Image of হৃদয় মিয়া

নাম: হৃদয় মিয়া

জন্ম তারিখ: ৫ জানুয়ারি, ২০০৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র ও পিকআপ ভ্যানের হেলপার, (শ্রেণি: সপ্তম, গাছা উচ্চ বিদ্যালয়) শাহাদাতের স্থান: গাছা রোডের মাথা, বড়বাড়ী, গাজীপুর

শহীদের জীবনী

একটি গুলি নিঃস্ব পরিবার ও এক অপূর্ণ স্বপ্ন জন্ম ও পরিচিতি ছোটখাটো গড়ন, কাঁধে স্কুলব্যাগ, আর মাঝে মাঝে হাতে থাকত পিকআপ ভ্যানের ঝুলন্ত বার। এমন একটি জীবনই ছিল হৃদয় মিয়ার। তবে ২০ জুলাই ২০২৪ এর বিকেলের পর, হৃদয়ের পরিচয় শুধু এতটুকুই নয় সে এখন একটি নাম, একটি প্রতিবাদের প্রতীক, একজন শহীদ। ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার সাখুয়া ইউনিয়নের গন্ডখোলা গ্রামে ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি জন্ম নেয় হৃদয় মিয়া। বাবা সুলতান মিয়া, যিনি বর্তমানে কর্মহীন ও শারীরিকভাবে দুর্বল, বয়স ৫২। মা সাজেদা, একজন গৃহিণী, বয়স ৫০। সংসারের হাল ধরে রেখেছেন হৃদয়ের বড় ভাই মো. গোলাপ ইসলাম, যিনি নিজেও বেকার। হৃদয় গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তবে লেখাপড়ার পাশাপাশি পেটের দায়ে পিকআপ ভ্যানে হেলপারের কাজ করত সে। নিজস্ব কোনো ঘর নেই, দাদার ভাইয়ের বাড়িতে ঠাঁই। দাদার কিছু সাহায্যে কোনোভাবে চলে সংসার। ভাত, নুন আর ঘামে ভেজা দিনগুলোতে হাসিমুখে কাটিয়ে দিত হৃদয়। স্বপ্ন ছিল স্কুল পাশ করে ভাইকে অটো কিনে দেবে, বাবা-মাকে দুঃখ থেকে মুক্তি দেবে। কর্মজীবনের বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক বিবরণ হৃদয়ের জীবনটা শুরু থেকেই সংগ্রামের। দিনভর স্কুল শেষে, অথবা ছুটির দিনে সে গাজীপুরের রাস্তায় পিকআপে হেলপারের কাজ করত। কখনও মালামাল তোলা, কখনও যাত্রীদের ডেকে ওঠানো এইসব ছোটখাটো কাজই তার বড় আশার জ্বালানি ছিল। ঘরে ভাত রান্না হবে কিনা তা নির্ভর করত হৃদয়ের রোজগারের ওপর। দাদার ভাইয়ের ছোট্ট টিনের ঘরে গাদাগাদি করে একসাথে রাত কাটাত তারা। কিন্তু মুখে কোনো অভিযোগ ছিল না। মা বলতেন- “আমার ছেলে খুব চুপচাপ, তবু সংসারের সব কাজ বুঝে করে। ঈদের নতুন জামা নেয়নি, ভাইয়ের জন্য রেখেছিল।” আন্দোলন যোগদান ও প্রেক্ষাপট: জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ২০২৪ সালের জুলাই মাস ছিল বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার উত্তাল প্রতিবাদের মাস। দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাহিনীর দমন-পীড়ন, ভোটাধিকার হরণের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে তরুণরা। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ সব জায়গায় ছাত্ররা রাস্তায় নামে। এই আন্দোলনে হৃদয়ও ছিল প্রথম সারির একজন। বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করত “এইভাবে আর থাকা যায় না ভাই, কিছু তো করতে হবে।” ২০ জুলাই ২০২৪, শনিবার। সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হয় হৃদয়। মা বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন-“বাবা দুপুরে আসবি তো?” হৃদয় হেসে বলেছিল- “আসব মা, আগে একটু দেখে আসি কী হয়।” সেই ‘দেখে আসা’ই ছিল তার শেষ যাওয়া। শহীদ হওয়ার দিন: ২০ জুলাই ২০২৪ বিকেল ৫.৩০টা। গাজীপুরের গাছা রোডের মাথায় ছাত্রদের উপর পুলিশ হঠাৎ গুলি চালায়। চারদিক ধোঁয়া আর চিৎকারে ভরে যায়। সবার মাঝে পড়ে থাকে একটি রক্তাক্ত দেহ হৃদয় মিয়া। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই নিথর হয়ে যায় সে। সময় ছিল ৫.৩৫ মিনিট। স্থানীয়রা জানায়-“ও বাঁচতে পারত, কিন্তু পুলিশ কাউকে কাছে আসতে দেয়নি।” হৃদয়ের নিথর দেহটি কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় বড়বাড়ীর নুরে আকসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কবরস্থানে। সেই মাটির নিচেই ঘুমিয়ে আছে এখন সে, যে একদিন পেটের ক্ষুধায় পিকআপে উঠেছিল, আর প্রতিবাদের তীব্রতায় শহীদ হয়ে গেছে। পরিবারের প্রস্তাবনা মা সাজেদা চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন- “হৃদয় মারা গেছে, তবু আমাদের সংসার তো রয়ে গেছে। ভাইটা কিছু করতে পারে না। কেউ যদি একটা অটো কিনে দিত ওর জন্য এইটুকুই চাওয়া।” একটি অটোভ্যান পেলে হৃদয়ের ভাই সংসারটা চালাতে পারবে। বাবা-মায়ের বাকি জীবনটুকু হয়তো একটু শান্তিতে কাটবে। এইটুকু সহযোগিতাই হৃদয়ের আত্মত্যাগের প্রতি আমাদের দায়মুক্ত শ্রদ্ধা হতে পারে। শেষ কথা হৃদয়ের গল্প আমাদের কেবল কাঁদায় না, আমাদের বিবেকেও নাড়া দেয়। একটা রাষ্ট্র কতোটা নিষ্ঠুর হলে, সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র পেটের দায়ে হেলপার হয়, আর স্বপ্নের দাবিতে আন্দোলন করে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়? এই গল্প যেন হারিয়ে না যায় কাগজে নয়, হৃদয়ে রয়ে যাক চিরকাল। একটি জীবন নিভে গেল, কিন্তু তার স্বপ্ন আলো হয়ে রয়ে গেছে আমাদের পথচলায়। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি পূর্ণ নাম : হৃদয় মিয়া জন্ম তারিখ : ০৫/০১/২০০৯ জন্মস্থান : ত্রিশাল, ময়মনসিংহ শ্রেণি : সপ্তম বিদ্যালয় : গাছা উচ্চ বিদ্যালয় পেশা : ছাত্র ও পিকআপ হেলপার পিতার নাম : সুলতান মিয়া, পেশা ও বয়স: বেকার, ৫২ মায়ের নাম : সাজেদা, পেশা ও বয়স: গৃহিণী, ৫০ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: গন্ড খোলা, ইউনিয়ন: সাখুয়া, থানা: ত্রিশাল, জেলা: ময়মনসিংহ পরিবারের সদস্য : ভাই: ১, মোঃ গোলাপ ইসলাম (২৬), বেকার আহত হওয়ার তারিখ: ২০/০৭/২৪, সময়: বিকাল ৫.৩০ টা স্থান : গাছা রোডের মাথা, বড়বাড়ী, গাজীপুর শহীদ হওয়ার তারিখ : ২০/০৭/২০২৪, সময়: বিকেল ৫.৩৫ মিনিট আক্রমণকারী : পুলিশ বাহিনী কবরস্থান : নুরে আকসা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থান, গাছা রোড, বড়বাড়ী, গাজীপুর অর্থনৈতিক অবস্থা : দারিদ্র সীমার নিচে, নিজস্ব জমি/ঘর নেই

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of হৃদয় মিয়া
Image of হৃদয় মিয়া
Image of হৃদয় মিয়া
Image of হৃদয় মিয়া
Image of হৃদয় মিয়া
Image of হৃদয় মিয়া

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

শাহাদাত হোসেন

মো: সাদিকুর রহমান

আসীর ইনতিশারুল হক

মো: আমজাদ

মো: সামিদ হোসেন

মো: আমিরুল ইসলাম

মো: কাওসার মিয়া

মো: ইমরান হোসাইন

মো: আব্দুল নুর

মো: সুমন হাসান

মো: শাহজাহান

মো: সবুজ মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo