জন্ম তারিখ: ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: বরিশাল
পেশা : ডিজাইনার, কর্মরত প্রতিষ্ঠান: এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড, প্রিটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড শাহাদাতের স্থান : বাইপাস রোড, আশুলিয়া, গাজীপুর
শহীদ পরিচিতি মো: রিয়াজুল ইসলাম বরগুনার সন্তান, দেশের জন্য যিনি জীবন দিলেন এক উত্তাল সময়ে, এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আন্দোলনে। তিনি শুধু একজন ডিজাইনার ছিলেন না, ছিলেন একজন সাহসী মানুষ, একজন প্রাজ্ঞ পিতা, একজন নির্ভরযোগ্য স্বামী, একজন দায়িত্বশীল সন্তান। কর্মজীবন জীবনের প্রয়োজনে বরগুনা ছেড়ে রাজধানীর প্রান্তে, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় পাড়ি জমান। জীবিকার জন্য কাজ নেন এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড এবং প্রিটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড কোম্পানির একজন দক্ষ ডিজাইনার হিসেবে। নিপুণ হাতে তৈরি করতেন পোশাকের ডিজাইন, যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারে পৌঁছাতো। সবকিছু পেরিয়ে পরিবারের অর্থনৈতিক হাল ধরাই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। পরিবার ও অর্থনৈতিক অবস্থা তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর স্ত্রী মরিয়ম একজন গৃহিণী; একমাত্র কন্যা তাবাসসুম ইসলাম তুবা পড়ে বরগুনা মাধ্যমিক কলেজিয়েট স্কুলে, অষ্টম শ্রেণিতে। তুবাকে ঘিরেই ছিল রিয়াজুলের যত স্বপ্ন। তাঁদের নিজস্ব কোনো স্থায়ী ঘর নেই একটি ভাড়া বাড়িতে দিন যাপন করতেন। শহীদ হবার পর পরিবার একপ্রকার দিশেহারা "আমাদের তো আর কেউ রইলো না," স্তব্ধ গলায় বলে ওঠেন মরিয়ম। আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট। বাংলাদেশের রাজপথ উত্তাল। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন তখন রূপ নিয়েছে এক সর্বস্তরের গণআন্দোলনে। দীর্ঘদিনের দুঃশাসন, অবিচার ও দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ফেটে পড়ে লাখো মানুষ। “এই দেশ আমাদের, সিদ্ধান্তও আমাদের” এই বিশ্বাস নিয়েই রিয়াজুল যোগ দেন আন্দোলনে। ৫ আগস্ট ২০২৪ ছিল এক অবিস্মরণীয় দিন। সেদিন খুনি হাসিনা সরকার পতনের সংবাদে আশুলিয়ার রাজপথে বয়ে যায় বিজয়ের স্রোত। মিছিল, স্লোগানের অপার উল্লাসে উদ্ভাসিত ছিল বাইপাস রোড। কিন্তু সেই আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যেভাবে শহীদ হলেন বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে, বাইপাস মোড়, জামগড়া এলাকায় হঠাৎ করেই শুরু হয় গুলি। বিজয় মিছিল লক্ষ্য করে ছোড়া হয় সরাসরি গুলি। লক্ষ্যভ্রষ্ট নয়, বরং টার্গেটেড হত্যা করা হয়। রিয়াজুল ইসলাম ছিলেন মিছিলের সামনের সারিতে। হঠাৎ করেই তাঁর বুকে লেগে যায় এক গুলি। রাস্তার মাঝেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। চারদিকে হৈচৈ, চিৎকার, রক্ত, কান্নাকেউ ধরে রাখার আগেই নিঃশ্বাস থেমে যায় তাঁর। একজন সহযোদ্ধা বলছিলেন- "রিয়াজ ভাই বলছিলেন, মেয়ে বড় হোক, ভালো মানুষ হোক, আজ সেই মেয়ে বাবাহারা হয়ে গেল।" পরিবারে শোকের ছায়া বাবা হাতেম আলী হাওলাদার, বয়স প্রায় ৭০ ছুঁইছুঁই। ছেলের কবরের পাশে বসে বলছিলেন- "দুনিয়ায় মানুষ আয় করে ঘর করে, পোলাপান বড় করে। আমার ছেলেরে তো মাটিত দিয়া ঘর করাইয়া রাখছি।" মা বিলকিচ বিবির দুচোখে যেন জল শুকায় না। তিনি কেবল একটাই কথা বলেন "ও যে আমার মা কইয়া ডাকতো। সেই ডাক আর শোনা হইবো না।" এই শহীদের রক্ত শুধু রাজপথ রাঙায়নি, রাঙিয়েছে আমাদের বিবেক। এই মৃত্যুর দায় ইতিহাসের; এই আত্মত্যাগ আমাদের করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছেযেন আর কোনো রিয়াজুল এইভাবে শহীদ না হন। আর আমরা যেন ভুলে না যাই, এই দেশ গড়ে উঠেছে এমন শহীদদের রক্তে, যারা নিজের সব হারিয়ে দিয়েও আমাদের জিতিয়ে গেছেন। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শহীদ রিয়াজুল ইসলামের প্রতি নতমস্তকে শ্রদ্ধা। অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা বর্তমানে রিয়াজুলের পরিবার নিদারুণ অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তার স্ত্রী মরিয়ম ও মেয়ে তুবার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। শহীদ রিয়াজুলের স্মরণে ও পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে প্রস্তাব করা হচ্ছে- ১. মাসিক ১৫,০০০ টাকা মেয়ের লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ বাবদ সহায়তা। ২. স্থায়ী থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা। একনজরে শহীদ মো: রিয়াজুল ইসলাম নাম : মো: রিয়াজুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ০৮-০৯-১৯৮৬ জন্মস্থান : বরগুনা পেশা : ডিজাইনার কর্মরত প্রতিষ্ঠান : এস সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড, প্রিটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: উরবুনিয়া চালিতাতলী, ইউনিয়ন: চালিতাতলী, থানা: সদর, জেলা: বরগুনা পিতা : হাতেম আলী হাওলাদার, (৭০) মায়ে : বিলকিচ বেগম (৭০), পেশা: গৃহিণী স্ত্রী : মরিয়ম (৩৭), পেশা: গৃহিণী, শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি পরিবারের সদস্য : মেয়ে: ১ : ১. মোসা: তাবাসসুম ইসলাম তুবা, বয়স: ১৩, বরগুনা মাধ্যমিক কলেজিয়েট স্কুল : শ্রেণি: ৮ম, সম্পর্ক: মেয়ে ঘটনার স্থান : বাইপাস রোড, আশুলিয়া আক্রমণকারী : পুলিশ আক্রমণের ধরণ : শরীরে গুলিবিদ্ধ আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫/০৮/২৪, সময়: ৩-৪টা, বাইপাস রোড, আশুলিয়া শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : নিজগ্রাম পারিবারিক অবস্থা : দারিদ্রক্লিষ্ট