Image of মো: রকিবুল ইসলাম

নাম: মো: রকিবুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র শাহাদাতের স্থান : চাঁদখালী বাজারে

শহীদের জীবনী

চাঁদখালীর শান্তপ্রিয় গ্রাম কালীদাসপুরের বাতাস আজও বয়ে আনে এক তরুণের আকুতি। এক প্রত্যয়ী, নিরহংকারী ছাত্র নাম ছিল রকিবুল ইসলাম। খুলনার বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। বাবার একমাত্র সন্তান, মায়ের প্রিয় “রকি” একে একে সবাই তাকে ডেকে উঠত ভালোবাসায়। জন্ম ও শৈশব রকিবুল ইসলামের জন্ম চাঁদখালী, পাইকগাছার এক গাঁয়ের নিভৃত প্রান্তে। কালীদাসপুর গ্রামেই তার শৈশবের দিনগুলো কেটেছে কাঁদা-মাটির গন্ধ মেখে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, বই আর দেশের প্রতি ভালোবাসাই ছিল তার প্রাণের দুই রং। শিক্ষকরা বলতেন, “এই ছেলেটা একদিন সমাজ বদলাবে।” কর্ম জীবন ও সংগ্রাম রকিবুলের পরিবার ছিল একদম স্বল্প আয়ের। তার বাবা রফিকুল ইসলাম এক চোখে অন্ধ। চাঁদখালী বাজারে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান চালিয়ে কোনোরকমে সংসার টেনে নিতেন। শহীদ রকিবুল ইসলাম তার পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে সাহায্য করতেন। কখনো চায়ের কাপ ধুতে, কখনো দোকানে চিনি-মুড়ি এনে দিতে ব্যস্ত থাকতেন। পড়ালেখা ও পারিবারিক দায় এই দুই ভার কাঁধে তুলে নিয়েই তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর ছোট এক বোন আছে, পড়াশোনা করছে স্থানীয় বিদ্যালয়ে। কিন্তু ভাইয়ের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে সেই শিক্ষাজীবনও এখন অনিশ্চয়তার মুখে। অর্থনৈতিক বাস্তবতা রকিবুল ছিলেন পরিবারে একমাত্র ছেলে। সংসারে জমিজমা বলতে কিছুই নেই। বাবার দোকানে তেমন আয় নেই বললেই চলে। অভাব-অনটনের মধ্যেও রকিবুলের একটাই স্বপ্ন ছিল শিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য কিছু করা। অথচ সেই স্বপ্ন এখন স্মৃতির মলিন পাতা। আন্দোলনে যোগদান ও জুলাই-আগস্ট প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুলাই মাস ছিল উত্তাল। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে। নানা অন্যায়ের প্রতিবাদে নতুন প্রজন্ম দাঁড়িয়েছিল বুক টান করে। রকিবুল ছিলেন সেই সাহসী কণ্ঠের একজন, যিনি রাজনীতির জন্য নয়, ন্যায়ের জন্য এক হলেন। ৫ আগস্ট আন্দোলনের বিজয়ের উপলক্ষে চাঁদখালী বাজারে আয়োজিত হয়েছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান। রকিবুলের মনের ভিতরে ছিল এক রকম গর্ব “আমি নিজ হাতে পতাকা তুলব।” এই পতাকা ছিল তার স্বাধীনতার, তার বিশ্বাসের, তার প্রেরণার প্রতীক। যেভাবে তিনি শহীদ হলেন ঘটনার দিন ৫ আগস্ট ২০২৪। চাঁদখালী বাজারে মানুষের ভিড়। সকলে অপেক্ষা করছে পতাকা উত্তোলনের মুহূর্তটির জন্য। রকিবুল উঠে দাঁড়াল মঞ্চে। হাতে পতাকা। সে সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে পড়ে যায় মঞ্চের পাশে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই, রকিবুল পতাকাটি উঠিয়ে ধরতেই সেই ভেজা মঞ্চ এবং ছেঁড়া তারের সংস্পর্শে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে পড়ে যান তিনি। মুহূর্তেই নিথর হয়ে যান নিস্তব্ধ হয়ে যায় চারদিক। সকলের চোখে জল, চারদিকে শুধু আহাজারি। কে জানত, স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠা পতাকাই কেড়ে নেবে এমন একটি প্রাণ? শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থা শহীদ রকিবুল ইসলামকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। কবরের পাশে আজও পড়ে থাকে তার ব্যবহৃত সেই বইখাতা, যার শেষ পাতায় লেখা ছিল "আমার দেশ, আমার পতাকা, আমার বিশ্বাস এটাই আমার জীবন।" শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি তার মা রেবেকা খাতুন আজও ছেলের নামে ডাকেন “রকি, তুই বলেছিলি মাকে একটা ভালো ঘর দিবি, কিন্তু ঘর না দিয়ে তুই নিজেই চলে গেলি চিরঘুমে।” শিক্ষক বলেছিলেন, “রকিবুল পড়াশোনায় যেমন ভালো, মানুষ হিসেবেও ছিল অনন্য। সে ছিল একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক।” রকিবুল ইসলামের শহীদ হওয়া শুধু একটি মৃত্যু নয়, এটি একটি পতাকা হাতে মৃত্যুকে আলিঙ্গনের গল্প। তিনি পতাকার নিচে প্রাণ দিলেন, যেন ভবিষ্যতের প্রজন্ম স্বাধীনতার অর্থ বুঝতে পারে। তার আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায় এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা এই শহীদ পরিবারের জন্য এখনই প্রয়োজন সহায়তার হাত। প্রস্তাবনা-১: শহীদের বাবার ছোট চায়ের দোকানে কিছু মালামাল ও ফার্নিচার সহায়তা দেয়া হলে তারা কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে পাবে। প্রস্তাবনা-২: একটি গরু বা ছাগল কিনে দিলে পরিবারটি দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হবে এবং বোনটির পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারবে। একনজরে শহীদ প্রোফাইল নাম : রকিবুল ইসলাম জন্ম তারিখ :০১/০১/১৯৯৫ জন্মস্থান : চাঁদখালী, পাইকগাছা, খুলনা স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: কালীদাসপুর, ইউনিয়ন: চাঁদখালী , থানা: পাইকগাছা, জেলা: খুলনা শিক্ষা : রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ৪র্থ বর্ষ, খুলনা বিএল কলেজ পেশা : ছাত্র পরিবার : ১ ভাই ১ বোন আর্থিক অবস্থা : অত্যন্ত দুর্বল মৃত্যুর তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ কারণ : বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শহীদ কবরস্থান : পারিবারিক কবরস্থান, কালীদাসপুর, পাইকগাছা, খুলনা

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করবে এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাত। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৫)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির পেটে থাকে।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৭)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo