Image of মো: হাসান

নাম: মো: হাসান

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : দোকান কর্মচারী ও ছাত্র, কাচিয়া সাহামাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শ্রেণি: ৭ম শাহাদাতের স্থান: যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

শহীদের জীবনী

রক্তাক্ত মার্চের কিশোর বীর -শহীদ মো: হাসান শহীদ পরিচিতি মো: হাসান। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি ভোলার কাচিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতা ছিল তাঁর সঙ্গী, কিন্তু চেতনায় ছিল স্বপ্নের আকাশ। পিতা মনির হোসেন ছিলেন একজন দিনমজুর, মা গোলেনুর বেগম একজন গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে হাসান ছিলেন সবার বড়, তাই দায়িত্ব যেন ছায়ার মতো অনুসরণ করত তাঁকে। জন্ম ও বেড়ে ওঠা গ্রামের মাটির ঘ্রাণেই তাঁর শৈশব গড়া। কাচিয়া সাহামাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। ঢাকায় এসেছিলেন জীবিকার টানে, “ইসমাইল ইলেকট্রনিক্স” নামক দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। কর্ম আর শিক্ষা দুইয়ের ভার নিয়েই চলছিল তাঁর জীবন। অর্থনৈতিক বাস্তবতা হাসানের পরিবারটি ভাড়াটিয়া, মাত্র ৫০০০ টাকার ভাড়ার একটি ছোট ঘরে বাস করে। হাসানের আয়েই চলত পুরো পরিবার, যা ছিল মাসে সর্বোচ্চ ১৫,০০০ টাকা। ভাই হাসিব দশম শ্রেণির ছাত্র, বোন জুমাইয়া নবম শ্রেণিতে। আরেক বোন শাহনাজ বিবাহিত। হাসানই ছিলেন পরিবারের একমাত্র সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল বাতি, যে আলোর উৎস দিয়ে পরিবারের দায়িত্ব মাথা পেতে নিয়েছিলেন। জুলাই-আগস্টের গণজাগরণ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বাংলার ইতিহাসে এক আগুনঝরা অধ্যায়। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এক গণঅভ্যুত্থান, যে অভ্যুত্থান দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। হাসান ছিলেন সে আন্দোলনের এক সাহসী অংশীদার। ৫ আগস্ট ২০২৪, যখন স্বৈরশাসনের পতনের পর চারদিকে বিজয়ের ঢেউ উঠেছিল, হাসানও দেরি করেননি। “আমিও যাচ্ছি বিজয়ের মিছিলে” এই বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান যাত্রাবাড়ীর দিকে। আর সেখানেই ঘটে সেই নির্মমতা, যা বাংলার প্রতিটি হৃদয়ে রক্ত ঝরায়। শহীদ হওয়ার ঘটনা মিছিল চলছিল, চারপাশে উচ্ছ্বাস, জয়ধ্বনি, পতাকা উড়ছিল বাতাসে। ঠিক তখনই রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুর রূপ দেখা দেয়। পুলিশ ছোড়ে গুলি। দৃঢ়চেতা কিশোর হাসান গুলিবিদ্ধ হন। মুহূর্তেই রক্তাক্ত হয়ে পড়ে যান রাস্তায়। তারপর দীর্ঘ সময় নিখোঁজ। পরিবার পাগলপ্রায় হয়ে খুঁজে ফেরে তাঁকে। কেটে যায় দিন, মাস। একসময় প্রায় আশা ছেড়েই দেয় পরিবার। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় সেই নিখোঁজ কিশোর শহীদের পরিচয়। ঢাকা মেডিকেল মর্গ থেকে বুঝে পায় তাঁর লাশ। জানাজা শেষে নিজের প্রিয় গ্রাম কাচিয়ার মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হন শহীদ হাসান। পরিবারের বর্তমান অবস্থা শহীদ হাসানের পরিবার আজ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। যিনি রোজগারের মূল ভরসা ছিলেন, তিনিই নেই। স্থায়ী বাসস্থান নেই, কোনো আয়ের পথ নেই। বাবা দিনমজুর, বয়স ৫৫ পেরিয়েছে। ছোট ভাই-বোন এখনো লেখাপড়ায় যুক্ত, কিন্তু অর্থাভাবে তা থমকে গেছে। হাসানের মা আজও ছেলের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি হাসানের ছোট ভাই হাসিব কাঁপা কণ্ঠে বলেন, “ভাইয়া সব সময় বলত, আমি একদিন বড় হবো, আমাদের একটা ভালো ঘর বানাবো। এখন সেই ভাইয়াই নেই!” আর মা গোলেনুর বেগম বলেন, “সেইদিন দুপুরে বলল, মা আমি একটু যাচ্ছি। ও যে আর ফিরবে না, ভাবিনি।” সমাপ্তি নয়, শুরু হাসানের মতো শহীদেরা হারিয়ে যায় না, তাঁরা বেঁচে থাকেন নতুন প্রজন্মের চোখে, হৃদয়ে ও সংগ্রামে। তিনি শহীদ হয়েছেন গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের স্বপ্নে, তাঁর আত্মত্যাগ এ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রস্তাবনা ১. শহীদ হাসানের পিতা বা ভাইয়ের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা গেলে পরিবারটি কিছুটা স্থিতি পেতে পারে। ২. থাকার জন্য একটি স্থায়ী ঘর তৈরি করে দেওয়া প্রয়োজন, যাতে শহীদের স্মৃতি রক্ষিত হয়। ৩. ভাই-বোনদের পড়ালেখার পূর্ণ খরচ বহন করলে শহীদের স্বপ্নকে জীবিত রাখা সম্ভব। একনজরে শহীদ প্রোফাইল নাম : মো: হাসান জন্ম তারিখ : ০১-০১-২০০৬ জন্মস্থান : ভোলা পেশা : দোকান কর্মচারী ও ছাত্র, প্রতিষ্ঠান: কাচিয়া সাহামাদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শ্রেণি: ৭ম কর্মরত প্রতিষ্ঠান : ইসমাইল ইলেক্ট্রনিক্স, গুলিস্তান, কাপ্তান বাজার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: কাচিয়া, ইউনিয়ন: সাহামাদার, থানা: সদর, জেলা: ভোলা পিতার নাম : মনির হোসেন পেশা : দিনমজুর বয়স : ৫৫ বছর মায়ের নাম : গোলেনুর বেগম পেশা : গৃহিণী বয়স : ৪০ বছর মাসিক আয় : ১৫০০০ উৎস : শহীদের পিতার আয় স্ত্রীর নাম : মরিয়ম (৩৭), পেশা: গৃহিণী, শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি পরিবারের সদস্য : ভাই: ১, বোন: ২ : ১. মো: হাসিব, বয়স: ১৬, শ্রেণি: ১০ম, সম্পর্ক: ভাই : ২. মোসা: জুমাইয়া, বয়স: ১৪, শ্রেণি: ৯ম, সম্পর্ক: বোন : ৩. মোসা: শাহনাজ বেগম, বিবাহিতা, সম্পর্ক: বোন ঘটনার স্থান : যাত্রাবাড়ী আক্রমণকারী : পুলিশ আক্রমণের ধরণ : শরীরে গুলিবিদ্ধ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : নিজগ্রাম লাশ হস্তান্তর : আন্দোলন পরবর্তী সময়ে নিখোঁজ থাকার পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ চিহ্নিতকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ফরেনসিক মর্গ থেকে লাশ বুঝে পায় শহীদ পরিবারটি।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: হাসান
Image of মো: হাসান
Image of মো: হাসান
Image of মো: হাসান
Image of মো: হাসান
Image of মো: হাসান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মেহেদী হাসান

মো: সিয়াম

মো: জামাল হোসেন

মো: নবীন তালুকদার

মো: আল আমিন হোসেন আগমন

আবদুল্লাহ আল আবীর

 মোসা: লিজা

আবদুল ওয়াদুদ

মো: মিজানুর রহমান

মো: শিহাব উদ্দিন

মো: মহিউদ্দিন

মো: সরোয়ার হোসেন শাওন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo