Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ

নাম: মাওলানা খুবাইব আহমাদ

জন্ম তারিখ: ৫ মার্চ, ১৯৯৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র ও খণ্ডকালীন শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান : জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহীমিয়া ইসহাকিয়া কাজলার পাড় যাত্রাবাড়ী মাদরাসা শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নীচে

শহীদের জীবনী

"আমি চলে যাবো তাতে আমার আফসোস নেই, আফসোস এই যে দুনিয়া ছেড়ে আল্লাহর কাছে যাওয়ার মতো যথেষ্ট আমল আমার নেই" জন্ম-কর্ম ও বংশ পরিচয় চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার উজানি গ্রামে ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন খুবাইব আহমাদ। তিনি ছিলেন এক নিভৃতচারী মুহাক্কীক আলেমে দ্বীন। অত্যন্ত মেধাবী এই শিক্ষার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় চাঁদপুরের দ্বীনি শিক্ষার বাতিঘর জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসা থেকে। পরবর্তীতে জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহীমিয়া ইসহাকিয়া কাজলার পাড় যাত্রাবাড়ী মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ শিক্ষা (ফারেগ) অর্জন করেন। সর্বশেষ দাওরা শেষ করে ইফতা জামাতে থাকাকালীন তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এছাড়াও দ্বীনের দ্বায়ী হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি বয়ান, ওয়াজ-নসিহত ও লেখালেখি করে গিয়েছেন। অল্প বয়সে তিনি হয়ে উঠেছিলেন ঈমান আক্বীদ্বা রক্ষা ও ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার এক অগ্রসৈনিক। তার বাবা আল্লামা আব্দুর রহমান সাহেব দেশের একজন বিখ্যাত আলেম। তিনি চাঁদপুর জেলার উজানী মাদ্রাসাখ্যাত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা সচিব এবং দেশ ও বিদেশের হাজারো আলেম গড়ার কারিগর। সহোদরদের পরিচয় মরহুমের চার ভাই যাত্রাবাড়ীই বসবাস করেন এবং ছয় বোনের সকলে বিবাহিতা। বড় ভাই হাফেজ মাসুদ একজন ব্যবসায়ী। রাজধানীর নিউমার্কেটে গার্মেন্টসের দোকান রয়েছে। মেজ ভাই মাওলানা মাহমুদ, সেজ ভাই হাফেজ জুবায়ের এবং সর্বশেষ মাওলানা সোহাইল। সকলেই কওমি মাদরাসার শিক্ষকতা পেশার সাথে সম্পৃক্ত। দিন বদলের ডাক এসেছে, বাতাসে লাগাও কান বাঙালী আজ উঠবে জেগে, বাজে শিকল ভাঙ্গার গান। দিন বদলের ডাক হঠাৎ দেশে দিন বদলের ডাক আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটা আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন। সারাদেশের জনতা এক হয়ে দিন বদলের ডাকে অংশগ্রহণ করেন। একপর্যায়ে অসহযোগ থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় কোটা বিরোধী আন্দোলন। সংগঠনটির পরিচয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তৈরি একটি সংগঠন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে এটি গঠিত হয় এবং এই প্লাটফর্মটি সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করত বাধ্য হয়। ২০২৪ সালের ১ জুলাই এই প্লাটফর্মের সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টির পরপরই আন্দোলন সফল করার জন্য ৮ জুলাই সংগঠনটি ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে, যার মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন। আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পর ৩ আগস্টে সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক দল গঠন করে, যার মধ্যে ৪৯ জন সমন্বয়ক ও ১০৯ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন। আন্দোলন ঘিরে কর্মসূচী ঘোষণা বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চার দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি দেয়। ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ‘মুমিনের জীবনপথের শুরুটা হয় বিপদ আর পরীক্ষা দিয়ে। এরপর আসে সবর ও তাওয়াক্কুলের সময়।’ শহীদের একাত্মতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন মাওলানা খুবাইব আহমাদ। প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিতেন। আন্দোলন ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে উঠলেও দমে যাননি স্বৈরাচার বিরোধী অকুতোভয় এ বীর সেনানী। বরং অন্য সহযোদ্ধাদের মত আরও বেশি সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নিজেকে শামিল করেছিলেন তিনি। ’’ মুমিনের শেষটা হয় আলোকিত, হেদায়াতের, বিজয়ের ’’ বিজয় ও শাহাদাত ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে পুলিশ যেন রক্তখেকো হয়ে উঠে। একযোগে গণহত্যা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও ঘাতক পুলিশ বাহিনী। ঘটনাস্থলে মহাবীর মাওলানা খুবাইব উপস্থিত ছিলেন। আল্লাহু আঁকবার ধনীতে মুখরিত করে রেখেছিলেন চারিদিক। হঠাৎ তিনি পুলিশের রোষানলে পড়েন। কয়েকজন পুলিশ তাকে ঘিরে ফেলে। হামলার শিকার হন তিনি। পুলিশ তাকে উদ্দেশ্য করে দৌড় দিতে বলে। শাসিয়ে বলে “কথা বললে জামাত শিবিরের মামলা দিয়ে দেব। তারপরও চোখে-চোখ রেখে কথা বলেছিলেন তিনি। একপর্যায়ে কয়েকজন দুর্বৃত্ত পুলিশ তাকে আক্রমণ করতে আসে। আক্রমণ থেকে বাঁচতে কাজলা ফ্লাইওভারের নীচ দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিছুদূর দৌড়াতেই পিছন থেকে ঘাতক পুলিশ তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বীর সেনানী খুবাইব আহমাদ। ঘটনাস্থলেই তিনি শাহাদত বরণ করেন। কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন-“মুমিনের জীবনপথের শুরুটা হয় বিপদ আর পরীক্ষা দিয়ে। এরপর আসে সবর ও তাওয়াক্কুলের সময়। কিন্তু মুমিনের শেষটা হয় আলোকিত, হেদায়াতের, বিজয়ের।” বিশেষ মর্যাদা শহীদের লাশ অজ্ঞাত নামে খুঁজে পায় তার পরিবার। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে নিভৃতচারী মুহাক্কীক আলেমে দ্বীনের শাহাদতের খবর। সর্বপ্রথম জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহীমিয়া ইসহাকিয়া কাজলার পাড় যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় শহীদের লাশ নেয়া হয়। প্রিয় রাহাবারকে এক নজর দেখতে ভিড় জমায় ত্বলবে এলেমরা। সেখানেই শহীদের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। অতঃপর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় চাঁদপুরের উজানি গ্রামে। প্রিয় সন্তানের নিজ মাদরাসা প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন করেন আল্লামা আব্দুর রহমান সাহেব। পরবর্তীতে শহীদ মাওলানা খুবাইব আহমাদের লাশ চাঁদপুরের পৈতৃক বাড়ির আঙ্গিণয় দাফন করা হয়। শেষকথা শহীদ হওয়ার দিন সকালে তিনি তার আম্মাকে বলেছিলেন, “আম্মা আমার নাম খোবাইব না? খোবাইব রাযি. তো শহীদ হয়েছিলেন। আমিও একদিন শহীদ হবো ইন-শা-আল্লাহ।” মহান আল্লাহ তার কথা কবুল করে নিয়েছেন। স্মৃতি বিবরণ মাওলানা নাফিস আহমাদ (সহপাঠী) বলেন- “একই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছি। ছেলেটা সবসময় হাসি-খুশি থাকত। তার মুখে হাসি কখনো শেষ হত না। কেউ তাকে আঘাত করলেও হাসত। আজ সেই হাসিমাখা চেহারাটা আমাদের মাঝে আর নেই! খোবাইব, তোমার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেন তোমাকে জান্নাতের সবুজ পাখি হিসেবে কবুল করে নেন। আমীন!” মাওলানা সোহাইল আহমাদ (সহোদর) বলেন- “তার সাথে যে সাক্ষাৎ করেছে, দেখা করেছে, তাকেই সে আনন্দিত করেছে, আশ্চর্য করেছে।” মাওলানা নাঈম হাসান বলেন- “হে আল্লাহ! মনটাকে কিভাবে মানাই, এমন একটা তরতাজা প্রাণ, কিভাবে উড়ে গেল। হে আল্লাহ শহীদ খুবাইবকে আপনি শাহাদতের উচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর কথা মনে পড়লে ভিতরটা নাড়া দিয়ে ওঠে।” শহীদ মাওলানা মো: খুবাইব আহমাদ এর লেখা কবিতা যখন তখন মৃত্যু এসে যদি আপনার সাজানো স্বপ্নে হানা দেয় তবে এই ধোঁকার রাজ্যের মিছে স্বপ্নে নিজেকে ব্যস্ত রেখে কি লাভ? কি লাভ এতো মায়া বাড়ানোর! কিংবা ভালোবাসার এক পৃথিবী গল্প বুনার। যদি চলেই যেতে হয় তবে ক্ষণস্থায়ী এই কষ্টের জন্য কেন এত আহাজারি ! কেন অপ্রাপ্তি আর হতাশার দীর্ঘশ্বাসের ভীড়? কেন চোখের লোনা সমুদ্রে অপ্রাপ্তির ঢেউ? বলুন না! কেন এসব? বারবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, দেখুন আপনার ভিতর কি বলে। যদি ভিতর বলে এগুলো মিছে, তবে আপনার হতাশা গুলোর মৃত্যু হোক। আখেরাতের জন্য চোখের অশ্রু গুলো মুছে আবার আপনি জেগে উঠুন। আপনি কি এতে খুশি না? যে তাদের জন্য দুনিয়া আর আমাদের জন্য আখিরাত? একনজরে শহীদ খুবাইব আহমাদ নাম : মাওলানা খুবাইব আহমাদ জন্ম তারিখ : ০৫/০৩/১৯৯৯, বয়স : ২৫ পিতার নাম : মাওলানা আব্দুর রহমান মাতার নাম : আবিদা সুলতানা পেশা : ছাত্র ও খণ্ডকালীন শিক্ষক মাদ্রাসার নাম : জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহীমিয়া ইসহাকিয়া কাজলার পাড় যাত্রাবাড়ী মাদরাসা প্রাথমিক শিক্ষা : জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসা, চাঁদপুর শ্রেণি : ইফতা (মাস্টার্স) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: উজানি, ইউনিয়ন: উজানি, উপজেলা: কচুয়া জেলা: চাঁদপুর মৃত্যুর তারিখ : ০৫/০৮/২০২৪ কিভাবে মারা যায় : পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে কাজলা, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নীচে মারা যায় কবরস্থান : উজানি পারিবারিক কবরস্থান (মাদরাসা প্রাঙ্গণ), উজানি, কচুয়া, যাত্রাবাড়ী

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ
Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ
Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ
Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ
Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ
Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ
Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ
Image of মাওলানা খুবাইব আহমাদ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ইব্রাহিম খলিল

সাজিদ হাওলাদার

মো: মোসলেহ উদ্দিন

 হান্নান

মো: জাহিদ-এ-রহিম

মো: আমির হোসেন

মো: ইয়ামিন চৌধুরী

মো: সোহাগ

মাহামুদুর রহমান সৈকত

অজ্ঞাত

হাসিব আহসান

নাসিব হাসান রিয়ান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo