জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: রড মিস্ত্রি , শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী
অতি দরিদ্র পরিবারের সংগ্রামী এক যুবক মো: রিয়াজ। তিনি ১৯৯৮ সালের ০১ জানুয়ারি ভোলা জেলার অন্তর্গত দৌলতখান থানার চর খলিফা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ রিয়াজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি পেটের দায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন। তবে তিনি অধিকাংশ সময়ই রড মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। শহীদের পিতার নাম আব্দুল রহমান। তার মায়ের নাম মনি বেগম। বাবা প্রতিবন্ধী হওয়ায় জীবিকার তাগিতে অল্প বয়সেই তাকে ঢাকায় আসতে হয়। তিনি ঢাকা মাতুয়াইলের মদিনার চত্বর এলাকায় বসবাস করতেন মাতুয়াইল জিরো পয়েন্টে মাত্র একটি রুম ভাড়া নিয়ে তিনি থাকতেন। শহীদ রিয়াজ ২০১৫ সালে ফারজানা আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি দুই সন্তানের জনক। শহীদ মোহাম্মদ রিয়াজ ছিলেন হাসিখুশি স্বভাবের প্রিয় মানুষ। তিনি সবার সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক করতেন। কারো সাথে তার বৈরী সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও তিনি ছিলেন মানবিক এবং ন্যায়বান। অন্যের দুঃখে তিনি সর্বদা এগিয়ে যেতেন। যেভাবে শহীদ হলেন রিয়াজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালন করেন ১৫ তারিখ পর্যন্ত। অবৈধ হাসিনা সরকার সাধারণ ছাত্র জনতাকে রাজাকার বলে অপবাদ দেয়। যার প্রতিবাদে সারা দেশব্যাপী ছাত্ররা বিক্ষোভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই মাসের ১৬ তারিখে আন্দোলনের ব্যাপকতা লাভ করে। সেখানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী জঙ্গি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করে। অনেক নারী শিক্ষার্থীকেও নির্মমভাবে আঘাত করা হয়। এরপরে পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক আওয়ামী সরকার সারাদেশে ক্র্যাকডাউন চালায়। শিক্ষার্থীদেরকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলা দেন। এরপরেও ১৮ তারিখ থেকে আওয়ামী দালাল প্রশাসন বাহিনী ছাত্র জনতার ওপরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে। এরপর আন্দোলন ক্রমান্বয়েই ছড়িয়ে যায় প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। অসংখ্য ছাত্রকে ইতোমধ্যেই হত্যা করা হয়। চার তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব সমন্বয়করা মার্চ ফর ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন শহীদ রিয়াজ। তিনি দুপুর একটার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে পরেন। তার সাথে ছিল তার চাচাতো ভাই। যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছালে সেখানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পেটুয়া পুলিশ বাহিনী লংমার্চ ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি ছুটতে থাকে। সবার সাথে শহীদ রিয়াজ ও প্রতিরোধ করার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যান। পুলিশ তার দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিটি সরাসরি তার মাথায় বিদ্ধ হয়। পুলিশ সেখানে সুবিধা জনক স্থান থেকে থেমে থেমে গুলি চালান। এজন্য তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে পুলিশ সেখান থেকে সরে যান। শহীদ রিয়াজের চাচাতো ভাইয়েরা তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তারা যাত্রাবাড়ী থানার ৩ নং গেটের সামনে শহীদ রিয়াজের নিথর দেহ খুঁজে পান। অতঃপর তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার জানান তিনি অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। শহীদ সম্পর্কে নিকট আত্মীয়দের বক্তব্য ব্যক্তি হিসেবে রিয়াজ খুবই সহজ সরল ছিল। খারাপ কোন অভ্যাস ছিল না। আমার মায়ের সাথে কখনো দুর্ব্যবহার করেনি। নিজের ছেলের মত জানতাম। সুন্দরভাবে আমার মেয়ের সংসার চলছিল। যেকোন প্রয়োজনে রিয়াজকে যখনই ডাকতাম তখন আমার বাসায় চলে আসতো। আমি আমার একটা ছেলেকে হারিয়েছি। (শহীদের শশুর) শহীদ পরিবারের বর্তমান অবস্থা শহীদ মোহাম্মদ রিয়াজ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। শহীদ মোহাম্মদ রিয়াজের বাবা, মা, স্ত্রী এবং দুটি সন্তান রয়েছে। শহীদ রিয়াজের পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে বর্তমানে তার স্ত্রী (২৬) ফারজানা দুটি সন্তান নিয়ে বাবার বাসায় বসবাস করছে। স্ত্রীর উপার্জনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। ছেলে সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: রিয়াজ জন্ম : ০১ জানুয়ারি, ১৯৯৮ পিতার নাম, বয়স : জনাব আব্দুর রব, ৪৫ বছর মায়ের নাম, পেশা : মনি বেগম, গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : ৫ জন ছেলে মেয়ে : ২ জন : ১.বড় মেয়ে: বিবি ফাতেমা, বয়স: ৭ : ২. ছোট মেয়ে: বিবি ফারিয়া, বয়স: ৫ ভাই-বোন : তিন ভাই : ১. বড় ভাই: শহীদ মো: রিয়াজ : ২. মেঝ ভাই: মো: আরিফ, বয়স: ১৬, পেশা: কর্মচারী, প্রতিষ্ঠান: বেকারী : ৩. ছোট ভাই: মো: সজিব, বয়স: ১২ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মিঠু হাং বাড়ি, ইউনিয়ন: চর খলিফা, থানা: দৌলতখান, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : মহল্লা: ৮৭/ ৩৭, এলাকা: মদিনা চত্বর মাতুয়াইল, থানা: ডেমরা, জেলা: ঢাকা ঘটনার স্থান : যাত্রাবাড়ী আঘাতকারী : স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪ সকাল ১০.৩০ মিনিট নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪ সকাল ১১ টা শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : পারিবারিক কবরস্থান, ভোলা প্রস্তাবনা: ১. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. সন্তানের লেখাপড়ার দায়দায়িত্ব বহন করা যেতে পারে