Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)

নাম: মো: হাসান (হাফেজ হাসান)

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২২ মে, ২০২৫

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র ও ওয়ার্কশপ শ্রমিক, শ্রেণি: দশম, হালিশহর গরিবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম শাহাদাতের স্থান : পায়াথাই পাহোলিওথিন হাসপাতাল থাইল্যান্ড

শহীদের জীবনী

বাড়ি নির্মাণের জন্য যে জমি কিনেছিলেন, সেখানেই শায়িত হয়েছেন শহীদ হাফেজ হাসান শহীদ পরিচিতি মো: হাসান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ সেলিমের একমাত্র ছেলে। ১০ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর হাসানের মা মাহিনুর বেগম ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজব্বর ইউনিয়নে তার নানার বাড়িতে। সেখান থেকেই জীবনযুদ্ধ শুরু হয় তার। ২৫ পারা কোরআনের হাফেজ ছিলেন তিনি। দাখিল পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রামের একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। নানা বাড়িতে থাকার সময়ই হাসানের স্বপ্ন জাগে এক টুকরো জমি আর ছায়া নিবিড় শান্ত একটি বাড়ির। ছোট থেকে জীবন সংগ্রামী হাসান সেই স্বপ্ন পূরণ করতে কিনেছিলেন জমি। বাড়ি নির্মাণের জন্য সেই জমি ভরাটও করেছিলেন। বাড়ির পাশে কবরস্থান তৈরির জন্য রেখেছিলেন জমি। কিন্তু এসব কিছুই আর বাস্তবায়ন হবে না। বাড়ি নির্মাণের জন্য জায়গাটি খালি পড়ে থাকলেও কবরস্থানের জন্য হাসানের রেখে দেওয়া সেই জমিতেই পরিবারের প্রথম দাফন ব্যক্তি হিসেবে শায়িত হয়েছেন হাসান। কিন্তু কে জানত, কবরস্থানের জন্য রাখা প্রথম কবরটিই হবে তার? ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে মায়ের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন নানা বাড়িতে। একটি শান্ত ভিটেমাটির জন্য ছোটবেলা থেকে সংগ্রাম করা হাসান শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবতেন না। ছিল দেশের প্রতি অকুণ্ঠ প্রেম। দেশের প্রয়োজনে গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৯ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পরে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। বাড়ি নির্মাণের জন্য কেনা সেই জমিতে অনন্তকালের জন্য শায়িত হয়েছেন জুলাই বিপ্লবের এই অগ্রপথিক। হাসান চট্টগ্রামের হালিশহর গরিবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। করোনাকালে পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়লেও পরিবারকে সহায়তা করতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। অল্প বয়সেই তিনি দুই বোনের একমাত্র ভাই হিসেবে পরিবারের ভরসাস্থল ছিলেন। মায়ের দুঃখ ঘোচাতে নিজ হাতে জীবনের হাল ধরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। যেভাবে তিনি শহীদ হয়েছেন ৫ আগস্ট ২০২৪ চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস এলাকায় হাজারো মানুষের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেন তখন যুবলীগ নেতা শামিম ও পুলিশ বাহিনীর গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন হাসান। প্রথমে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে পাঠানো হয় পায়াথাই পাহোলিওথিন হাসপাতালে। সেখানে দীর্ঘ ৯ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার ২২ মে রাত ১১টা ১০ মিনিটে হাসানের সংগ্রামী জীবনের শেষ হয়। রোববার ২৫ মে সকালে জানাজা শেষে হাসানকে তার স্বপ্নের সেই জমিতেই দাফন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে হাসানের জীবন সংগ্রাম দেখা সকলেই বলছেন ‘স্বপ্ন ছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে, হলো তবে জীবনের জন্য নয়, চিরনিদ্রার জন্য।’ নিকটাত্বীয়র অভিমত হাসানের আত্মীয় শামিম চৌধুরী বলেন, হাসান পরিবারের বড় ছেলে। তার অনেক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সব কিছু তুচ্ছ করে সে চলে গেছে। তার আলাদা বাড়ি করে থাকার স্বপ্ন ছিল। আস্তে ধীরে সব হচ্ছিল। সে নতুন বাড়িতে আলাদা কবরস্থান রেখেছে। প্রথম কবরটিই হবে তার, তা কে জানত? বাবা হারা এতিম ছেলেটা সবাইকে কাঁদিয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালীর আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে শনিবার ২৪ মে ২০২৫ রাত ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাসানের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহীদ হাসানের মা মাহিনুর বেগমের ইচ্ছানুযায়ী তাকে রোববার ২৫ মে সকাল ৯টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে দাফন করা হয়েছে। হাসান ছিল সাহসী ও সংগ্রামী এক তরুণ। তার আত্মত্যাগ আমাদের পথ দেখাবে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন জাতিকে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে ও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তিনি বলেন, শহীদ হাসান ছিল তার পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। স্বৈরাচার পতনে তার আত্মত্যাগ ও অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ফেসবুকে লিখেছেন ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হাসান ভাই একটু আগে শহীদ হয়েছেন। হাসান ভাই আহত হওয়ার পর থেকে ‘এম্পাওয়ারিং আউয়ার ফাইটার্স’র মাধ্যমে তার সাথে কলি আপু সার্বক্ষণিক যুক্ত ছিলেন। কিছুদিন আগে কলি কায়েজ আপু বলেছিলেন হাসানের অবস্থা বেশি ভালো না। আমি ভাবছিলাম দেশে এলে দেখতে যাব। কী বলব! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আহত, শহীদদের পরিবারের জীবন থমকে গেছে। আমরা ঠিকই যাপন করে যাচ্ছি। কিন্তু যাপন করি কই! জুলাই তো কাঁধে বয়ে বেড়াতে হয়। শহীদদের লাশের ভার কি আমাদের কাঁধকেই ভারী করে তোলে?! বাকি সব তো দেখি দিব্যি কেটে যাচ্ছে। এছাড়া ২২ মে ২০২৫ রাত ১১টা ২১ মিনিটে ‘এম্পাওয়ারিং আওয়ার ফাইটারস’ নামে একটি ফেসবুক পেজে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আহত যোদ্ধা আমাদের ভাই হাসান থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটু আগে শহীদ হয়েছেন। সবাই দোয়া করবেন। ফোনে খবরটি নিশ্চিত করেছেন হাসানের ছোট বোন সুমাইয়া। ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়, ‘গত সাত মাস ধরে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে ছিলেন হাসান। গত ১০ এপ্রিল ২০২৫ হাসানকে লাইফসাপোর্ট থেকে সরিয়ে সাধারণ বেডে আনা হয়। ২৫ এপ্রিল তার অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে ফের লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়।’ ‘গত ৫ আগস্ট টাইগারপাসে আন্দোলনের সময় মাথার ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়- যা সম্ভাব্য ব্রেন ড্যামেজের কারণ হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার খাদ্যনালী ও কণ্ঠনালী এক করে লাইফসাপোর্ট দেয়া হয়। এ সময় ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে তার মস্তিষ্কে এবং শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে দ্রুত তাকে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়।’ নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের লিঙ্ক প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারের জন্য স্থায়ী বাসস্থান উপহার দেওয়া যেতে পারে ২. মাসিক সহায়তা হিসেবে ১৫০০০ সমপরিমাণ অনুদান দেওয়া যেতে পারে ৩. শহীদের মায়ের স্থায়ী কর্মসংস্থান করে দেওয়া যেতে পারে (হাস মুরগীর খামার, দুগ্ধ গাভী পালন) একনজরে শহীদ প্রোফাইল নাম : মো: হাসান (হাফেজ হাসান) জন্মস্থান : লক্ষ্মীপুর, জন্ম: ০১-০১-২০০০ পিতা : মোহাম্মদ সেলিম (মৃত) মাতা : মাহিনুর বেগম, পেশা: গৃহিণী বোন : ২ জন , ১. মোসা: সুমাইয়া পেশা : ছাত্র ও ওয়ার্কশপ শ্রমিক, শ্রেণি: দশম, হালিশহর গরিবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: টুমচর, ইউনিয়ন: চরগাজী, উপজেলা: রামগতি, জেলা: লক্ষ্মীপুর বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: চরজব্বর, উপজেলা: সুবর্ণচর, জেলা: নোয়াখালী আহত : ৫ আগস্ট ২০২৪, স্থান: টাইগারপাস চট্টগ্রাম শাহাদত : ২২ মে ২০২৫ (বৃহস্পতিবার), সময়: রাত ১১:১০ মিনিট, স্থান: পায়াথাই পাহোলিওথিন হাসপাতাল থাইল্যান্ড আক্রমণকারী : যুবলীগ নেতা শামিম ও পুলিশ বাহিনী চিকিৎসা সেবা : ১.চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) ২.ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৩.থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল ৪. পায়াথাই পাহোলিওথিন হাসপাতাল, থাইল্যান্ড জানাজা : ১ম - কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, ঢাকা, ২৪ মে ২০২৫ রাত ১০টা ২য় - জামেয়া ইসলামিয়া ফারুকিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ, নোয়াখালী, রোববার ২৫ মে সকাল ৯টা দাফন : নিজবাড়ি, নোয়াখালি

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)
Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)
Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)
Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)
Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)
Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)
Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)
Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)
Image of মো: হাসান (হাফেজ হাসান)

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: তুহিন আহমেদ

 কাউছার হোসেন

 মোহাম্মদ ওয়াসিম

ইমাম হাসান তায়িম ভূঁইয়া

মো: ওয়াকিল আহমদ শিহাব

সাদ আল আফনান

মোহাম্মদ সজিব

শাব্বির হোসেন

মোহাম্মদ সবুজ

মো: জহিরুল ইসলাম

আমির হোসেন

মো: বাবু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo