Image of মো: কামরুজ্জামান

নাম: মো: কামরুজ্জামান

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ময়মনসিংহ

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : প্রাইভেট কার চালক (ঢাকা, উত্তরা) শাহাদাতের স্থান : উত্তরা, ঢাকা (আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে)

শহীদের জীবনী

’’আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন’’ শহীদ কামরুজ্জামান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চর কামারিয়া গ্রামে সৌদি আরব প্রবাসী মো. আব্দুর রাজ্জাকের দ্বিতীয় ছেলে। দাম্পত্য জীবনে কামরুজ্জামান দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। বাবাহারা সন্তানদের এখন একমাত্র সঙ্গী মা সামিরা জাহান পপি। স্বামীকে হারিয়ে তিন শিশু সন্তান নিয়ে বিপাকে এই নারী। শহীদ কামরুজ্জামান ঢাকার উত্তরায় ভাড়া বাসায় থেকে প্রাইভেট কার চালাতেন। তবে জুলাই বিপ্লবের কিছুদিন আগে তিনি পোল্যান্ড যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এরই মাঝে দেশে আন্দোলন শুরু হলে রাজধানীর উত্তরায় ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন। আন্দোলন ও শাহাদতের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। উত্তাল রাজধানী ঢাকার উত্তরায় রাস্তায় নেমেছিল হাজারো প্রতিবাদী মুখ। রাষ্ট্রের অবিচার আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল ছাত্র-জনতা। সেই জনতার ভীড়ে ছিলেন একজন সাহসী তরুণ কামরুজ্জামান। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছিল তার স্বভাবে। বুকভরা স্বপ্ন আর চোখভরা প্রত্যয়ের সঙ্গে তিনি অংশ নিয়েছিলেন সেই আন্দোলনে, যেখানে দাবি ছিল ন্যায়ের, অধিকার ছিল সত্যের। কিন্তু সেদিন উত্তরার রাস্তায় কথা বলেছিল গুলি। সেই গুলির নিশানা হয়েছিল কামরুজ্জামান। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্ধ হয় আটটি গুলি। জনসমুদ্রের মাঝে এক সাহসী কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু এই ঘটনার পরও পাওয়া যায়নি তার খোঁজ। পরবর্তী ১৫ দিন ধরে পরিবার ও স্বজনেরা খুঁজে ফিরেছেন তাকে হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন কোথাও ছিল না কোনো সন্ধান। যেন তাকে গ্রাস করে নিয়েছিল নিস্তব্ধ অন্ধকার। ১৯ আগস্ট ২০২৪, রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে হঠাৎ এক অজানা লাশের খবর পেয়ে ছুটে যান পরিবারের সদস্যরা। পরিচয় মেলে এ সেই কামরুজ্জামান, যার জন্য কাঁদছিল মা, স্ত্রী, সন্তান। জেগে ছিল এক প্রতিবাদমুখর জাতি। গুলির ক্ষতচিহ্ন তখনও সাক্ষ্য দিচ্ছিল তার ওপর চালানো নৃশংসতার। একদিন পর, ২০ আগস্ট ২০২৪ নিজগ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পরিবারের কান্নায়, প্রতিবেশীদের শ্রদ্ধায়, বন্ধুবান্ধবের ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানানো হয় তাকে। তার কবরের মাটিতে মিশে যায় এক সাহসী স্বপ্নবাজ তরুণের রক্তে রাঙানো অধ্যায়। শুধু মৃত্যু নয়, কামরুজ্জামানের জীবন ও শাহাদত হয়ে থাকে এক অনন্ত চেতনার নাম। তিনি হারিয়ে যাননি, বরং রয়ে গেছেন আন্দোলনের প্রতিটি শ্লোগানে, প্রতিটি সাহসী বুকে একজন শহীদ হয়ে। পরিবার ও প্রতিবেশীর অভিমত কামরুজ্জামানের স্ত্রী শারমীন জাহান পপি বলেন, প্রতিদিনই স্বামীর সঙ্গে কথা হতো। গত ৪ আগস্ট ব্যস্ততার কারণে সকালে আমার কথা হয়নি। পরে বেলা ২টার দিকে কল দিলে অপরিচিত এক ব্যক্তি রিসিভ করে জানান, কামরুজ্জামান আহত হয়েছেন। আমার স্বামী কোথায় তা আর তিনি বলতে পারেননি। এরপর থেকে আমার স্বামীর ফোনটাও বন্ধ ছিল। আমরা সরকারি যত মেডিকেল আছে সবগুলোতে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাইনি। এরপর ১৯ আগস্ট ২০২৪ ঢাকার শেরেবাংলা থানার উপপরিদর্শক মুহিবুল্লাহ আমার স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি অবগত করেন। পরে আমরা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে লাশ গ্রহণ করি। দাফনের আগে মাথা ও শরীরজুড়ে আটটি গুলির রক্তাক্ত ক্ষত দেখতে পাই। আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। এখন আমি চাই সরকার আমার সন্তানদের দায়িত্ব নিক। পপির বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ঘটনায় ময়নাতদন্ত করে লাশ দাফন করা হয়েছে। আমরা চাই বাবাহারা এই এতিমদের পাশে দাঁড়াক সরকার। গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরকামারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে পুলিশের এক কর্মকর্তা আমার কাছে ফোন করে কামরুজ্জামানের ছবি পাঠায়। ওই ছবি দেখে চিনতে পেরে কামরুজ্জামানের পরিবারকে জানাই। তারা লাশ শনাক্ত করে বাড়িতে এনে দাফন করে। সন্তানদের অব্যক্ত অনুভূতি জারিন রশ্মির বয়স মাত্র ১১, মেজো ছেলে আফনান আল জামানের বয়স আট বছর ও ছোট্ট গালিব আবরাবের বয়স মাত্র ১৩ মাস। এতটুকু বয়সেই বাবাহারা এই তিন শিশু। রোজ রাতে বাবার সঙ্গে ঘুমানোর বায়না ধরে জারিন ও গালিব। সকালে ঘুম ভাঙলে বাবাকে না পেয়ে রোজই মন খারাপ করে থাকে এই এতিম ভাইবোন। তাদের এই কাকুতি-মিনতি পরিবারের অন্যদেরও শোককে জাগিয়ে তোলে। অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা শহীদ মো: কামরুজ্জামানের আত্মত্যাগ দেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তার অনাকাঙ্ক্ষিত শাহাদাতের ফলে স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান অর্থনৈতিকভাবে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি নিম্নোক্ত মানবিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার প্রস্তাবনা রাখা হলো: ১. শহীদ পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা প্রদান: শহীদ পরিবারকে মাসিক ন্যূনতম ১৫,০০০ টাকা জীবিকা সহায়তা ভাতা প্রদানের দাবি জানানো হচ্ছে। ভাতার অন্তর্ভুক্ত থাকুক খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসন বাবদ সহায়তা। ২. সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে: শহীদ কামরুজ্জামানের তিন সন্তান (জারিন - ১১, আফনান - ৮, গালিব - ১৩ মাস) যেন বিনামূল্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও বৃত্তির আওতাভুক্ত হয়। উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাব্যয় সরকার বহন করবে এমন একটি স্থায়ী ট্রাস্ট ফান্ড গঠন প্রস্তাব করা হচ্ছে। ৩. স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা: শহীদ পরিবারের নামে নিজ এলাকায় একটি ঘর নির্মাণ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ৪. স্ত্রীর কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া। ৫. আইনি সহায়তা ও তদন্ত দাবি: কামরুজ্জামানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে একটি বিচারিক কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা রাখা হলো। নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের লিঙ্ক ১. https://bdtoday.net/national/35110 ২. https://www.dailyjanakantha.com/bangladesh/news/730603 এক নজরে শহীদ মো: কামরুজ্জামান নাম : মো: কামরুজ্জামান জন্মস্থান : চর কামারিয়া গ্রাম, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ পেশা : প্রাইভেট কার চালক (ঢাকা, উত্তরা) পারিবারিক অবস্থা : স্ত্রী ও তিন সন্তানের জনক শহীদ হওয়ার তারিখ : ৪ আগস্ট ২০২৪ স্থান : উত্তরা, ঢাকা (আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে) দাফন : ২০ আগস্ট ২০২৪, নিজ গ্রামের কবরস্থানে শহীদ হওয়ার প্রেক্ষাপট : ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব চলাকালে ছাত্র-জনতার ন্যায়ের আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১৫ দিন নিখোঁজ; পরে লাশ শনাক্ত ও দাফন উল্লেখযোগ্য তথ্য : পোল্যান্ডে যাওয়ার জন্য আবেদন করলেও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: কামরুজ্জামান
Image of মো: কামরুজ্জামান
Image of মো: কামরুজ্জামান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

সাফওয়ান আখতার সদ্য

সাব্বির ইসলাম

 মোহাম্মদ কবির হোসাইন

আব্দুল্লাহ আল মাহিন

আ: আজিজ

ফজলুল করিম (ফজল মিয়া)

 মোঃ রফিকুল ইসলাম

মো: সোহাগ মিয়া

মো: রিদওয়ান হোসেন (সাগর)

কুদ্দুস মিয়া

 মো: রাব্বী মিয়া

মো: রাহুল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo