জন্ম তারিখ: ২২ জানুয়ারি, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ১০
শহীদ মো: সাকিল, তাঁর জন্ম হয়েছিল ২২ জানুয়ারি, ২০০২ সালে ভোলা জেলার চন্দ্রপ্রসাদ উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের সর্দারবাড়ী নামক গ্রামে। বাবা ছিলেন কৃষক এবং মা ছিলেন গৃহিণী। অল্প বয়সেই বাবা হারা হন সাকিল, বর্তমানে মায়ের বয়স ৭০ বছর। চার ভাইবোনসহ (দুই ভাই এবং দুইবোন) পাঁচ সদস্যের পরিবারে আর্থিক দুরবস্থা তাদের ছিল চিরকালের সঙ্গী। কিন্তু সাকিলের মনের মধ্যে ছিল এক অদম্য ইচ্ছা—সমাজের জন্য কিছু করা। তাই ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী হন তিনি। সাকিলের শৈশব থেকে তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সঙ্কট ছিল অব্যাহত। পরিবারের আর্থিক সঙ্কটের কারণে মাত্র ১১ বছর বয়সে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। ঢাকার পল্লবী উপজেলার মিরপুর ১২ তে তিনি ছোট একটি বাসায় উঠলেন, যেখানে মাসিক ভাড়া ছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা। গ্রামে টিনের একটা কুটির থাকলেও সেখানে বসবাস করার জন্য আয় রোজগারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বয়সেই তাকে ঢাকায় পাড়ি জমাতে হয় মা এবং ভাইকে নিয়ে। জীবিকার জন্য টিউশনি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল কাজও তাকে করতে হয়েছিল। তার ছোট ভাইও ঢাকা শহরে একটি কারখানায় কাজ করত। তাদের দুজনের আয়ে কোনোরকমে সংসার চলত। এমন অবস্থায়ও সাকিল পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েননি। ঢাকার ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভে (ইউডা) ভর্তি হন। শিক্ষা ছিল তাঁর কাছে স্বপ্নের পথে প্রথম পদক্ষেপ। সে সময়ে ছাত্ররাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের একজন নিবেদিতপ্রাণ সদস্য হয়ে ওঠেন এবং আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেন। কিন্তু জীবনে তার অনেক কিছুই অপুর্ণ থেকে গেল সন্ত্রাসী সরকারের গুন্ডা বাহিনী ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ছোড়া বুলেটের আঘাতে। ৪ আগস্ট, ২০২৪ একটি ঘটনাই সাকিলের জীবনের সবকিছু বদলে দেয়। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে যখন ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে তখন সাধারণ ছাত্রজনতা দিশেহারা হয়ে পরে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানো হয়। এর মধ্যে একটা বুলেট ফুটো করে দেয় বীর সাকিলের বুক। রক্তে রঞ্জিত হয় তার শরীর। চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে, কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিল না। হাসপাতালে কোনো ডাক্তার ছিল না। এদিকে অসুস্থতায় কাতরাতে থাকে সাকিল। এমতাবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হয় কিন্তু সেখানেও ভাগ্য সহায় হয়নি সাকিলের। পরবর্তীতে তাকে নেয়া হয় কুর্মিটোলা নিউরো সাইন্স হাসপাতালে। অবশেষে ৭ আগস্ট, বিকাল ৩টায় তিনি তার জীবনকে বিদায় জানান। সাকিলের মৃত্যু সবার হৃদয়ে শোকের ছায়া ফেলেছিল। তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে শিক্ষক ও সহপাঠীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এরপর শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন স্থানে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে, ৮ আগস্ট ভেলুমিয়ায় তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। সাকিলের জীবন ছিল সংগ্রামের, কিন্তু তিনি ছিলেন একটি স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য লড়াই করা এক তরুণ। তাঁর অবদান এবং সংগ্রাম আজও আমাদের প্রেরণা যোগায়। একনজরে ব্যক্তিগত প্রোফাইল পুরো নাম : মো: সাকিল পিতার নাম : সিদ্দিক মাতার নাম : বিবি আয়েশা (৭০) পেশা : ছাত্র, প্রতিষ্ঠান : ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, অনার্স ২য় বর্ষ পরিবারের সদস্য : ৫ জন, (১) বড় দুই বোন বিবাহিত, ছোট ভাই পঞ্জাবি কারখানার সাধারণ শ্রমিক পরিবারের মাসিক আয় : ১০,০০০ টাকা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম-সর্দারবাড়ী, ইউনিয়ন ভেলুমিয়া, উপজেলা-চন্দ্রপ্রসাদ জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : বাসা-২/এ, লেন-১/বি, ব্লক ডি মিরপুর ১২, থানা পল্লবী, জেলা ঢাকা আঘাতকারী : সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ, যুবলীগের গুলিতে মৃত্যু তারিখ : ৭ আগস্ট নিউরো সাইন্স হাসপাতালে বিকাল ৩ টায় করব : ভোলার ভেলুমিয়ায় কবরস্থ করা হয়