Image of মো: জাহাঙ্গীর মৃধা

নাম: মো: জাহাঙ্গীর মৃধা

জন্ম তারিখ: ১ এপ্রিল, ১৯৮০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ভ্যান চালক, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: জাহাঙ্গীর মৃধা ১৯৮০ সালের পহেলা এপ্রিল পটুয়াখালি জেলার দ্বিপসা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন ভ্যান চালক ছিলেন। তাঁর ঘেরে দুই সন্তান। শহীদ মো: জাহাঙ্গীর মৃধার পিতার নাম জনাব নয়ন উদ্দিন এবং মাতার নাম মোসা: লালমোন বিবি। পিতা-মাতার ৬ সন্তানের মধ্যে তিনিই বড়। পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি ঢাকার কদমতলীতে বসবাস করতেন। তার বড়ো ছেলে আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে গ্লাস মিস্ত্রির কাজ নেন। আর ছোট ছেলে মো: শান্তর বয়স মাত্র ৩ বছর। তার স্ত্রী লাইজু বেগম দীর্ঘদীন ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন। তাঁর ডান চোখে ও নেত্রনালীতে সমস্যা। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। ১৯ জুলাই ২০২৪ শহীদ মোঃ জাহাঙ্গীর মৃধা স্বৈরাচার সরকারের ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে প্রাণ হারায়। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে এক দুঃসহ পরিস্থিতি নেমে আসে। জীবন যাত্রা অচল হয়ে যায়। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন শহীদ জাহাঙ্গীরের স্ত্রী লাইজু বেগম। উপায়ন্তর না দেখে নিজেই কাজে নেমে পড়েন। অসুস্থতা সত্বেও তিনি একটি অফিসে রান্নার কাজ নেন। সামান্য বেতনে কোনমতে দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। অপরদিকে তিনি কাজে চলে গেলে ছোট ছেলে শান্তকে একা একা থাকতে হয় বাড়িতে। তাকে দেখার কেউ থাকে না। অর্থের অভাবে তিনি চিকিৎসা করাতে পারছেন না। আবার সন্তানদের মুখে একটু ভালো-মন্দ খাবার তুলে দিবেন তারও সুযোগ হচ্ছে না। ছোট ছেলে যখন বাবা বাবা করে কান্না করে তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননা লাইজু বেগম। শাহাদাতের নির্মম ঘটনা অবৈধ সরকার শেখ হাসিনা নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। জনগণের ভোটাধিকার হরনের মাধ্যমে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করে। গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, অন্যায়, জুলুম, অবিচার, অত্যাচার, চাদাবাজি, সন্ত্রাসী, অর্থ পাচার ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে। তাদের অন্যায় অত্যাচারের মাত্রা পূর্বাপর সকল স্বৈরশাসককে ছাড়িয়ে যায়। দীর্ঘদীনের ক্ষোভ জনগনের মনে দানা বেঁধে উঠে। দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আন্দোলনে রুপ লাভ করে। দলীয় পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে জনগনের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পুলিশের পৈশাচিকতা ৭১’র পাক হানাদার বাহিনীকেও ছাপিয়ে যায়। ছাত্র-জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন রুপ নেয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে সরকার মারমুখি নীতি অবলম্বন করে। ১৫ জুলাই রাতে স্বৈরশাষক খুনি হাসিনা এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ছাত্র-জনতাকে রাজাকার বলে গালি দেয়। মুহুর্তেই ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। মধ্যরাতে ঢাবির হলগুলো থেকে ভেসে আসে, “তুমি কে আমি কে?-রাজাকার, রাজাকার।” মুহুর্তেই ৭১’র ঘৃণিত শব্দ ২৪ এ এসে মুক্তির স্লোগানে পরিণত হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের মেয়েরা মধ্য রাতে রাজপথে নেমে আসে। ঢাকা সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একযোগে প্রতিবাদ জানায়। এরপর থেকে আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। ক্রমেই ছাত্র-জনতার আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকে। ছাত্রদের দমন করতে সরকার তার দলীয় পোষা গুণ্ডা ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়। ১৬ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনানের নির্দেশে ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী লোহার রড, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প, রামদা, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অতর্কিত হামলা চালায়। ছাত্রলীগের পোষা গুণ্ডা এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাড়া করে আনা টোকাইদের নিয়ে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের হামলার হাত থেকে নিরস্ত্র বোনদেরও রক্ষা মিলেনা। রাস্তায় আটকিয়ে বোনদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরে তাদেরকে নির্বিচারে পিটাতে থাকে। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর আক্রমণ আন্দোলনের শক্তি আরও বৃদ্ধি করে। অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মত। এরপর থেকে লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকে। ১৯ জুলাই বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন দমনে সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ঘাতক পুলিশ, আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্র-জনতাকে টার্গেট করে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, ছররা, ফাঁকা গুলি, গ্রেনেড, বোমা ইত্যাদি নিক্ষেপ করে। সেদিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ সাজোয়া যান ও আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। শুধু তাই নয় স্বৈরাচারের হেলিকপ্টার ও উচু ভবনের উপর থেকে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। অত্যাচার নির্যাতনের ঘটনার সংবাদ যেন বহির্বিশ্বে প্রচারিত হতে না পারে সেজন্য সরকার ১৯ জুলাই রাত ১০ টায় সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। দলীয় কর্মীদের দ্বারা শহরের বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর করে আন্দোলকারীদের উপর দায় চাপানোর নোংরা রাজনীতি শুরু করে। ১৯ জুলাই সকাল ১০ টার দিকে শহীদ মোঃ জাহাঙ্গীর মৃধা ফার্মেসীতে যান তার স্ত্রীর জন্য ঔষধ কিনতে। ঔষধ কিনে বাড়ি ফেরার পথে স্বৈরাচারের ঘাতকদের থাবার মুখে পড়েন। একটি গুলি এসে তার পিঠ বরাবর ঢুকে সামনে দিয়ে বেড়িয়ে যায়। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তাঁর চারপাশ রক্তে ভেসে যায়। উপস্থিত ছাত্ররা তাকে নিয়ে একটি ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। চতুর্দিকে পুলিশের বেরিকেড থাকায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফার্মেসীতে থাকা অবস্থাতেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর স্ত্রী কান্নায় ফেটে পড়ে। শহীদ জাহাঙ্গীরের ৩ বছরের সন্তান শিশু শান্তর কান্না দেখে আশেপাশের মানুষজন আর কান্না ধরে রাখতে পারে না। পিতার এমন আকস্মিক মৃত্যুতে বড় ছেলে স্বজনও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ জাহাঙ্গীরের পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ। সামান্য ভ্যান গাড়ী চালিয়ে সংসার চালাত। যাত্রাবাড়িতে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করত। তার দুই ছেলে। বড় ছেলের বয়স ২৪ বছর। দরিদ্রতার কারণে ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারেনি। বড় ছেলে স্বজন সামান্য বেতনে গ্লাস মিস্ত্রির কাজ করে। আর ছোট ছেলে শান্তর বয়স ৩ বছর। স্ত্রী অসুস্থ। চোখে কম দেখে। নেত্রনালীতে সমস্যা দীর্ঘদিন থেকে। স্বামীর মৃত্যুর পর একটি অফিসে রান্নার কাজ নিয়েছেন। ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শহীদ মো: জাহাঙ্গীর মৃধা, পেশা: ভ্যান চালক জন্ম তারিখ : ০১/০৪/১৯৮০ জন্ম স্থান : পটুয়াখালি পিতা : জনাব মো: ময়ন উদ্দিন (মৃত) মাতা : মোসা: লালমোন বিবি (মৃত) আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, আনুমানিক সকাল ১০ টার দিকে শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, সকাল ১১ টার দিকে, যাত্রাবাড়ী দাফন : তার পরিবার হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে এসে জানাজা সম্পন্ন করে তাকে গ্রামের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। স্থায়ী ঠিকানা : পটুয়াখালী, বরিশাল বর্তমান ঠিকানা : রায়েরবাগ, কদমতলী, ঢাকা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জাহাঙ্গীর মৃধা
Image of মো: জাহাঙ্গীর মৃধা
Image of মো: জাহাঙ্গীর মৃধা
Image of মো: জাহাঙ্গীর মৃধা
Image of মো: জাহাঙ্গীর মৃধা

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: জোবায়ের বেপারী

মো: আসলাম

দীন ইসলাম বেপারী

নুর হোসেন পিয়াস

অজ্ঞাত

শাহরিয়ার খান আনাস

মো: মোসলেহ উদ্দিন

নাসিব হাসান রিয়ান

মো: লেবু শেখ

মো: সেলিম আলী শেখ

শেখ ফাহমিন জাফর

মো: রিয়াজ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo