জন্ম তারিখ: ৭ অক্টোবর, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৬ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ছাত্র, পাতার হাটি আরসি কলেজ, দ্বিতীয় বর্ষ ও চামড়া কারখানার রিফাইন্ড কর্মী শাহাদাতের স্থান: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শহীদ পরিচিতি একটি নাম কখনো কখনো ইতিহাস হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে জাতির স্মৃতির পাতায় চিরভাসমান। শহীদ আসিফ তেমনই এক নাম। জন্মেছিল এক অজপাড়াগাঁয়ে, মৃত্যুবরণ করেছিলেন রাজধানীর আলো-আঁধারির এক কোণে। বয়স মাত্র তেইশ, কিন্তু আত্মত্যাগে তিনি হয়ে গেছেন কালজয়ী। ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বাজিত খা গ্রামে জন্ম নেয় এক শিশু, নাম রাখা হয় আসিফ। পিতা মাহেব হোসেন দেওয়ান, একাধারে কৃষক ও দিনমজুর; কিন্তু ছেলেটা যেন জন্ম থেকেই ছিল অন্যরকম। তার জন্মের কিছুদিন পরই পিতা চলে যান না-ফেরার দেশে। তারপর মা শাহিনুর বেগমের কাঁধেই নেমে আসে সংসারের সমস্ত ভার। ঘরের মাটির দেয়ালে টাঙানো আসিফের ছবিটা আজ যেন শুধুই অতীত।একটি প্রতিবাদ, একটি আত্মত্যাগ একটি আশার গল্প কর্ম ও অর্থনৈতিক বিবরণ আসিফ ছিলেন পাতার হাটি আরসি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মেধাবী ছিলেন, চুপচাপ, গম্ভীর। তবে তার চোখে সবসময় স্বপ্নের আগুন দেখা যেত। লেখাপড়ার খরচ আর ছোট ভাই-বোনের মুখে ভাত তুলে দিতে, সে পড়ালেখার পাশাপাশি সাভারের এক চামড়া কারখানায় রিফাইন্ডিংয়ের কাজ করতো। মা গৃহিণী, ঘরে ছোট ভাই আসাদ (১৪), বোন শমী (১৩)। শহরে থাকা, পড়াশোনা চালানো আর সংসার চালানো সবকিছু একাই সামলাতো আসিফ। অথচ কেউ কখনও তাকে কষ্টের কথা বলতে শোনেনি। যেন নিজের জীবন দিয়ে পরিবারের হাসিই ছিল তার জীবনের একমাত্র সাধনা। আন্দোলনে যোগদান ও জুলাই-আগস্টের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুলাই। ঢাকার রাজপথ উত্তপ্ত। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে দিন গুনছিল কণ্ঠরোধ। আসিফ, যিনি একসময়ে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না, তিনিও নেমে আসেন রাজপথে। কারণটা ছিল সহজ, দেশটাকে ভালোবাসতেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকা যে পাপ, এই শিক্ষাটা মা-ই তাকে দিয়েছিলেন। শহীদ হওয়ার ঘটনা ঘটনাস্থল মগবাজার, ঢাকা। ৫ আগস্ট ২০২৪, রাজপথে একটি বিজয় মিছিল হয়। মিছিল শেষে আসিফ ও তার সঙ্গীরা মোটরসাইকেলযোগে ফিরছিলেন বাসায়। তারা জানতো না, ছাত্রলীগের কিছু সদস্য তাদের পেছন থেকে অনুসরণ করছে। সময় রাত ২টা। আচমকা একটি কালো মাইক্রোবাস এসে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এরপর রাস্তায় ফেলে, মারধর করে। গুরুতর জখম অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শহীদ আসিফ। পরিবারের ভাষ্য শহীদের মা শাহিনুর বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, “ও ছিল আমার ছায়া। ও চলে যাওয়ার পর আমার ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেছে। আমি গরিব মানুষ, কিন্তু আমি গর্বিত। আমার আসিফ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে।” ছোট বোন শর্মী বলে, “ভাইয়া বলত, একদিন আমাদের ঘরে আলো আসবে। এখন ও-ই আলো হয়ে গেছে”। প্রস্তাবনা শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না। শহীদ আসিফ আমাদের সেই যুবক, যিনি জীবন দিয়ে প্রতিবাদের এক অনন্ত পথ রচনা করে গেছেন। তার মৃত্যুর রক্ত দিয়ে লাল হয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পতাকা। ইতিহাসের পাতায় আসিফ থাকবেন প্রতিবাদী তরুণদের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে। আজকের প্রজন্ম যদি শহীদ আসিফদের কথা ভুলে যায়, তবে ইতিহাস ক্ষমা করবে না আমাদের। কিন্তু আমরা ভুলবো না। আমরা শ্রদ্ধা জানাবো তাকে, যিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি শোষণমুক্ত, সুন্দর দেশের। শেষ কথা একটি রাত, একটি ধাক্কা, একটি মৃত্যু কিন্তু জন্ম হলো এক শহীদের, যে এখন প্রতিটি প্রগতির মিছিলে ছায়া হয়ে হাঁটে। শহীদ আসিফ একটি নাম, একটি গল্প, একটি চিরজাগরিত বিদ্রোহ। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি পূর্ণ নাম : আসিফ জন্ম : ০৭ অক্টোবর ২০০১, বাজিত খা, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : পাতার হাটি আরসি কলেজ, দ্বিতীয় বর্ষ পেশা : ছাত্র ও চামড়া কারখানার রিফাইন্ড কর্মী মৃত্যু : ৬ আগস্ট ২০২৫, ঢাকা মেডিকেল কলেজ কবরস্থানের অবস্থান : বাজিত খা, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল পরিবার : মা, এক ভাই আসাদ (১৪), এক বোন শর্মী (১৩)