Image of মো: মহিউদ্দিন

নাম: মো: মহিউদ্দিন

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৬ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: বরিশাল

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : মুদি দোকানের কর্মচারী, শাহাদাতের স্থান : শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

শহীদের জীবনী

’’রক্তাক্ত আগস্টের আর্তনাদ’’ মহিউদ্দিন নামটি যেন এক সাধারন জীবনের অসাধারণ সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। যিনি ছিলেন ভোলার প্রত্যন্ত জনপদ পশ্চিম ইলিশার এক নিভৃত পল্লীর সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ, সেই তিনিই ২০২৪ সালের আগস্টে এই দেশের ইতিহাসে এক লাল অক্ষরে লেখা শহীদের নাম হয়ে ওঠেন। জন্ম ও শৈশব ভোলার সদর থানার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রামে জন্ম হয় মহিউদ্দিনের। বাবা আবুল হাসেম বয়াতি ও মা মল্লিকা খাতুন ছিলেন অভাবী দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। দারিদ্র, সংগ্রাম আর শূন্যতার মাঝেই কেটেছে মহিউদ্দিনের শৈশব। যেখানে শিক্ষা নয়, জীবনের মূল পাঠ ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। শৈশবে পিতা-মাতা দুজনেই না ফেরার দেশে চলে যান। এতিম হয়ে উঠেও মহিউদ্দিন কখনো বিভ্রান্ত হননি। গ্রামের পরম্পরা মূল্যবোধ আর আত্মীয়-প্রতিবেশীদের ভালোবাসায় বড় হয়েছেন এক নীরব, ভদ্র ও আত্মমর্যাদাশীল যুবক হিসেবে। "স্বভাব চরিত্রের দিক দিয়ে অনেক ভালো ছিলেন", একথাই বলেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা। কর্মজীবনের গল্প বড় ভাই আব্দুল মান্নানের আশ্রয়ে ও উৎসাহে জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার মিরপুর এলাকায় একটি নামবিহীন মুদি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ নেন। হালাল উপার্জনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তার জীবনের চালিকাশক্তি। তিনি ছিলেন পরিশ্রমী, সৎ ও নির্ভরযোগ্য একজন নিঃশব্দ সংগ্রামী। কখনো দুঃখ করেননি নিজের অবস্থা নিয়ে, কিন্তু ভাই-বোনদের খোঁজখবর রাখা ও তাদের ভালো-মন্দ জানার চেষ্টা করতেন সবসময়। আত্মত্যাগী এই মানুষটি জীবনে ছোট ছোট স্বপ্ন দেখতেন, কিন্তু তার স্বপ্নের আকাশ যেন থমকে গেল ২০২৪ সালের আগস্টে। পরিবার ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট মহিউদ্দিনের পারিবারিক অবস্থা ছিল টানাপোড়েনময়। ভাই-বোনরা সবাই বিবাহিত এবং নিজ নিজ সংসারে ব্যস্ত। পরিবারে কার্যত তিনি নির্ভর করতেন বড় ভাই আব্দুল মান্নানের উপর। কোনোদিন কারো বোঝা হননি, আবার নিজের দুঃখ-কষ্টও কখনো প্রকাশ করেননি। শহরের জীবনেও গ্রামের গন্ধ ছিল। তার হৃদয় সাদামাটা বিশ্বাসী আর আপনজনদের প্রতি ভালোবাসায় ভরা। আন্দোলন ও জুলাই-আগস্টের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশের রাজনীতিতে এক নতুন জোয়ার ওঠে। সরকারের পতনের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। সেই আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে মিরপুরে। সেদিন ৫ আগস্ট ২০২৪, জনতার ঢল নামে। মহিউদ্দিন সেই মিছিলে শরিক হয়েছিলেন, কোনো পদ বা নেতৃত্বের জন্য নয়তিনি গিয়েছিলেন ন্যায়ের দাবিতে, দেশপ্রেমের তাগিদে। যখন চারপাশে স্লোগানের গর্জন আর বিক্ষোভের আগুন জ্বলছিল, তখনই পুলিশ ছুড়ে দেয় গুলি। গুলিবিদ্ধ হন মহিউদ্দিন। যেভাবে তিনি শহীদ হলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মহিউদ্দিন। দ্রুত তাকে নেয়া হয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়! যেন একবার নয়, দুবার গুলি খান তিনিএকবার পুলিশের হাতে, আরেকবার রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুরতায়। পরবর্তী সময়ে শ্যামলীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু ততক্ষণে সময় ফুরিয়ে এসেছে। ৬ আগস্ট ২০২৪ রক্তে ভেজা সেই দিনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মহিউদ্দিন। দেশের জন্য, মানুষের অধিকারের জন্য জীবন দিলেন, তবু কেউ সেই জীবনের মূল্য বুঝে উঠলো না। কবর ও প্রস্থান তার দেহ ফিরে যায় প্রিয় ভোলায়। গ্রামের স্থানীয় কবরস্থানে শায়িত হন তিনি। সেই মাটিতে এখন শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন শহীদ মহিউদ্দিন। এক নিরীহ যুবক, যিনি ইতিহাসে নিজের নাম লেখালেন রক্ত দিয়ে। শহীদকে নিয়ে নিকটজনদের অনুভূতি "ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেলেও স্বভাব চরিত্রের দিক দিয়ে অনেক ভালো ছিলেন। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। সৎ ও হালাল উপার্জনের লক্ষ্যে ঢাকা গমন করলেও ভাইবোনদের খোঁজখবর রাখতেন।" এই অনুভব থেকেই স্পষ্ট, মহিউদ্দিন কেবল রক্ত নয়, রেখে গেছেন এক গভীর ভালোবাসার স্মৃতি। শহীদ মহিউদ্দিনের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া মানুষেরা সবসময় বড় কোনো পদে থাকা রাজনীতিবিদ হন না; তারা হন আমাদের আশপাশের সাধারণ মানুষ। যাঁদের চোখে থাকে স্বপ্ন, জীবনে থাকে সংগ্রাম আর হৃদয়ে থাকে দেশপ্রেম। মহিউদ্দিন, তোমার আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা একটি শহীদ পরিবার যেন কখনো অভুক্ত না থাকে এই চেতনায় সমাজ ও রাষ্ট্রের উচিত শহীদ মহিউদ্দিনের পরিবারকে স্থায়ী আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। বড় ভাই আব্দুল মান্নান যেন দায়িত্বভার বহন করতে না করতে ভেঙে না পড়েন। একটি শহীদের পরিবারের ভবিষ্যৎ যদি অন্ধকারে ডুবে যায়, তবে শহীদের আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যায়। একনজরে শহীদ প্রোফাইল নাম : মহিউদ্দিন জন্ম তারিখ : ০১/০১/১৯৯৫ জন্মস্থান : পশ্চিম ইলিশা, ভোলা পিতা : মৃত আবুল হাসেম বয়াতি মাতা : মৃত মল্লিকা খাতুন পেশা : মুদি দোকানের কর্মচারী আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ শহীদ হওয়ার তারিখ : ৬ আগস্ট ২০২৪ স্থান : মিরপুর, ঢাকা কার্যকারণ : পুলিশের গুলিতে শহীদ দাফন : স্থানীয় কবরস্থান, ভোলা

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করবে এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাত। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৫)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৮)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo