আল-আমীন পাটোয়ারী ভাই-বোন : ৪ ভাই এবং ৩ বোন। স্থায়ী ঠিকানা : কবরস্থান পূর্ব এলাকা ০১, শেহলাবুনিয়া, ওয়ার্ড নং ০৩, মোংলা, বাঘেরহাট বর্তমান ঠিকানা : কবরস্থান পূর্ব এলাকা ০১, শেহলাবুনিয়া, ওয়ার্ড নং ০৩, মোংলা, বাঘেরহাট ঘটনার স্থান : মিরপুর -১০ আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট বিকাল ৪ টা আঘাতের ধরন : কিডনির পাশে-রানে মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগস্ট স্পটে, মিরপুর- ১০ আজমল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো শহীদের কবরের অবস্থান : নিজ গ্রাম আওয়ামী লীগের নির্যাতনের ভয়ে ভীত হয়ে তার পরিবার পর্যাপ্ত তথ্য প্রদান করতে অনিহা প্রকাশ করেছেন প্রস্তাবনা : ১. মাসিক ও এককালীন ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা।